নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় একটি গ্রামীণ সড়কের পাশে থাকা ৩১টি মেহগনি গাছ কেটে ফেলার অভিযোগে রেজাউল হাসান ভূঁইয়া ওরফে সুমন (৩৮) নামের বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
সোমবার উপজেলার মাসকা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. আবদুল জলিল বাদী হয়ে রেজাউল হাসান ভূঁইয়া ওরফে সুমনের নামে (৩৮) মামলাটি দায়ের করেন। এ মামলায় চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) কেন্দুয়া থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত রেজাউল হাসান ভূঁইয়া মাসকা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও পিজাহাতি গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাসকা ইউনিয়নের দিঘলী–আলমপুর কাঁচা রাস্তাটি পাকাকরণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ৪ কিলোমিটার ১৫০ মিটার ওই রাস্তার সংস্কার কাজ পায় মোহাম্মদ ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান; কিন্তু কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান ভূঁইয়া।
তিনি দিঘলা এলাকায় সড়কের পাশে থাকা সরকারি ৩১টি মেহগনি গাছ কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা টেন্ডার ছাড়াই কেটে ফেলেন। গাছগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৮ লাখ টাকার মতো হবে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৮ নভেম্বর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গাছগুলো কাটা হয়। এলাকাবাসী বাধা দিতে গেলে উপজেলা প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে ঠিকাদারের লোকজন গাছগুলো কেটে ফেলেন।
দিঘলী গ্রামের বাসিন্দা জিলু মিয়া বলেন, সরকারিভাবে আমাদের জমির পাশে রাস্তায় প্রায় ২৫ বছর আগে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছিল। তখন বলা হয়েছিল গাছ বিক্রি হলে আমরা কিছু অংশ পাব। তাই দীর্ঘদিন ধরে গাছগুলো দেখাশোনা করছিলাম; কিন্তু রাস্তা পাকা করার অজুহাতে ইউএনওর নাম বলে বিএনপি নেতা রেজাউল হাসান ভূঁইয়া গাছগুলো কেটে নিয়ে গেছেন।
একই গ্রামের সনজু রহমান বলেন, ১৮ নভেম্বর সকাল থেকে গাছগুলো কাটা হয়। পরে রাতে সরানোর সময় সন্দেহ হলে গ্রামবাসী কিছু গাছ আটক করে প্রশাসনকে জানান।
কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আল আমিন সরকার করেন, যতটুকু জানি গাছ কাটায় কোনো নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি।
জানতে চাইলে রেজাউল হাসান ভূঁইয়ার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেছিলেন, রাস্তা প্রশস্ত ও পাকা করার জন্য নিজ খরচে গাছগুলো কাটা হয়েছে। নির্মাণকাজের সময়সীমা কম থাকায় দ্রুত গাছ কাটতে হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে গাছগুলো কাটার পর সব এক জায়গায় জিম্মায় রাখা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ঠিকাদার ইচ্ছা করলেই এভাবে গাছ কাটতে পারেন না। এছাড়া ইউএনওর নাম ভাঙিয়ে গাছ কাটাও বেআইনি। সহকারী কমিশনার ভূমিকে প্রদান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে।
কেন্দুয়া থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।