সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার শহরে জনসংখ্যা কখনোই বোঝা নয়, কিছু ক্ষেত্রে সৌন্দর্যও বটে। কিন্তু ঢাকার জনসংখ্যাকে সৌন্দর্য বলার কোনো সুযোগ নেই। বরং দুর্ভাবনা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ কথা। তাদের মতে, জাতিসংঘের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল শহর হিসেবে ঢাকার উঠে আসা, শঙ্কা জাগানিয়া। তাই রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে অবিলম্বে সেবার বিকেন্দ্রীকরণ করার পরামর্শ তাদের।
বুড়িগঙ্গা তীরে গড়ে ওঠা আদি জনপদ ঢাকা। এই ঢাকার ৪শ’ বছরের ইতিহাস যতো এগিয়েছে, মহানগরী ততই বেড়েছে গায়ে-গতরে। রুটি-রুজির বাস্তবতা আর কেন্দ্রিকতার আকর্ষণে- এখানে প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসতে হয় মানুষকে।
ঢাকার জনসংখ্যার গ্রাফ যে ঊর্ধমুখী এটি জানা খবর। কেউ বলতেন সব মিলিয়ে ২ কোটি কেউ বা আড়াই কোটি মানুষের শহর এই রাজধানী। কিন্তু জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড আরবানাইজেশন প্রসপেক্টেসের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, এই মেগাসিটির জনসংখ্যা পৌঁছেছে ৩ কোটি ৬৬ লাখে। এ হিসেবে ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখন বাস করেন ১ লাখের বেশি মানুষ।
বুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড.ইশরাত ইসলাম বলেন, আমাদের ঢাকা শহরে যে জনসংখ্যা বাড়ছে, এটা মূলত মাইগ্রেশনের কারণেই বাড়ছে। সুতরাং এখানে এডাপ্টেশনের অনেক কথা আমরা বলি, কিন্তু মানুষ বাধ্য হয়ে এই অবস্থায় আছে।
এই নগর পরিকল্পনাবিদের মতে, রাজধানীর বাড়তে থাকা জনসংখ্যা মোটেও ভালো কোনো বার্তা দেয় না। এতো মানুষের নিরন্তর ছুটে চলার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সমাজ কাঠামোয়। যার বড় মাশুল গুণতে হতে পারে।
ড. ইশরাত ইসলাম আরও বলেন, এত জনবহুল একটা শহরে আসলে ভালনারেভিলিটি অনেক বেশি। সুতরাং আমি কখনোই মনে করি না এখান থেকে বের হয়ে আসার সময় শেষ হয়ে গেছে, এখনো সময় আছে। আমাদের মানুষের কর্মসংস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলো যদি আমরা অন্যান্য শহরে করতে পারি, আমি বলব ঢাকা শহরে যদি আমি বিনিয়োগ একটু কমিয়ে দেই তাহলে আমার মনে হয় যে, কলকারখানার সুযোগ যদি থাকে তাহলে মানুষ ঢাকা শহরে আসবে না।
রাজউক বলছে, ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপের বাস্তবায়ন কমাতে পারে রাজধানীর জনসংখ্যার ঘনত্ব।
রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঢাকার আশপাশে ছোট ছোট টাউনশিপ গড়ে উঠলে মূল শহরের চাপ কমবে। ট্রাফিক, শিক্ষা, বাসস্থান সবই বিকেন্দ্রীভূত হবে। তাহলে আমাদের ডিসেন্ট্রাইলাইজেশন ফাংশনটা ঢাকার ভেতরে কার্যকর হবে। আর ড্যাপের মূল দর্শনই কিন্তু এটা।
জাতিসংঘের অনুমান, যেভাবে ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের সর্বোচ্চ জনবহুল শহর হবে ঢাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতো মানুষের শহরে নাগরিক সুবিধা দিতে যত ভালো পরিকল্পনাই নেয়া হোক, তা বাস্তবায়ন অসম্ভবের কাছাকছি।