Image description

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন করে দেশের আট বিভাগে ১৬৬ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে ১৫৮ জন ইউএনওকে প্রত্যাহার করে বিভিন্ন অধিদপ্তর-সংস্থায় পদায়ন করা হয়েছে। তবে নিয়োগ ও বদলি হওয়া কর্মকর্তারা খুশি হতে পারেননি। তারা নিজেদের পছন্দের উপজেলা বা দপ্তর-সংস্থায় পদায়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। কয়েকজন কালবেলার কাছে তাদের অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। এদিকে সংসদ নির্বাচনের আগে বদলিকৃতদের কর্মস্থল আর পরিবর্তন হবে না বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও ইউএনওদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং ইউএনওরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য এবার রিটার্নিং কর্মকর্তা কারা হবেন, তা এখনো চূড়ান্ত করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বুধবার রাতে সারা দেশের ১৬৬ উপজেলায় ইউএনও নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন। পৃথক আটটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দেশের আট বিভাগের উপজেলায় তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা। নতুন করে আরও ইউএনও নিয়োগ দেওয়া হবে কি না সে সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। ফলে এ প্রসঙ্গে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তারা ইউএনও নিয়োগ নিয়ে কাজ করবেন। এখনো সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশ আসেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৫৮ জন ইউএনওকে বদলি করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ ও দপ্তর-সংস্থায় পদায়ন করা হয়। তারা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৬তম ব্যাচের কর্মকর্তা। নতুন করে ইউএনও নিয়োগ এবং বর্তমানে কর্মরত ইউএনওদের প্রত্যাহারের পর উভয় পক্ষের মধ্যেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

সূত্র জানায়, নতুন নিয়োগ পাওয়া ইউএনওরা অনেকেই তাদের পছন্দের উপজেলায় পদায়ন পাননি। এবার তাদের নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে লটারির মাধ্যমে। পছন্দের উপজেলা না পেয়ে তাদের অনেকেই মন্ত্রণালয়ের ওপর চরম অসন্তোষ। তারা এখন নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পদায়ন নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগে দৌড়ঝাঁপ করছেন। অনেকে জনপ্রশাসন সচিবের কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন। তবে তাদের তদবির কিংবা আবেদন বিবেচনায় নিচ্ছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

অন্যদিকে প্রত্যাহার হওয়া ইউএনওদের অনেকেও পছন্দের দপ্তর না পেয়ে হতাশ। তারা ঢাকাকেন্দ্রিক পদায়ন নিতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তাদের কেউ কেউও নিজেদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ধরনা দিচ্ছেন। তবে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের এ তৎপরতা কোনো কাজে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এপিডি অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব মিঞা মুহাম্মদ আশরাফ রেজা ফরিদী গতকাল দুপুরে নিজ দপ্তরে কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ ও বদলির কাজটি করেছি। এখন কেউ পছন্দের পদায়ন নিতে চাইলেও তা সম্ভব নয়। ভোটের আগে এ নিয়োগ ও বদলি আদেশ পরিবর্তন হবে না। তবে নির্বাচনের তপশিল হওয়ার পর ইসির পরামর্শে বদলি-পদায়ন করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সুতরাং দৌড়ঝাঁপ করে কোনো কাজে আসবে না।’

সূত্র জানিয়েছে, সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিগত নির্বাচনগুলোতে যারা দায়িত্বে ছিলেন, তারা আগামী নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পাবেন না। বর্তমানে ৩৫তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন ইউএনও ২০২৪ সালের নির্বাচনে সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা (এআরও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের প্রত্যাহার করা হবে। ভোটের তপশিলের আগেই তাদের প্রত্যাহার করা হতে পারে। এ ছাড়া ৩৬তম ব্যাচের যাদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ভালো, তারা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত ইউএনও পদে থাকবেন। যাদের বিষয়ে প্রতিবেদনে আপত্তি আছে তাদের প্রত্যাহার করা হবে।

গত দুদিনের প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে পুলিশ, প্রশাসন এবং অধস্তন আদালতের বিচারকদের এক হাজারের বেশি কর্মকর্তার পদোন্নতি ও পদায়ন দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে এসপি, ইউএনও এবং অধস্তন আদালতের তিন স্তরের বিচারকরা রয়েছেন।

গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় লটারির মাধ্যমে ৬৪ জেলায় এসপি চূড়ান্ত করা হয়। একদিন পর বুধবার তাদের বদলি ও পদায়ন করা হয়। তাদের মধ্যে ৫০ জন বর্তমান এসপিকে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি করা হয়েছে। আর বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা ১৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে জেলার এসপি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী পুলিশ কমিশনার পদে নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো থানার ওসি পদায়নও লটারির মাধ্যমে হবে। এজন্য সৎ ও যোগ্য ওসি বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।