
ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক ১০ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সরকার। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এই ব্যয় মেটাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) ও বহুজাতিক সংস্থার তহবিল ব্যবহারের কথা বিবেচনা করছে সরকার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন মহাসড়ক দেশের ব্যবসাবাণিজ্যে গতি আনবে, শিল্পকারখানার উৎপাদন ও পণ্য পরিবহন সহজ করবে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে। তবে এর বিপরীতে রয়েছে বিপুল ব্যয়, দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া এবং অতীতে চার লেনের কাজ নিয়ে হওয়া সমালোচনা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের বিভিন্ন আঞ্চলিক অফিসের তৈরি করা আগের হিসাব অনুযায়ী ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা। নতুন পরিকল্পনায় ব্যয় কিছুটা কম হলেও মহাসড়কের গুরুত্বের কারণে এতে অনেক নতুন বৈশিষ্ট্য যুক্ত হওয়ায় ব্যয় এখনো অনেক বেশি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের ডান দিকে সওজ প্রায় ৯০ শতাংশ জমির মালিক হলেও ব্যয় খুব একটা কমানো সম্ভব হয়নি। এ মহাসড়ককে ২০১৬ সালে চার লেনে উন্নীত করতে যেখানে ব্যয় হয়েছিল মাত্র ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, সেখানে সর্বশেষ উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৬ গুণ বেশি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় সম্প্রতি সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মহাসড়ক হবে ছয় লেনের অ্যাকসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে অর্থাৎ শুল্ক পরিশোধ করে এই মহাসড়ক ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি দুই পাশে দুই লেনের সার্ভিস রোড নির্মাণ করা হবে, যাতে সব ধরনের যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। এ ছাড়া মহাসড়কে ছয়টি মাল্টি-লেভেল উড়াল ক্রসিং এবং ২০টিরও বেশি উড়াল সার্ভিস ইন্টারচেঞ্জ নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাখা হবে তিন মিটার প্রশস্ত জরুরি লেন এবং আধুনিক মাল্টি-লেয়ার ইন্টারচেঞ্জ।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ও সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাব্বির হাসান খান বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রাণ হিসেবে বিবেচিত এই মহাসড়ককে সর্বাধুনিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যেই এমন নকশা তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এটি হবে একটি পূর্ণাঙ্গ শুল্ক মহাসড়ক, যাতে দ্রুত ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা যায়। তিনি আরও জানান, মহাসড়কের একটি অংশ পিপিপি নির্মাণের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এডিবি বর্তমানে কোন অংশ পিপিপির আওতায় এবং কোন অংশ ঋণ সহায়তায় নির্মিত হবে সে বিষয়ে কাজ করছে। সওজ সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের উন্নয়ন প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগবে। ২০১৯ সালে এ মহাসড়কে দৈনিক গাড়ি চলাচলের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৪৮২, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৫০১। ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ মোকাবিলায় এ উন্নয়ন প্রকল্পকে সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।