বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। হঠাৎ কেঁপে ওঠা ভবন, দেয়াল ও দরজার শব্দে মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। স্বল্প সময় স্থায়ী হলেও এই কম্পন ঢাকার মানুষকে আবার মনে করিয়ে দিয়েছে— ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে বসবাসের ঝুঁকি কতটা বাস্তব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫ মাত্রার মতো ভূমিকম্পে সাধারণত বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও ভবনের গঠনগত দুর্বলতা থাকলে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই কম্পনটি ঢাকাবাসীর মনে আরেকবার জাগিয়ে তুলেছে বিশ্বের বড় বড় ভয়াবহ ভূমিকম্পের স্মৃতি।
১৯৬০ সালের চিলির ভ্যালডিভিয়া ভূমিকম্পকে এখনো ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে ধরা হয়। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৫। প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে সৃষ্ট সুনামিতে কয়েকটি দেশে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।
এর ধাক্কা পৃথিবীর ঘূর্ণনগতিতেও সামান্য পরিবর্তন এনেছিল বলে জানান ভূকম্পবিদরা। ২০১১ সালের জাপানের ৯ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয়, এটি তোহোকু ভূমিকম্প বা মেগা-থ্রাস্ট কোয়েক নামে পরিচিত। এর প্রভাবে সুনামিতে সরাসরি ডুবিয়ে দিয়েছিল পুরো উপকূলীয় অঞ্চল।
ধ্বংস হয়ে যায় হাজারো ঘরবাড়ি, ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্বের অন্যতম প্রস্তুত রাষ্ট্র হিসেবেও জাপানকে এই বিপর্যয় সামলাতে লড়াই করতে হয়েছিল দীর্ঘদিন।
২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরীয় ভূমিকম্প ও সুনামিও আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ৯ দশমিক ১ মাত্রার এই ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামিতে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশে মৃত্যু হয় ২ লাখের বেশি মানুষের। ঢেউয়ের উচ্চতা কিছু এলাকায় ছিল প্রায় ৩০ মিটার।
অন্যদিকে ২০১৫ সালের নেপালের গোর্খা ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। পাহাড়ি দেশটিতে হাজারো ভবন ধসে পড়ে, প্রাণহানি ঘটে ব্যাপকভাবে। কাঠমান্ডুর ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন বাংলাদেশেও এর হালকা প্রভাব অনুভূত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, ঢাকার ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প বড় বিপর্যয় না আনলেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা খুবই জরুরি। বিশেষত ঢাকার বিভিন্ন ত্রুটিপূর্ণ ভবন, অতিরিক্ত জনসংখ্যার ঘনত্ব ও দুর্বল অবকাঠামো পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
সে কারণে পরিকল্পিত নগরায়ণ, ভবন নির্মাণে কঠোর নিয়ম মেনে চলা এবং জরুরি প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা— সময় এসেছে আবার গুরুত্ব দিয়ে ভাবার।