ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্লাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ভর্তি থাকা শরিফ ওসমান বিন হাদিকে দেখতে আসেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, হাদিকে লক্ষ্য করে হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।এর পেছনে বড় ধরনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তিনি জানান, জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট নিয়ে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং ফ্যাসিবাদীদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাত থেকেই তারা মাঠে থাকবেন।
ঢাকা মেডিকেলের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপের সময় নাহিদ ইসলাম বলেন, আজকে খুবই কষ্ট নিয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে। আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা, তরুণ নেতা শরিফ ওসমান হাদি যিনি ঢাকা-৮ থেকে স্বতন্ত্র এমপি পদপ্রার্থী তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন। আমরা যারা গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলাম, আমাদের জুলাই যোদ্ধারা, আহত-শহীদ পরিবারের সদস্যরা সবাই এখন হুমকির মুখে। সাধারণ মানুষেরও নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশে সংকট তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট, পতিত আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি সিকিউরিটি থ্রেট। আমরা দেখেছি হাদি ভাইয়ের অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন এবং আমরা আশঙ্কা করছি এই ঘটনার পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র আছে। আমরা শরিফ ওসমান হাদি ভাইয়ের সঙ্গে আছি। উনার জুলাইয়ের যে স্পিরিট সেটি আমরা প্রত্যেকে ধারণ করি। আমাদের দল-মত ভিন্ন হতে পারে, ব্যানার ভিন্ন হতে পারে; কিন্তু জুলাইয়ের প্রশ্নে, বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমরা জুলাই বিপ্লবী-ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই, ‘ঐক্যবদ্ধ হোন। আমরা ঐক্যের ডাক দিচ্ছি। আহ্বান জানাচ্ছি এই ষড়যন্ত্র-হামলার পেছনে, এই গুলির পেছনে যারা দোষী তাদের অবশ্যই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে।’
নাহিদ এ সময় দায়িত্বহীনতার অভিযোগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে গ্রেপ্তার এবং নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানান।
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, আমরা আজ রাত থেকেই মাঠে থাকবো, এবং যেখানে ফ্যাসিবাদীদের ষড়যন্ত্র দেখব, আমরা তা প্রতিহত করব। আমরা দেখছি প্রশাসনে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা হচ্ছে, দেখছি কোর্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় আওয়ামী লীগের কিছু শিক্ষক গোপনে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে, মিটিং করছে। এখানে আমরা কোনো দল দেখব না, জুলাইয়ের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচনকে বানচাল করা, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত থাকবে, তাদের কঠোর বিচারের আওতায় আনব।
তিনি বলেন, আমরা শরিফ ওসমান হাদির সুস্থতা কামনা করি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি ও প্রার্থনা করি। সরকারের কাছে আমরা জানিয়েছি, তার চিকিৎসার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হোক। শরিফ ওসমান হাদি এখন জুলাইয়ের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। এটা শুধু হাদীর নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়; গণঅভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছে, তাদের প্রত্যেকেই নিরাপত্তা সংকটে আছে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, দ্রুত বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। এবং আমরা যারা গণঅভ্যুত্থানে ছিলাম, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
জননিরাপত্তার প্রশ্নে সরকার সবসময় দুর্বল ভূমিকা নিয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রশ্নে প্রতিটি বিষয় কিন্তু ছাত্রজনতা মাঠে নেমে ঠেকিয়েছে। ছাত্রজনতা তার দায়িত্ব পালন করবে। কিন্তু সরকারকে বলব, এটা আমরা শেষ সুযোগ দিচ্ছি। যদি এই সরকার, এই নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তা দিতে না পারে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে না পারে, আওয়ামী লীগকে সম্পূর্ণভাবে নির্মূলের ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে এই সরকারের বিরুদ্ধেই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ সময় নাহিদ ইসলামের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির নেতৃবৃন্দ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মী।
এর আগে দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে গুলিবিদ্ধ হন ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানকেন্দ্রিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি। তার সহযোগীরা জানান, মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।