
বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের পুরোনো পদ্ধতি পরিবর্তন করে নতুন করে সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। শিক্ষক নিবন্ধন সনদের পরিবর্তে এখন থেকে বিসিএসের আদলে সরাসরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এই নতুন নিয়ম কার্যকর করতে ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০২৫’-এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এটি আইন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।এই নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুটি ধাপ থাকবে নির্বাচনী বা বাছাই পরীক্ষা : এটি হবে প্রথম ধাপ। এটি বিসিএস পরীক্ষার মতো এমসিকিউ ধরনের হতে পারে। এ পরীক্ষার নম্বর ও বিষয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করবে। নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে থেকে শূন্য পদের চেয়ে দ্বিগুণ প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হবে। এই পরীক্ষা ২০ নম্বরের হবে। উভয় ধাপেই পাস করতে হলে প্রার্থীকে ন্যূনতম ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। তবে চূড়ান্ত মেধাতালিকা তৈরি হবে শুধু নির্বাচনী পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে। মৌখিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে এবং এতে শূন্য পদের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ প্রার্থীও অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তিন বছরের জন্য একটি সনদ দেওয়া হবে। এই সনদ প্রাপ্তির পর প্রার্থীরা সরাসরি নিয়োগের জন্য যোগ্য হবেন।
শিক্ষক নিয়োগের বয়সসীমা ৩৫ বছরই থাকছে। এটি নিয়ে কিছু প্রার্থীর মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে, কারণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেরিতে প্রকাশিত হলে অনেক যোগ্য প্রার্থী বয়সসীমার কারণে আবেদন করতে পারবেন না। তবে প্রার্থীরা আশা করছেন, নতুন এই পদ্ধতি কার্যকর হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা কমবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমান ব্যবস্থায় শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকা সত্ত্বেও প্রার্থীদের নিয়োগ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। এনটিআরসিএ-এর মাধ্যমে সুপারিশ পাওয়ার পরও অনেক জটিলতা তৈরি হয়। নতুন বিধিমালার লক্ষ্য হলো এই দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়াকে সহজ করা। এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই পরিবর্তনের ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা কমবে এবং পুরো প্রক্রিয়াটি তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর করা হবে, যাতে আইনি জটিলতাও কমে আসে।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, বিসিএসের আদলে সরাসরি পরীক্ষা হলে যোগ্যতার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে, যা এতদিন বিভিন্ন ধরনের প্রভাব বা সুপারিশের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছিল।