 
              বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো চাপের মুখে রয়েছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটি সুদের হারকে আরো বাজারভিত্তিক করার পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি তারা জানায়, মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামাতে হলে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বজায় রাখা জরুরি। একই সঙ্গে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠনে রিজার্ভের ব্যবহার ও বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি সফল হয়নি। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির ধারা নিম্নমুখী হওয়ায় সংস্থাটি সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠকে জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৮.৩৬ শতাংশে। আইএমএফ প্রতিনিধিদল এই উন্নতির বিষয়টি স্বীকার করলেও জানিয়েছে, এই ধারা বজায় রাখতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখা জরুরি।
বৈঠকে আইএমএফ জানায়, মুদ্রানীতির কার্যকারিতা বাড়াতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদের হারকে আরো বাজারনির্ভর কাঠামোয় আনতে হবে। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুদের হার নির্ধারণ পদ্ধতি, মুদ্রানীতির কাঠামো এবং তারল্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তাারিত তথ্য নেয়।
দেশে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল রিজার্ভ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) গঠনসহ বিভিন্ন পুনরর্থায়ন ও প্রাক-অর্থায়ন সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে নিট রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০.৫ বিলিয়ন ডলার, যা সংস্থাটির নির্ধারিত সেপ্টেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা (১৮ বিলিয়ন ডলার) ও ডিসেম্বরের লক্ষ্যমাত্রা (১৯.৯ বিলিয়ন ডলার)-এর চেয়ে বেশি। তবে রাজস্ব ঘাটতি এবং কর-জিডিপি অনুপাতের দুর্বলতা নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে আইএমএফ।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকস প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলামসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, ‘আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে তথ্য নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, তারল্য সহায়তা, রিজার্ভের ব্যবহার ও খেলাপি ঋণ কমাতে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে তারা বিস্তারিত আলোচনা করেছে।’
২০২২ সালে দীর্ঘ আলোচনার পর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ৪৭০ কোটি ডলারের আইএমএফ ঋণ চুক্তি করে, যা পরে বাড়িয়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পাঁচটি কিস্তিতে মোট ৩৬৪ কোটি ডলার পেয়েছে। তবে ষষ্ঠ কিস্তি, যা ডিসেম্বর মাসে ছাড় হওয়ার কথা, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আইএমএফ নিশ্চিত হতে চায়, নির্বাচনের পরেও সংস্কার কর্মসূচিগুলো অব্যাহত থাকবে কি না। সে কারণে ডিসেম্বরের পরিবর্তে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে ষষ্ঠ কিস্তি ছাড় হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
চলমান মিশন ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করবে এবং সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবে।
 
       
                 
                
 
                                                  
                                                  
                                                  
                                                  
                                                 