ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার-এনইআইআর সংস্কার করে একচেটিয়া সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল ও ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের পদত্যাগের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন রাজধানীর মোবাইল ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর কাওরান বাজার সার্ক ফোয়ারা মোড়ে অবস্থান নিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এ সময় আশপাশের সবগুলো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন অফিস ফেরত সাধারণ মানুষ। আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এই অবরোধ চলায় আশপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেট্রোরেল স্টেশনেও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এতে দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাস্তা ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
সরজমিন দেখা যায়, সন্ধ্যা ৬টার পর মাথায় কাপড় বেঁধে ও গলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্ড ঝুলিয়ে কাওরান বাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন মোবাইল ব্যবসায়ীরা। এরপর তারা কাওরান বাজার মোড়ের চারপাশের রাস্তায় পুলিশের কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। রাস্তার মাঝে মাঝে কাঠ ও গাড়ির টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আন্দোলনকারীরা বলেন, মোবাইল ফোন আমদানিতে ৫৭ শতাংশ ট্যাক্স কমিয়ে ১০-১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। মো. আশরাফ নামে বসুন্ধরা সিটির এক মোবাইল ব্যবসায়ী বলেন, এই আন্দোলন কেবল আমাদের জন্য নয়, এই দেশের কোটি কোটি মানুষের জন্য। তাদের জন্যই আজ আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, আগামী ১৬ই ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর সিস্টেম চালু হতে যাচ্ছে। যদি এটা চালু হয় তাহলে ১ লাখ টাকার একটি ফোনে ৫৭ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে, অর্থাৎ সেই ফোনটার খুচরা মূল্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ২ লাখ টাকার বেশি হয়ে যাবে। এতে আমাদের ব্যবসায় ক্ষতি হবে। আমরা কীভাবে দোকান ভাড়া দিবো? কর্মচারীদের বেতন দিবো? নিজেরা কী খাবো আর ব্যাংক লোন কোথা থেকে দিবো? আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। তিনি বলেন, একাধিকবার বিটিআরসি, এনবিআর, সচিবালয়ে আমাদের সঙ্গে সরকার মিটিং করেছে। কিন্তু কোনো মিটিংয়েই আমাদের দাবি মেনে নেয়ার বিষয়ে কোনো সমাধান দেয়া হয়নি। আজকেও সচিবালয়ে আমাদের নেতাদের সঙ্গে সরকারের কর্মকর্তাদের মিটিং হয়েছে। তারা আমাদেরকে ২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩ মাস সময় দিয়েছেন। কিন্তু এই তিন মাসে আমরা কি করবো?
ফরহাদ হোসেন নামে আরেক মোবাইল ব্যবসায়ী বলেন, সরকার একটা সিন্ডিকেটের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এই এনইআইআর বাস্তবায়ন করছে। এর ফলে পথে বসতে যাচ্ছে কয়েক লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ১৬ই ডিসেম্বর থেকে এনইআইআর চালু হবে। আর মাত্র ৫ দিন আছে। আমরা লাগাতার আন্দোলন করে আসলেও কারোর কোনো মাথা ব্যথা নেই।
এখন বলছে- তৈয়্যব সিন্ডিকেটের ৯ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আমাদের প্রত্যয়ন নিয়ে ব্যবসা চালাতে হবে। কিন্তু তারা কী আমাদের প্রত্যয়ন দিবে? কেনো দিবে? তিনি বলেন, এখানে অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাদের কয়েক কোটি টাকার লোন আছে। স্টকে অনেক মাল আছে। এখন সরকারের তরফ থেকে ব্যবসায়ীদের এসব মোবাইল অবৈধ বলা হচ্ছে। ইউজড মোবাইলও এখন অবৈধ বলা হচ্ছে। তাহলে আমরা এখন কোথায় যাবো? তিনি বলেন, আজকে আমরা রাস্তায় নেমেছি, কাল থেকে এই আন্দোলন আরও বেশি হবে। সারা দেশের মোবাইল ব্যাবাসায়ীরা যোগ দিবে। তিনি বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমরা এই প্রক্রিয়ার কিছু সংস্কার, ন্যায্য করনীতি প্রণয়ন, একচেটিয়া সিন্ডিকেট বিলোপ এবং মুক্ত বাণিজ্যের স্বার্থে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। তাই আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লাগাতার আন্দোলন চলবে।
এদিকে হঠাৎ করে কাওরান বাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করায় ফার্মগেট টু কাওরান বাজার, হাতিরঝিল টু কাওরান বাজার, পান্থপথ টু কাওরান বাজারসহ আশপাশের সকল রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ মানুষ। মো. আনিছ আহমেদ নামে এক প্রাইভেটকার চালক বলেন, কারোর কিছু হলেই রাস্তা আটকে আন্দোলন শুরু করে। মনে হয় দেশটা মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। কেউ কিচ্ছু বলে না। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। আর এতটুকু রাস্তা বন্ধ থাকায় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের যে কতো ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তা আমরাই জানি। আফসানা আক্তার মিম নামে আরেক পথচারী বলেন, সেই সকালে বাসা থেকে বের হয়েছি। সারাদিন অফিসের কাজ সেরে এখন বাসায় যাবো। কিন্তু এতোক্ষণ গাড়ির মধ্যে বসে আছি, গাড়ি এক পা-ও যায় না। সামনে রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন চলছে। আবার বলছে, আমাদের সাধারণ মানুষের জন্য নাকি আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু সেই সাধারণ মানুষকেই এতো ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। আমরা এর থেকে কবে পরিত্রাণ পাবো তা আল্লাহই জানেন। মো. তালহা নামে আরেক পথচারী বলেন, যার যা খুশি করছে। সবাই বলে সাধারণ মানুষের জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা কেউ ভাবে না। শুধু আমার নয়, এদের কাছে মনে হচ্ছে প্রশাসনও অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রায় ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে আছি কেউ এদের কিচ্ছু বলে না। অপরদিকে নিচের মূল সড়ক অবরোধে চাপ বাড়ে মেট্রোরেলেও। কাওরান বাজার মেট্রো স্টেশনে দেখা যায় সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়। নিরাপত্তার জন্য একটি স্টেশনে ওঠার জন্য একটি গেট ছাড়া বাকি সব কয়েকটি প্রবেশ গেট ও ওঠানামার সিঁড়ি বন্ধ থাকায় সেখানে বিশৃৃঙ্খলা দেখা দেয়।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈন্যু মারমা বলেন, কোনো আগাম বার্তা ছাড়াই হঠাৎ করে মোবাইল ব্যবসায়ীরা রাস্তা অবরোধ করেন। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের বোঝানোর পর তারা রাস্তা ছেড়ে দেন।