Image description
বল সরকারের কোর্টে ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর হবে জুলাই সনদ

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে শেষ পর্যন্ত একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। নানা পথ আর মতের সন্ধান দিলেও অভিন্ন পথের দিকে যেতে পারেনি তারা। আইনি মারপ্যাঁচ, আদর্শগত বিভেদ আর ইগোর কারণে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে মূল্যায়ন করেছেন আলোচনায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন দলের নেতারা। এ অবস্থায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে। অন্যদিকে কমিশন দলগুলোকে এক কাতারে আনতে ব্যর্থ হয়ে এখন দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছে সরকারের ওপর। সরকারকেই এখন পথ খুঁজতে হবে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের। তবে ওই পথে সব রাজনৈতিক দল হাঁটবে কি না সে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি কোনো দলের পক্ষ থেকে। এদিকে আগামী ১৫ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরিত হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সবমিলিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরই মধ্যে কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে রাজপথে নামার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ইস্যুর বলটি এখন সরকারের কোর্টে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে অন্তর্বর্তী সরকার দুই ধরনের চাপে পড়েছে। প্রথমত-গণভোট আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক করা। দ্বিতীয়ত-অন্যথায় রাজপথে আন্দোলনের চাপ।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বুধবার প্রায় মধ্যরাতে শেষ হওয়া সংলাপে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে। ওই বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। যারা গণভোট আগে চাচ্ছে তারা আসলে নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আগামী মাসেই (নভেম্বর) গণভোট অনুষ্ঠানের দাবি জানানো হয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া গণভোটের দিনক্ষণ মানবে কি না সে প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেয়নি দলটি। তারা জানিয়েছে, আমরা এ নিয়ে (সরকারের সিদ্ধান্ত) অপেক্ষা করছি। সামনের দিন বলে দেবে কী করা যায়। এই ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আলোচনার শেষ দিনে এসে নিজেদের অবস্থানের পরিবর্তন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি আগে নির্বাচনের দিন গণভোটের কথা বললেও এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে ওই নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে।

ঐকমত্যে ব্যর্থ হওয়া প্রসঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, কমিশন যদি আরও এক মাস এভাবে আলোচনা করেন, কোনোভাবে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারব না। রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মতকে একমত করতে কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যেভাবে ভিন্নমত দেখলাম। সর্বশেষ দিনে জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদের পক্ষে গণভোট। তারাও দেখলাম যে ইউটার্ন করেছে। তারাও এখন বলছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট। আমার বাংলা (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, কিছু কিছু শক্তি বা ব্যক্তি আছেন, তারা আসলে বিভেদ চায়, অনৈক্য চায় এবং একটা হাঙ্গামা ও বিপর্যয় চায়। আমাদের এই ইগো সংকটের কারণে মনে হচ্ছে, পরোক্ষভাবে আমরা ওই সীমান্তের ওপারের ইচ্ছাটাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তি যদি রচনা করতে চাই সেটা তো সেমিলটেনিয়াস ইলেকশনের মধ্যে হতে পারে। এজন্যই তো আমরা আইনগত ভিত্তি মনে করছি এবং জনগণের সম্মতি এটা।

একটা বিশাল নির্বাচনি আয়োজনের মধ্যে যেটা আছি সেরকম আরেকটি আয়োজন যদি তার আগে করি এটা নির্বাচনকে বিলম্বিত করার মতো একটা প্রয়াস হবে বলে আমরা মনে করি। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমাদের স্ট্যান্ডিং হচ্ছে গণভোট হবে। এ ব্যাপারে আমরা একমত সবাই। কিন্তু গণভোটটি নভেম্বরের শেষের দিকে যদি করা যায়। কারণ আমাদের কাছে রেকর্ড আছে বাংলাদেশেই ১৯ দিনের ব্যবধানেও গণভোট হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানেও গণভোট হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে এবং নভেম্বরের ভিতরেই জুলাই সনদের ওপর আমাদের গণভোট হবে। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, এমন প্রক্রিয়ায় যাওয়া ঠিক হবে না, যাতে সংস্কারগুলো ভবিষ্যতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বা বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংস্কারকে টেকসই করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে গণভোট গুরুত্ব হারাবে।

১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হবে জুলাই জাতীয় সনদ

এদিকে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫, ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হবে। জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে কমিশনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের ৫টি বৈঠকে পাওয়া মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে আশা প্রকাশ করা হয় যে, বিশেষজ্ঞরা এবং রাজনৈতিক দলসমূহ থেকে পাওয়া অভিমতগুলো বিশ্লেষণ করে খুব শিগগিরই বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্ত করা জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।