নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌর এলাকায় ড্রেন নির্মাণে ঢালাইয়ের সময় সিলেকশন বালু না দেওয়া, সিমেন্ট ও রড কম ব্যবহার এবং নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে পৌর প্রশাসক চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও ঠিকাদার তা উপেক্ষা করে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিনে গেলে সোনাইমুড়ী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল আজিম জানান, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর এলাকায় ড্রেন নির্মাণের টেন্ডার হয়। “৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্পের” আওতায় ৪ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণের কাজ পান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে আনোয়ার হোসেন। তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে নিম্নমানেরভাবে ড্রেনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন। সরকার পরিবর্তনের পর ওই ঠিকাদার গা-ঢাকা দেন।
প্রায় দেড় বছর আগে কাজটি পুনরায় টেন্ডার হয় এবং নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার রিদি এন্টারপ্রাইজ—এর স্বত্বাধিকারী আবু তাহের কাজটি পান।
স্থানীয় পৌরবাসীরা জানান, ঠিকাদার সিডিউল ও ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ করছেন না। রড কম ব্যবহার, সিলেকশন বালু না দেওয়া, নিম্নমানের কংক্রিট ও সিমেন্ট কম ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম হচ্ছে। হাঁটুপানির মধ্যে ঢালাই করা হচ্ছে, ঢালাই খোলার পর বিভিন্ন স্থানে রড দেখা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ১২ মিলিমিটার রডের পরিবর্তে ৮ মিলিমিটার রড ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কারণে স্থানীয়রা কয়েকবার নির্মাণকাজ বন্ধ করলেও ঠিকাদার কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে ড্রেন নির্মাণকাজ মানহীন ও ধীরগতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। নির্মাণ চলাকালে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত থাকেন না। মিক্সার মেশিন ছাড়া হাতে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে, ফলে কাজের গুণগত মান অত্যন্ত নিম্ন এবং ডিজাইন বহির্ভূত।
সোনাইমুড়ী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার জানান, গত ৩ আগস্ট তিনি এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠালেও কোনো সাড়া মেলেনি।
সোনাইমুড়ী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) নুরুল আলম মানিক বলেন, তাদের কাছে এই কাজের কোনো সিডিউল ও ডিজাইন নেই; তিনি পৌরসভা থেকে মৌখিকভাবে তদারকি করছেন। ড্রেন নির্মাণ শেষে পৌর কর্তৃপক্ষ কাজটি বুঝে নেবে। তবে তিনি ড্রেন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা স্বীকার করেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিদি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আবু তাহেরের বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি; প্রকল্প এলাকাতেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
সোনাইমুড়ী উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, জনস্বাস্থ্য বিভাগের অর্থায়নে পৌরসভার ড্রেন নির্মাণকাজ চলছে। তিনি দাবি করেন, নির্মাণকাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। “কেউ পৌর প্রশাসক বা নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করলেও তাতে কোনো কাজ হবে না”—বলে তিনি জানান, তিনি কাউকে তোয়াক্কা করেন না।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নাছরিন আক্তার বলেন, ড্রেন নির্মাণে অনিয়ম হচ্ছে—এটি সত্য। কয়েকবার ঠিকাদারকে কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও সে শোনেনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হলেও তারা কর্ণপাত করেননি। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কাজ বন্ধ করতে বলা হলেও ঠিকাদার তা উপেক্ষা করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নোয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্মাণকাজে অনিয়মের খবর তিনি শুনেছেন। অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রকল্প এলাকায় লোক পাঠানো হয়েছে।