Image description

গণহত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার অগ্রণী ব্যাংকের দুটি লকারে ৮৩২ ভরি স্বর্ণালংকারই শুধু নয়; পাওয়া গেছে সোনার বার, কয়েন, মুক্তা, হীরাসহ বিভিন্ন ধরনের দামি পাথর। স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান এসব পাথরের গুণগত মান পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। ফলে জব্দ করা এসব সামগ্রীর প্রকৃত তথ্য পেতে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

এদিকে অগ্রণী ব্যাংকের লকারে পাওয়া মূল্যবান এসব দামি পাথর ও স্বর্ণালংকার শেখ হাসিনার নামে থাকা লকার থেকে রাষ্ট্রীয় জিম্মায় ব্যাংকেরই অন্য একটি লকারে সিলগালা অবস্থায় রাখা হয়েছে। ‘অগ্রণী ব্যাংকের লকারে শেখ হাসিনার স্বর্ণালংকার’—এমন সংবাদ এখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়, ব্যাংকপাড়াসহ অফিস-আদালত, যানবাহন, ফুটপাত সর্বত্র এখন আলোচনার মূল বিষয় এ স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, টানা সাড়ে ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার মুখে ‘রিক্ত আমি, সিক্ত আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই’—এমন বক্তব্য শত শতবার শুনেছেন। তিনি ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা, তাই সাধারণ জীবনযাপনই তার লক্ষ্য।’ দেশের কোথাও তার কোনো সম্পদ নেই। এমন শত শত উক্তি তিনি করেছেন। এখন যেসব সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে, তাতে মাথায় আকাশ ভেঙেপড়ার মতো অবস্থা।

অগ্রণী ব্যাংকের দিলকুশা শাখারই এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শেখ হাসিনার কারণে এখন তাদের এ ব্যাংক আলোচনার শীর্ষে। একজন মানুষের কত সম্পদ প্রয়োজন, তা শেখ হাসিনার এ কর্মকাণ্ড না দেখলে বুঝতে পারতেন না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন যেসব উপহার সামগ্রী পেয়েছেন সেগুলো ব্যাংকের লকারে রেখেছেন। কিন্তু এসব উপহার সামগ্রী ব্যক্তিগত লকারে রাখার কোনো সুযোগ নেই। এর মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যহার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের মতো অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। এটিকে আইনগতভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে শেখ হাসিনার নামে পূবালী ব্যাংকে থাকা লকারটিও ভাঙা হয়েছে। সেখানে শুধু একটি খালি পাটের বস্তা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। সেই লকারে জমা থাকা সম্পদ বা মূল্যবানসামগ্রী আগেই শেখ হাসিনা সরিয়ে নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে শেখ হাসিনার নামে থাকা ব্যাংকের স্থিতি, এফডিআর, ভল্ট বা লকারের তথ্য চেয়ে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীর কাছে চিঠি দেয় সিআইসি। কিন্তু পূবালী ব্যাংক লকারের তথ্য গোপন রাখে। এ কারণে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে শোকজও করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার আয়কর নথিতে ১৩ লাখ টাকার স্বর্ণালংকার থাকার তথ্য দিয়েছেন। ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনি হলফনামায়ও এমন তথ্যই দিয়েছেন তিনি। তবে স্বর্ণ বা স্বর্ণালংকারের পরিমাণ কত তা উল্লেখ করেননি। ব্যাংকের লকারে পাওয়া ৮২৩ ভরি স্বর্ণালংকারের বাজারমূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এছাড়া যেসব দামি পাথর রয়েছে সেগুলোর বাজারমূল্য নির্ধারণ করার পর তার পরিমাণ আরো বাড়বে। ফলে আয়কর নথিতে শেখ হাসিনা তথ্য গোপন করেছেন বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে আয়কর আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম আমার দেশকে বলেন, আয়কর আইন অনুযায়ী তথ্য গোপন একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

রাজধানীর মতিঝিলে অবস্থিত অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখায় শেখ হাসিনার নামে থাকা ৭৫১ ও ৭৫৩ নম্বর লকার ভেঙে এসব সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। শেখ হাসিনার নামে অগ্রণী ব্যাংকের এ দুটি লকার ছাড়াও মতিঝিলে অবস্থিত পূবালী ব্যাংকের সেনা কল্যাণ ভবনের করপোরেট শাখায় থাকা একটি ভল্ট ভাঙা হয়। ওই ভল্টের নম্বর হচ্ছে ১২৮। ওই ভল্টে একটি চটের বস্তা পাওয়া যায় এবং ওই বস্তায় কোনো কিছু পাওয়া যায়নি।

গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে লকার ভাঙার কাজ শুরু হয়। প্রায় ১০ ঘণ্টাব্যাপী ওই অভিযানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জাতীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

গোপন সংবাদে গত ১০ সেপ্টেম্বর রুপালী ব্যাংকের এবং ১৭ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকে থাকা লকারগুলো জব্দ করেছিল সিআইসি। কিন্তু শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার কারণে লকারগুলো খোলা যায়নি। লকারের একটি চাবি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এবং অপর একটি চাবি লকারের মালিকানায় থাকা ব্যক্তির কাছে থাকে। দুটি চাবি দিয়েই লকার খোলা হয়। আবার যার নামে লকার তার উপস্থিতিতেই সেটি খুলতে হয়। ফলে আইনগত কারণে জব্দ করা লকারগুলো ভাঙা সম্ভব হয়নি। লকার ভাঙার বিষয়ে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অনুমতি প্রদান করলে লকারগুলো ভাঙা হয়।