Image description

Sabina Ahmed (সাবিনা আহমেদ) 

বাংলাদেশের বর্তমান ডিফেন্স বাজেট জিডিপির ০.৯% বা $৪.৪ বিলিয়ন। যেখানে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান সবার ডিফেন্স বাজেট তাদের জিডিপির ১.৩-১.৯%।
ধীরে ধীরে আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমাদের ডিফেন্স বাজেট বাড়িয়ে ২.৫% অফ জিডিপি করতে হবে, তাহলে আমরা নিজেদের প্রতিরক্ষায় একটা সক্ষম রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারব। নিজেদের দারিদ্রতার দোহাই দেখিয়ে প্রতিরক্ষা খাতে নিজেদের দুর্বল রাখা সুইসাইডাল।
 
আপনার ট্যাক্স দেন, নিজেদের উৎপাদন বাড়ন, এক্সপোর্ট বাড়ন, দেশের টাকার চুরি চামারি, আর মানি লন্ডারিং বন্ধ করেন, ব্যাঙ্ক থেকে লোন নিলে সেগুলো পরিশোধ করেন, দেখবেন অনেক টাকা এসে যাবে।
 
আমাদের প্রতিরক্ষা বাজেট অন্যদের চাইতে বেশি এই কারণে লাগবে, বাকিরা অলরেডি তাদের প্রতিরক্ষা অধিনীকরণে অনেকদূর এগিয়ে গেছে, তাদের ধরতে হলে আমাদের প্রচুর ইনভেস্ট আর কেনাকাটা করতে হবে।
 
একটা উদাহরণ দেই: বাংলাদেশ এয়ারফোর্সের (বিএএফ) বর্তমান ফাইটিং ক্যাপাবিলিটি
এই মুহূর্তে বিএএফ-এর মোট বিমান প্রায় ২১২ টি, কিন্তু যুদ্ধবিমান আছে মাত্র ৪৪-৫০ টি। যেখানে ভারতের আছে ৫১২ টি আর মায়ানমারের ৫৫ টি। এগুলো পুরনো এবং দুর্বল:
- চীনা এফ-৭বিজিআই: ৩৫-৩৬ টি (মিগ-২১-এর মতো, ১৯৮০-এর দশকের ডিজাইন)। এগুলো শুধু সাধারণ আক্রমণ করতে পারে, কিন্তু আধুনিক রাডার বা মিসাইলের সামনে টিকতে পারে না।
- রাশিয়ান মিগ-২৯: ৮ টি। ভালো এয়ার-টু-এয়ার লড়াইয়ের জন্য, কিন্তু রাশিয়ার স্যাঙ্কশনের কারণে যন্ত্রাংশ পাওয়া কঠিন।
- ট্রেনার: ১৬ টি ইয়াক-১৩০ (ভালো, কিন্তু লড়াইয়ের জন্য নয়)।
 
- কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল (C২) , রাডার এবং সংযোগ: একটা সমন্বিত এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম (আইএডিএস) এখন আছে—এফএম-৯০ মিসাইল, র্যাট-৩১ডিএল লং-রেঞ্জ রাডার, ৬ টি ক্রোনোস ল্যান্ড এএসএ রাডার (ইতালির লিওনার্দো থেকে)। এগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে ছড়ানো। কিন্তু সবকিছু পুরোপুরি সংযুক্ত নয়—ডেটা লিঙ্ক (যেমন লিঙ্ক-১৬) নেই, তাই বিমান-রাডার-কমান্ডের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ হয় না। ফলে, হুমকি (যেমন মিয়ানমার বা ভারতের সীমান্ত) সামলানো অত্যন্ত কঠিন।
 
অর্থাৎ, আমাদের বিমান বাহিনীর বর্তমান সক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল—পুরনো যেসব বিমান আছে তা ২০৩০-এর আগে অকেজো হয়ে যাবে। আধুনিক হুমকির সামনে (যেমন স্টেলথ মিসাইল) আমাদের এসব বিমান টিকতে পারবে না। মিয়ানমারের সামনে দাঁড়ানোর ক্যাপাবিলিটি পর্যন্ত নাই।
 
তাই আই ওয়েলকাম বিএএফ এর আধুনিক ফাইটার জেট, ড্রোন, রাডার, কম্যান্ড এন্ড কন্ট্রোল ইত্যাদি ক্রয়ের সকল পরিকল্পনা।
এই মুহূর্তে বিএএফ-এর রোডম্যাপে আছে ১০-১২ টি টাইফুন (লিওনার্দোর সাথে ডিসেম্বর ২০২৫-এ এলওআই সই হয়েছে), ১২-২০ টি জে-১০সি (বেইজিং-এ অক্টোবর ২০২৫-এ উচ্চপদস্থ আলোচনা), এবং লো-এন্ডের জেএফ-১৭— ১০ বছরে মোট খরচ ~৪-৫ বিলিয়ন।
 
এই ‘ইকোসিস্টেম-অ্যাগনস্টিক’ পদ্ধতি বৈচিত্র্যের উপর জোর দেয়, কিন্তু এসব ফাইটার, রাডার ডাটালিংক দিয়ে সমন্বয়তা (ইন্টারঅপারেবিলিটি) গুরুত্বপূর্ণ যাতে করে যেন আলাদা সাইলো (সমস্যা) তৈরি না হয়।
 
বাংলাদেশ Air Force (BAF) has several existing systems and procurements that must be brought under a single, networked C2 umbrella—specifically, its Integrated Air Defence System (IADS)—to maximize effectiveness.
 
এটা অপশনাল নয়, বরং মডার্ন ওয়ারফেয়ারে প্রতিটি এসেট যদি আলাদা আলাদাভাবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে তা এসেটগোলোকে দুর্বল করে ফেলে। যেখানে ডাটালিংকের মাধ্যমে ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম একট “কিল ওয়েব” তৈরি করে যা শত্রু সিস্টেমকে দ্রুত সনাক্ত করে, ট্র্যাকিং করে, উপযুক্ত রেসপন্স তৈরি করতে সক্ষম হয়। কিন্তু বর্তমানের সাইলো প্রবলেম (চাইনিজ বনাম ওয়েস্টার্ন সিস্টেম, যাদের ডাটা লিঙ্ক সম্পূর্ণ ভিন্ন) ইনফেশিয়েন্সির রিস্ক তৈরি করছে।
 
সব কথার শেষ কথা, ওয়েস্টার্ন -ইস্টার্ন যাই কেনা হবে সবগুলোকে একটা C২ (কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল) সিস্টেমের অধীনে নিয়ে আসতে হবে।
আরেকটু বুঝিয়ে বলি - রাডার, SAM, AEW&C সিস্টেমের বিভিন্ন সেন্সর raw ডাটা জেনারেট করে। C২ এই সব ডাটা নিয়ে একটা common operational picture (COP) তৈরি করে তার সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন এসেটের সাথে তা শেয়ার করে। এই COP ছাড়া একটা আইসোলেটেড রাডার যখন মিয়ানমারের একটা ড্রোন কে সনাক্ত করে তা টাইফুন বা J১০-সি কে রিয়েল টাইম বলতে পারে না সে কি দেখেছে, আরেক সিস্টেম যখন তা ফাইটার পাইলট দের জানাবে ততক্ষণ যে সামান্য দেরি হবে তা মানুষের জান কিংবা দেশের নিরাপত্তার হুমকি হিসাবে আবির্ভাব হবে।
ডাটালিংকের সাহায্যে সংযুক্ত সিস্টেম গ্রাউন্ড SAM এর সাথে হাই এলটিটিউডে থাকা ফাইটার জেটের মধ্যে যে অটোমেটিক তথ্যের আদান প্রদান করে তাতে হিউম্যান এররের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়, যা একগাদা ড্রোন একসাথে উড়ে আসলে তা অটোমেটিক সনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে মানুষ বুঝার আগেই ব্যবস্থা নিয়ে ফেলে। হামলার ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমিয়ে ফেলে।
এসব নিয়ে দীর্ঘ প্ল্যান আর পরিকল্পনা, কিংবা কিভাবে স্টেপ বাই স্টেপ আগাতে হবে, খরচ কমাতে পারে তেমন কি কি স্টেপ নিতে হবে তা নিয়ে দীর্ঘ রিপোর্ট লেখা যায়। কিন্তু তার অডিয়েন্স আপামর জনসাধারণ নয়। তাই এই পোস্ট আর আগালাম না।
টাইফুন থেকে J১০-সি, JF-১৭ উই নিড অল, আমাদের আধুনিক ড্রোন চাই, মিডিয়াম টু লং রেইঞ্জ মিসাইল চাই, রাডার সিস্টেম চাই। চাই আলাদা আলাদা ভাবে ইতালির সাথে মহড়া, ট্রেনিং, চিনের সাথেই মহড়া আর ট্রেনিং। চাই আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে তাদের ইঞ্জিনিয়ারদের সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের পরিকল্পনা। কিন্তু এই সবগুলো সিস্টেমকে ডাটা লিঙ্ক আর ব্রিজের সাহায্যে একই কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সিস্টেমের অধীনে না আনলে এসবের ব্যবহারে যে সক্ষমতা তার পরিপূর্ণ ব্যবহার হবে না কিছুতেই । আসল সায়েন্স ওই জয়েন্ট সিস্টেমে, ওই ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেমে। সেখানেই আক্রমণে পরিপূর্ণ ডিফেন্সিভ ক্ষমতা লুকিয়ে আছে।
আমার মনে হয় বাংলাদেশিরা বাহিনী ঠিক পথেই আগাচ্ছে।