Image description

জাতিসংঘের ইউএনসিডিপিতে পাঠানো বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ টেকসইভাবে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে দেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ নির্ধারিত রয়েছে।

ইউএনসিডিপি বরাবর পাঠানো সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণের দিকে ধারাবাহিক অগ্রগতি অর্জন করছে, যা দেশের স্থিতিস্থাপকতা ও নীতি প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে জানান, চলতি মাসের শুরুতে প্রতিবেদনটি জাতিসংঘ প্যানেলের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'প্রতিবেদন জমা দেওয়া মানে এই নয় যে সরকার উত্তরণ বিষয়ে কোনোদিকে ঝুঁকছে। এটি সব দেশের সরকারের নিয়মিত বার্ষিক প্রক্রিয়া।'

তিনি আরও জানান, প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে ইউএনসিডিপি মতামত দেবে।

প্রতিবেদনটি এমন সময়ে জমা পড়েছে যখন ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে রপ্তানিকারকরা, উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলে উত্তরণ ছয় বছর পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি জানাচ্ছেন।

এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হারাতে পারে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।

'বাংলাদেশ বাৎসরিক দেশ প্রতিবেদন ২০২৫' শিরোনামের নথিতে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে শুরু হওয়া পাঁচ বছরের প্রস্তুতি পর্ব শেষ হলে আগামী বছরের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে এলডিসি থেকে উত্তীর্ণ হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ, চলমান জ্বালানি ঘাটতি ও ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা, বিনিয়োগ পরিবেশের স্থবিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের বিস্তার এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বাড়তি চাপ।

পাশাপাশি বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অগ্রগতিমুখী উন্নয়ন পরিকল্পনার অভাবও অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ হিসেবে ধরা হয়েছে।

উন্নততর পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার আওতায় উত্তরণশীল দেশগুলো এই বার্ষিক প্রতিবেদন সিডিপিতে পাঠায়। সিডিপি আগামীকাল ইএমএম প্রক্রিয়ার অধীনে বাংলাদেশসহ উত্তরণশীল দেশগুলো নিয়ে বৈঠক করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনটি আরও জানায়, এলডিসি-পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে জাতিসংঘ, উন্নয়ন সহযোগী এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাড়তি সহায়তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

ব্যবসায়ীদের অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ জানান, বিভিন্ন ব্যবসায়ী চেম্বার ও ট্রেড বডি ইতোমধ্যে সরকার ও জাতিসংঘে এলডিসি উত্তরণ স্থগিতের জন্য যৌথভাবে চিঠি দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা এলডিসি উত্তরণ চাই, কিন্তু এখনও আমরা এর জন্য প্রস্তুত নই।'

জাতিসংঘের স্বাধীন মূল্যায়ন দলের সদস্য মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক বলেন, উত্তরণের লক্ষ্য থাকায় প্রস্তুতিমূলক উদ্যোগ সরকারকে অব্যাহতভাবে নিতে হবে।

চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য জাতিসংঘের স্বাধীন দলটি ইতোমধ্যে সরকারি কর্মকর্তা, উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা, বড় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শ্রমিক, ইউনিয়ন নেতা ও স্বাধীন অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করেছে।