Image description

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সহকারী পরিচালক থাকাকালীন কেনাকাটায় প্রায় দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সংস্থাটির তৎকালীন সহকারী পরিচালক সাবের মাহমুদকে শাস্তি হিসেবে রংপুর সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছিল। সেই ঘটনার বছর না পেরোতেই আবারও শিক্ষা ক্যাডারের এ কর্মকর্তাকে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে।

যদিও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বদলি নীতিমালার ৪.৩ এর (খ) অনুযায়ী শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক/কর্মকর্তাগণ একই কর্মস্থলে ২ (দুই) বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে অন্যত্র বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সাবের মাহমুদের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা উপেক্ষা করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে শিক্ষা ক্যাডারের ১৭ কর্মকর্তাকে বদলি ও সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন ৩০ ব্যাচের সাবের মাহমুদও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর শিক্ষা ক্যাডারের ৩০ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. সাবের মাহমুদকে রংপুর সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছিল। ১১ মাসের ব্যবধানে সেই সাবেরকে আজ বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ঢাকার ইডেন কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদে বদলি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (সরকারি কলেজ-১) খোদেজা খাতুন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সাবের মাহমুদ ১১ মাসের ব্যবধানে কীভাবে দুইবার বদলি হলো সেটি আমার জানা নেই। আমরা অনেক বদলি নিয়ে কাজ করি। কিছু ভুল হয়ে থাকতে পারে। বদলির দুটি পরিপত্র দেখার পর কীভাবে এটি হয়েছে তা বলা যাবে।’

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন মো. সাবের মাহমুদ। তার স্ত্রী বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তা। দুই পরিচয় ব্যবহার করে ব্যানবেইসে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। দীপু মনির সঙ্গে বিভিন্ন মিছিলেও অংশ নিতে দেখা গেছে তাকে।

 
দীপু মনির সঙ্গে মো. সাবের মাহমুদ

 

সাবের মাহমুদের বিরুদ্ধে ব্যানবেইস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ৪৩ কর্মকর্তা শিক্ষা সচিব বরাবর অভিযোগ জমা দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর ওই অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগে বলা হয়, ‘ব্যানবেইসের উপ-পরিচালক (অর্থ) মো: ইব্রাহীম খলিল ও সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-২) সাবের মাহমুদ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইউআইটিআরসিইসমূহে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নাম করে নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে ১২৫ সেন্টারের প্রতিটিতে দেড় লাখ টাকা করে সর্বমোট ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকা তাদের নির্ধারিত ঠিকাদারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন। তাদের নির্ধারিত ঠিকাদারের নিম্ন মানের পণ্য গ্রহণে উপজেলা কার্যালয়সমূহকে বাধ্য করায় রাষ্ট্রীয় অর্থের অপব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মন্ত্রীর প্রভাব বিস্তারের ফলে সে সময় তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নিম্ন-মানের পণ্য সরবরাহ করার কারণে এর মধ্যে কিছু কিছু সেন্টারের সিসি ক্যামেরা অচল হয়ে পড়েছে।’

অভিযোগে বলা হয়, ‘মো: ইব্রাহীম খলিল ও সাবের মাহমুদ ইউআইটিআরসিই কার্যালয়সমূহকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কোডে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে মালামাল সরবরাহ ব্যতিত অথবা নামমাত্র কাজ সম্পাদন করে তাদের নির্ধারিত ভেন্ডরকে বিল প্রদানে মাঠ পর্যায়ের সহকারী প্রোগ্রামারদের বাধ্য করেন। ইউআইটিআরসিই-এর কম্পিউটার, এসি, জেনারেটর যথাযথভাবে মেরামত না করেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাদের নির্ধারিত ঠিকাদারকে বিল পরিশোধে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বিল প্রদানে বাধ্য করেন। এছাড়াও ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেনারেটর মেরামত নিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণকে বিভিন্ন নির্দেশনার নাম করে ব্ল্যাকমেইল করা হয়। অন্যায়ভাবে বিল পরিশোধ না করলে বিভিন্নভাবে হয়রানির হুমকি দিয়েছেন।’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মাউশির এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সাবের মাহমুদ ব্যানবেইসের কর্মচারীদের মা-বাবা তুলে গালি-গালাজ করতেন। তার বিরুদ্ধে ব্যানবেইসের অফিস সহকারী দিদার হোসেন সাবেক মহাপরিচালক লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি ছাত্রলীগ ও তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু খাটিয়ে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ব্যানবেইসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিতভাবে হুমকি দিতেন।’

আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা দুই বছরের আগে বদলির সুযোগ পান না। অনেকে বদলি জরুরি হলেও বছরের পর বছর তারা এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অথচ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা পরিচয় দেওয়া সাবেররা ১১ মাসের মাথায় দুইবার বদলির সুযোগ পান। এর দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে। সাবেরকে যারা বদলির সুযোগ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া জরুরি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাবের মাহমুদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।