বৃহস্পতিবার (০৯ অক্টোবর) টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন উপলক্ষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এ টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষিত সবাইকে ‘বিভ্রান্ত না হওয়ার’ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ টিকায় একই সাথে প্রোটিন ও শর্করা থাকায় দুটি উপাদানই শরীরে টাইফয়েড রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তাই অন্যান্য টাইফয়েড টিকার তুলনায় এটি উন্নত এবং বেশি কার্যকর। বাংলাদেশে এ টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগও হচ্ছে না।
দেশে টাইফয়েড সংক্রমণ কমিয়ে আনতে এ প্রথম 'টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন' দেয়া হচ্ছে এ কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন,
এ টিকা নিয়ে কোনো প্রকার সংশয় বা বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই। এর আগে যেসব দেশে এ টিকা দেয়া হয়েছে সেখানে শিশুদের মধ্যে কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া অথবা অসুস্থতার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।
সরকার দেশের শিশুদের নিরাপদ ও কার্যকর টিকাদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সামান্যতম সন্দেহ বা ঝুঁকি থাকলে সেই টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত সরকার কখনোই নেয় না। টাইফয়েড টিকা এবং ইপিআইয়ের সকল টিকা সঠিক তাপমাত্রায় পরিবহন এবং সংরক্ষণ করা হয়। তাই এ টিকা নিয়ে কোনো সংশয় বা বিভ্রান্ত হবার অবকাশ নেই।
গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ স্টাডি’র বরাত দিয়ে সায়েদুর রহমান বলেন, ২০২১ সালে বিশ্বে ৭০ লাখের বেশি মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়, মৃত্যু হয় ৯৩ হাজারের। মৃতদের একটা বড় অংশ দক্ষিণ এশিয়ায়।
টিকা নেয়ার পর প্রতিক্রিয়া -
সায়েদুর রহমান বলেন, টাইফয়েড টিকা নেয়ার পর অন্য টিকার মতই সামান্য প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
টিকা দেয়ার জায়গায় লালচে হওয়া, সামান্য ব্যথা, মৃদু জ্বর, ক্লান্তি ভাব হতে পারে; এগুলো এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় সময় দেখা যায় একই সাথে অনেক কিশোর কিশোরী অসুস্থতা বোধ করছে বা অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘ম্যাস সাইকোজেনিক ইলনেস’ বলে। যা টিকা গ্রহণের আগে বা পরে মানসিক ভীতিজনিত কারণে হয়। ভীতিজনিত এই প্রতিক্রিয়ার সাথে টিকাজনিত অসুস্থতার কোনো সম্পর্ক নেই। আর এই টিকায় শরিয়ত নিষিদ্ধ কোনো উপকরণ নেই, টাইফয়েড টিকা সৌদি হালাল সেন্টারের হালাল সনদপ্রাপ্ত বলেও জানান তিনি।
কবে থেকে দেয়া হবে এ টিকা-
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আগামী রোববার থেকে এক মাসব্যাপী দেশের ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রতিটি শিশু-কিশোরকে টাইফয়েড টিকা দেয়া হবে।
সায়েদুর রহমান বলেন,
সারা দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিশু-কিশোরদের টাইফয়েড টিকা দেয়া হবে। টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করলে এ জ্বরের আক্রান্তের হার কমে আসবে।
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিশু-কিশোরদের টাইফয়েড টিকা দেয়া হবে এ কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এবারের ক্যাম্পেইনে এক মাসব্যাপী দেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রতিটি শিশু-কিশোরকে এক ডোজ করে টাইফয়েড টিকা দেয়া হবে।
এদিকে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান জানান,
ঢাকা জেলায় মোট ১০ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪২ জনকে টাইফয়েড টিকা দেয়ার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় রেজিস্ট্রেশন করেছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৭৭ জন। ১ ডোজ টিকা আনুমানিক ১০-১২ বছর সুরক্ষা প্রদান করবে।
তিনি আরও বলেন, টাইফয়েডের এই টিকা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই, পৃথিবীর ২১টি দেশে এ টিকা চলমান রয়েছে। এছাড়াও ন্যূনতম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়া বড় কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।