ক্যানসারে যেদিন স্বামীর মৃত্যু হলো, সেদিন ছিল বড় মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষা। ড্রয়িংরুমে কফিনে তখন স্বামীর নিথর দেহ। শোক আর দায়িত্বের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মেয়েকে সোহানী হোসেন বলেছিলেন, ‘জীবন ও সময় কারও জন্য থেমে থাকে না।’ এ কথা শুনে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল মেয়ে। ফিরে এসে কফিন ছুঁয়ে শেষবারের মতো বাবার মুখ দেখেছে মেয়ে।
নিজের জীবনের গল্প বলতে বলতে এভাবেই অনেক বছর আগের এক শোকের সকালে ফিরে গেলেন সোহানী হোসেন। তখন সোহানীর পাঁচ মেয়ের সবচেয়ে ছোট মেয়ের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর দুই মাস।
সোহানী বলেন, ‘মেয়ে তখন আমি বেরোলেই কাঁদত। বাইরে যাওয়ার জন্য রাখা কাপড় দেখলেই কান্নাকাটি শুরু করত। শৈশবটা দেখতে পারিনি ওর। একসময় দেখলাম, ওর কান্না বন্ধ হয়ে গেছে, ও কাঁদতে ভুলে গেছে। অথচ এখনো স্বপ্নে দেখি, আমার এই মেয়ে খুশিতে দৌড়াচ্ছে, খেলছে।’
স্বামীর হঠাৎ মৃত্যুর পর রাশ টেনে ধরা
সোহানীর স্বামী মোবারক হোসেন রত্ন—পাবনার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শুটার। তাঁর মৃত্যুর পর সংসার ও ব্যবসার সব দায়িত্ব এসে পড়ে সোহানীর কাঁধে। স্বজনদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পত্তির মামলা, পাঁচ মেয়েকে একা বড় করাসহ ব্যবসার জটিলতা—সবই সামলাতে হয়েছে একা হাতে।
২০১২ সালে নিজের শরীরে ধরা পড়ে স্তন ক্যানসার। এরপর শুরু হয় সোহানীর আরেক যুদ্ধ। চিকিৎসা চলেছে, জীবনও চলেছে। চলেছে ব্যবসার লড়াইও।
সোহানীর স্বামী মোবারক হোসেন রত্ন—পাবনার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শুটার। তাঁর মৃত্যুর পর সংসার ও ব্যবসার সব দায়িত্ব এসে পড়ে সোহানীর কাঁধে। স্বজনদের সঙ্গে পারিবারিক সম্পত্তির মামলা, পাঁচ মেয়েকে একা বড় করাসহ ব্যবসার জটিলতা—সবই সামলাতে হয়েছে একা হাতে।
রূপকথার মতো এক পরিসর
গত ৩১ অক্টোবর পাবনার বাংলাবাজারের রূপকথা ইকো রিসোর্টে বসে কথা হয় সোহানীর সঙ্গে। বিশাল পরিসরের এই রিসোর্টের চারপাশে সবুজ আর শৌখিনতার ছোঁয়া। পাবনাবাসীর বিনোদনের জায়গায় পরিণত হয়েছে রিসোর্টটি। বিকেলে টিকিট কেটে অনেকেই এখানে আসেন সময় কাটানোর জন্য।
রূপকথা ইকো রিসোর্ট ছাড়াও স্বামীর নামে নামকরণ করা জালালপুরের রত্নদ্বীপ রিসোর্টেরও মালিক সোহানী। ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গা থেকে অতিথিরা পাবনা গেলে বেশির ভাগই এ দুটি রিসোর্টে থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

মেয়েরা বড় হয়েছে নিজেদের যোগ্যতায়
স্বামীর মৃত্যু আর নিজে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পাশাপাশি সবকিছুই সামলাচ্ছেন সোহানী। মেয়েরা কে কী করছেন, এই প্রশ্নে তাঁর মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।
সোহানী বলেন, পাঁচ মেয়ের মধ্যে তিনজন বর্তমানে দেশের বাইরে থাকেন। মেয়েরা নিজের যোগ্যতায় বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছে এবং করছে।
সোহানীর বড় মেয়ে ফাইকা লাজ বন্তী (সেমন্তী) ফার্মাসিস্ট। তিনি ক্যানসার বিষয়ে এমএসসি ও পিএইচডি করেছেন। অনিন্দিতা লাজ বন্তী (রুপন্তী) স্থপতি। ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রভাষক; বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। মহিতন হোসেন অন্বেষা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএলবি) করেছেন। তিনি বর্তমানে আইন পেশার পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে ব্যবসাও দেখাশোনা করেন। খাদিজা হোসেন অড়লা যুক্তরাজ্যে ইউডব্লিউই ব্রিস্টলে (পাবলিক রিসার্চ ইউনিভার্সিটি) আইন বিষয়ে পড়ছেন। আর ছোট মেয়ে মেফতা-উল-জান্নাত আনহা এবার এইচএসসি পাস করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন পাইলট হওয়ার।
সোহানী হোসেন বলেন, স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির মানুষদের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে হয়েছে, কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে। তবে তিনি থেমে যাননি। বিভিন্ন মামলা এখনো চলমান। তিনি শুধু মেয়েদের বলতেন, ‘মানুষ হতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’

স্বপ্নের বিস্তার—রিসোর্ট থেকে কফি পারলার
মেয়েদের বড় করার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নের বিস্তার ঘটিয়েছেন সোহানী। শুধু রিসোর্ট নয়, শহরের পুরোনো ‘রূপকথা’ সিনেমা হলেরও মালিক তিনি। এর পাশেই গড়ে তুলেছেন কফি পারলার ‘রূপকথা কাব্য’, যেখানে কফির টেবিলের পাশে আছে বই পড়ার জায়গা।
রত্নদ্বীপ রিসোর্টের সামনে তৈরি করেছেন ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’ অবলম্বনে ভারতের একটি ওয়েব সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০২৩ সাল থেকে সোহানী হোসেনের এই ভাতের হোটেলও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই হোটেলে কুমড়া ফুলের বড়া, বিউলির ডাল, ছ্যাঁচড়া, আম-তেল, মালপোয়া, চিংড়ির হলুদ গালা ঝোল, চন্দ্রপুলি, কচুবাটাসহ বিভিন্ন খাবার রান্না হচ্ছে ভোজনরসিকদের জন্য।
২০১২ সালে নিজের শরীরে ধরা পড়ে স্তন ক্যানসার। এরপর শুরু হয় সোহানীর আরেক যুদ্ধ। চিকিৎসা চলেছে, জীবনও চলেছে। চলেছে ব্যবসার লড়াইও।
মন খারাপে শুরু
বিয়ের আগে সোহানী রাজনীতি, সংগঠন, থিয়েটার, খেলা, লেখালেখি—অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিয়ের পর একদিন স্বামী তাঁকে নিয়ে ঘুরতে গেলেন। তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো কোনো সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাবেন, যেখানে গেলে মন ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু স্বামী তাঁকে নিয়ে গেলেন পাবনা মানসিক হাসপাতালে। সেদিন ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল তাঁর।
সেদিনের সেই অভিজ্ঞতা সোহানীর ভেতরে নতুন বোধের সৃষ্টি করে। তখনই ভাবেন, পাবনায় এমন কিছু করবেন, যেখানে গেলে মানুষের মন ভালো হয়ে যাবে। রূপকথা ইকো রিসোর্ট সেই ভাবনারই প্রতিফলন।
তিল তিল করে ব্যবসার পরিসর বাড়িয়েছেন উল্লেখ করে সোহানী বলেন, মনোবল, সাহস আর ভেঙে না পড়া—এই তিন মূলমন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে পথ পাড়ি দিচ্ছেন তিনি।
সোহানী আরও বলেন, রূপকথা সিনেমা হল লাগোয়া এখন যে জায়গায় রূপকথা কাব্য কফি পারলার, সেই জায়গা পরিত্যক্ত ছিল। পাবনার মেয়ে অভিনেত্রী মহানায়িকা সুচিত্রা সেন রূপকথা সিনেমা হলে সিনেমা দেখেছেন। প্রবীণেরা এখনো সে স্মৃতিচারণা করেন। ভেবেছিলেন, তাঁদের বসে আড্ডা দেওয়ার জন্য একটা জায়গা হলে মন্দ হয় না। আবার এখানে বসে বইও পড়তে পারবেন। সেই ভাবনায় তৈরি হয়েছে কফি পারলার।

সুচিত্রা সেনের প্রতি ভালোবাসা
সোহানী নিজে সুচিত্রা সেনের ভক্ত। এ কারণে রূপকথা ইকো রিসোর্টের বিভিন্ন কক্ষের নাম দিয়েছেন উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত বাংলা চলচ্চিত্র সপ্তপদী, উত্তর ফাল্গুনীসহ বিভিন্ন নামে। সুচিত্রা সেন চলচ্চিত্র উৎসবসহ বিভিন্ন আয়োজনেও তিনি সব সময় পাশে থাকেন।
পাবনার হেমসাগর লেনে সুচিত্রা সেনের পৈতৃক বাড়ি রক্ষা করার আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন সোহানী। জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বাড়িটি বর্তমানে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা হিসেবে দর্শনার্থীরা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

ছবি আঁকা আর জীবনের ইজেল
ব্যস্ততার ফাঁকে সময় পেলে সোহানী এখনো ছবি আঁকেন। রূপকথা ইকো রিসোর্টকে দেখেন শিল্পীর ইজেল হিসেবে। বলেন, ১০০ বিঘা জমিতে এ রিসোর্ট অনেকটা শিল্পীর ইজেলের মতো। এটা একের পর এক ছবি আঁকার মতো করে সাজাচ্ছেন তিনি।
সোহানী বলেন, ব্যস্ত-ক্লান্ত মানুষের একটুখানি অবসর দরকার। সে কারণে শুধু স্থপতি নয়, নিজের রিসোর্ট ও ব্যবসার বিভিন্ন জায়গা সাজাতে স্থপতির মতো কাজ করেন তিনিও। এ ছাড়া ঋতু অনুযায়ী বা বিভিন্ন থিমে রূপকথা কাব্য ক্যাফের সাজসজ্জায় তিনি পরিবর্তন ঘটাতে থাকেন।
রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনার রূপপুরে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সোহানী হোসেন রত্নদ্বীপ রিসোর্ট করার আগে বিষয়টি চিন্তা করেছেন। ২৮ বিঘা জমিতে বিদেশিসহ অতিথিদের কথা চিন্তা করেই আন্তর্জাতিক পাঁচ তারকার আদলে এ রিসোর্ট সাজিয়েছেন।

ইন্দুবালা ভাতের হোটেল করার সময়ও ভিন্ন কিছু চিন্তা করেছেন বলে জানালেন সোহানী। রত্নদ্বীপ রিসোর্টে অতিথিরা আসেন। গাড়ির চালকের খাওয়ার জায়গা তেমন একটা নেই। এই চালকদের কথা চিন্তা করেই ভাতের হোটেল চালু করার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। হাসতে হাসতে বললেন, ‘এত চাপ, মাঝে মাঝে মনে হয়, এ হোটেল বন্ধ করে দিতে হবে।’
নাটোরের মেয়ে সোহানী হোসেন। নাটোরে তাঁদের একটি বাংলোবাড়ি ছিল। সেটিকে ফেলে না রেখে সেখানে চালু করেছেন ইন্দুবালা গেস্ট হাউস হোম স্টে। সেটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই হওয়া সোহানী বলেন, বয়স, অসুস্থতা—এগুলোর জন্য থেমে থাকতে চান না। সব সময় ব্যতিক্রম কিছু করতে চান।

শৈশব, পরিবার ও লেখালেখি
সোহানীর দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জ, নানার বাড়ি নাটোরে। কিন্তু তাঁর শৈশব কেটেছে রাজশাহীতে। বাবা আবু সাঈদ ভূঁইয়া নাটোর চিনিকলে কর্মরত ছিলেন। মা লুৎফুন নাহারও চাকরি করতেন। তিন ভাই এবং সোহানী ও তাঁর যমজ বোনের দেখভালের জন্য ১৯৭২ সালে মা চাকরি ছেড়ে দেন।
সোহানীর নানি বেগম পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। মা–ও লেখালেখি করেন। মায়ের লেখা বই এখনো একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হচ্ছে। মা-নানির লেখালেখির ধারায় তিনিও লেখেন। একুশে বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর কবিতা-গল্পের বইয়ের সংখ্যা এখন ১৮।
সোহানী একসময় সাংগঠনিক কাজ করলেও স্বামীর মৃত্যুর পর ঘর সামলানোর পাশাপাশি ব্যবসা ও অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হন। এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
‘আগে থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার যে দক্ষতা ছিল, সেটাই কাজে লেগেছে। আর ব্যবসার পরিসর বাড়াতে শুধু টাকা থাকলেই হয় না, বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করতে হয়’ বলে জানিয়েছেন সোহানী।

অর্জন
সোহানী শুধু একজন ব্যবসায়ী নন, তিনি সিনেমার প্রযোজক, কাহিনিকার ও গীতিকার হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। তাঁর ঝুলিতে যোগ হয়েছে নানা অর্জন।
সোহানী ‘সত্তা’ চলচ্চিত্রটির প্রযোজক ও কাহিনিকার। এই সিনেমার ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম’ গানটির গীতিকারও তিনি। আর এ গানের জন্য গায়ক ফারুক মাহফুজ আনাম জেমস জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এবিসি রেডিওর ২০১৭ সালে প্রচারিত সেরা ৫০ গানের তালিকার ১ নম্বরে এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ২০১৭ সালে ইউটিউবে শ্রোতৃপ্রিয় শীর্ষ ১০ বাংলা গানের তালিকার তিন নম্বরে ছিল গানটি। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান ও ভারতের অভিনেত্রী পাওলি দাম।
‘অন্তরাত্মা’ সিনেমারও প্রযোজক সোহানী হোসেন। এ সিনেমার একটি গানের গীতিকার তিনি। এ সিনেমায় নায়ক শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার নায়িকা দর্শনা বণিক।
এ ছাড়া জেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ করদাতা হিসেবে সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সম্মাননা পেয়েছেন সোহানী হোসেন। ভারতের ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সম্মান হল অব ফেম, মাদার তেরেসা আন্তর্জাতিক সম্মাননা, দাদা সাহেব ফালকে ফিল্ম ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড, আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো সম্মাননা, ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট অ্যাওয়ার্ড, ভারতের খাজুরাহো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নারী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সম্মাননাসহ বিভিন্ন সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

থেমে না যাওয়ার লড়াই
সোহানীর শ্বশুর ও স্বামী মোট ২১টি সিনেমা হলের মালিক ছিলেন। রূপকথা সিনেমা হল তারই একটি। তিনি বলেন, সিনেমা হলটি যে খুব ভালো চলছে, তা বলা যাবে না। ঐতিহ্য ও স্মৃতির টানে এটি এখনো টিকিয়ে রেখেছেন তিনি।
এত অর্জনের পাশাপাশি আক্ষেপও আছে সোহানী হোসেনের। বিশেষ করে ভ্যাট কর্তাদের টার্গেট হয়ে ওঠার অভিযোগ তাঁর কণ্ঠে তীব্র।
স্বামীর মৃত্যুর পর মূল ব্যবসা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল গ্রুপ টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। এ গ্রুপের তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক। গত বছরের ২৪ আগস্ট শহরের রূপকথা ভবন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সোহানী জানিয়েছিলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কতিপয় ভ্যাট কর্মকর্তাদের ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে হুমকিতে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কয়েক হাজার কর্মীর জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
সোহানী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর কতিপয় ভ্যাট কর্মকর্তার নজর পড়ে। কর্মকর্তাদের ঘুষ না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ২৭০ কোটি টাকা মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ফাঁকির মামলা করা হয়। আর্থিক ক্ষতির মুখে ২০২২ সালের মে মাসে ইউনিভার্সাল গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেডের উৎপাদন বন্ধ করে দেন। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
সোহানী হোসেন বললেন, ‘আমার জীবনের যে সংগ্রাম, তা বলে শেষ করা যাবে না। ধারাবাহিকভাবে নিজেই নিজের জীবনী লিখছি। একুশে বইমেলায় “একজন আমি” শিরোনামে বইটি প্রকাশিত হচ্ছে। জীবনী লিখছি, কারণ অন্য নারীরা যেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে উৎসাহিত হয়। কোনো পরিস্থিতিতেই যেন তাঁরা দমে না যান।’