Image description
 

তরুণদের নিয়ে গড়া নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তোড়েজোড়ে নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে এমন অবস্থান দলটির। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরেই তারা দেশব্যাপী নির্বাচনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। 

 

 এনসিপিকে জোটে টানতে আগ্রহী বিএনপি ও জামায়াত। দুটি দলই নাহিদদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখছে। তবে জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব তৈরি হয়েছে। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সাম্প্রতিক পরস্পর বিরোধী বক্তব্যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এনসিপির শীর্ষ নেতাদের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে জোট কিংবা নির্বাচনি সমঝোতার বিপক্ষে। 

  জানা গেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দলের শীর্ষপর্যায় থেকে তৃণমূলে এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে জোট না হলেও নির্বাচনি কৌশল হিসাবে অভিন্ন এজেন্ডা এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির এক যুগ্ম-আহ্বায়ক যুগান্তরকে বলেন, নিজেদের সঙ্গে জোট না করলেও এনসিপি যাতে কোনোভাবেই জামায়াতের জোটে যোগ না দেয়, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বিএনপি। এজন্য দলটির পক্ষ থেকে ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনসহ অন্তত ২০টিতে সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে মন্ত্রিসভায় এনসিপির প্রতিনিধি রাখা হবে-এমন কথাও বলা হচ্ছে। তবে এসব বিষয়ে এনসিপির পক্ষ থেকে এখনো চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব মঙ্গলবার দলীয় কার্যালয়ে যুগান্তরকে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অন্য কোনো দলের সঙ্গে জোটে না গিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থানে থাকার বিষয়ে বেশির ভাগ নেতাকর্মী মতামত দিয়েছেন। এছাড়া ‘আসন সমঝোতা’ কথাটির সঙ্গেও আমরা একমত নই। তবে অভিন্ন এজেন্ডা, ঐক্য এবং রাজনৈতিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন হতে পারে।

এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলের আহ্বায়ক ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে একদফার ঘোষক নাহিদ ইসলাম, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ডা. তাসনিম জারা, আরিফুল ইসলাম আদিব, সামান্থা শারমিনসহ দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা এবং আশপাশের কয়েকটি আসন থেকে লড়বেন।

এছাড়া দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর, সারজিস আলম পঞ্চগড়, হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এর বাইরে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্রনেতা পদত্যাগ করে এনসিপিতে যোগ দিলে তাদের জন্য দলীয় পদ এবং সংসদীয় আসনের বিষয়টিও চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে।

 

 

 

সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে ঢাকাসহ অন্তত ১৭০টি আসনে দলীয় প্রার্থীর একটি খসড়া তালিকা তৈরি করেছে এনসিপি। এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম রাজধানীর সবুজবাগ-মতিঝিল ও ডেমরা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৯ অথবা ১১ আসন, দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদিব মিরপুর এলাকার একটি আসন থেকে, মেধাবী চিকিৎসক ডা. তাসনিম জারা ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ), রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হোসেন ও ঢাকা জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাসেল আহম্মেদ, ঢাকা-৭ থেকে আরিফ ও সোহেল, ঢাকা-৪ ও ৫ থেকে এসএম শাহরিয়ার ও নিজাম উদ্দিন, ঢাকা-১৭ থেকে আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, উত্তরা থেকে দলের মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, ঢাকা-১৯ থেকে যুগ্ম সদস্য সচিব ফয়সাল মাহমুদ শান্ত, ঢাকা-২০ থেকে আসাদুল ইসলাম মুকুল, ঢাকা-৬ থেকে কেন্দ্রীয় সদস্য খান মো. মোরসালিন এবং ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামান্থা শারমিন ও সিনিয়র যুগ্ম সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা।

 

 

 

দলীয় সূত্র বলছে, অভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন হলেও বিদ্যমান কয়েকটি বড় দলের চরিত্র বদল হয়নি। বিশেষ করে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দেশজুড়ে চর দখলের মতো করে হাট-মাঠ-ঘাট দখল করা হয়েছে। অথচ উত্তাল জুলাইয়ে কোটি জনতা রাজনৈতিক পরিবর্তনের আশায় রাজপথে নেমে এসেছিল। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল হাজারো তরুণ। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতায় সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের এখনো স্বপ্ন সুদূরপরাহত।

এনসিপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী মনে করেন, জুলাইয়ের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে এনসিপিকে আরও বহুদূর যেতে হবে। এক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান রাজনৈতিক স্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে শক্তভাবে দাঁড়ানো। কিন্তু তা না করে এনসিপি যদি ক্ষমতাকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে বা বিদ্যমান দলগুলোর সঙ্গে ভিড়ে যায়, তবে দলের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়তে বাধ্য। তাই যে কোনো মূল্যে এনসিপিকে স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হবে।