Image description

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গুমের দুই মামলায় দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ১৫ সেনা কর্মকর্তার আদালতে হাজির করা হবে। আজ বুধবার সকালে তাদের ট্রাইব্যুনাল-১-এ হাজির করার কথা রয়েছে। এর আগে গত ৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

আজ বুধবার সকাল ৬টায় অভিযুক্ত ওই সেনা কর্মকর্তাকে আনার কথা থাকলেও এখনও তাদের হাজির করা হয়নি। তবে ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এরই মধ্যে এসে উপস্থিত হয়েছেন।

এদিকে, সকাল ৬টার আগেই ট্রাইব্যুনালের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা দেখা যায়। ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, এপিবিএনের বিপুলসংখ্যক সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে।

গুমের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তৎকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিক, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ ডিজি এবং র‌্যাবে কর্মরত তৎকালীন সামরিক অফিসারসহ মোট ২৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো পৌঁছে দেওয়ার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় বাহিনীতে কর্মরত ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আর তাদের মধ্যে এলপিআরে থাকা মেজর জেনারেল কবীরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, সেনাবাহিনী দ্ব্যর্থহীনভাবে বিচারের পক্ষে ‘নো কম্প্রোমাইজ উইথ ইনসাফ’। আমরা বিশ্বাস করি, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছে।

এরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ক্যান্টমমেন্টের এমইএস বিল্ডিং নম্বর-৫৪ বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে।

এদিকে, সেনা অফিসাররা ট্রাইব্যুনালে আজ উপস্থিত না হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী সংবাদমাধ্যমে আত্মসমর্পণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন। আসামিরা ট্রাইব্যুনালে হাজির হলে ট্রাইব্যুনাল তাদের জামিনও দিতে পারেন বা কারাগারেও প্রেরণ করতে পারেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী সম্ভব। বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইন এমনকি আর্মি ও নেভি অ্যাক্ট এবং এয়ার ফোর্সের নিজস্ব আইনে এর বিধান নেই। এটি একটি স্পেশাল ল’। আর দ্বিতীয়ত এ ট্রাইব্যুনালের এই আইনটা আমাদের সংবিধান দ্বারা প্রটেক্টেড।

আসামিদের বিরুদ্ধে জেআইসি তথা আয়নাঘর এবং টিএফআই তথা র‌্যাব আয়নাঘরের মাধ্যমে মোট ৩৪টি গুমের ঘটনা সংঘটনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে র‌্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) সেলে আটকে রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৭ জন এবং জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বন্দি রেখে নির্যাতনের মামলায় ১৩ জন আসামি। এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হলে তা আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।