Image description
গোদাগাড়ীর প্রেমতলী তদন্তকেন্দ্র এসআই’র ফোন থেকে প্রতিপক্ষকে হুমকি দেন সাবেক ইউপি সদস্য

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুলিশের এক পরিদর্শক ও উপপরিদর্শকের (এসআই) ঘুসগ্রহণ, চাঁদাবাজি, অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিসহ নানা কার্যক্রমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। এ দুজন গোদাগাড়ীর প্রেমতলী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে কর্মরত। এই তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এসএম মাকসুদুর রহমান ও এসআই বরন সরকার মানুষকে হয়রানি করে যাচ্ছেন। টাকা ছাড়া তারা কিছুই বোঝেন না। অভিযোগ পেলেই টাকার বিনিময়ে করেন পক্ষপাতিত্ব। এ নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

স্থানীয়রা বলছেন, পরিদর্শক মাকসুদুর রহমানের আশকারায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এসআই বরন সরকার। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা, আওয়ামী দোসর বানিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের মতো অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে। ইনচার্জ মাকসুদুর প্রায় সব অভিযোগই তদন্তের দায়িত্ব দেন এসআই বরন সরকারকে।

আর অভিযোগ পেলেই অনৈতিক সুবিধা নিয়ে একটি পক্ষের হয়ে অবস্থান নেন বরন সরকার। বরনের মোবাইল ফোন থেকে কথা বলার সময় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক একজন সদস্য এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন-এমন ফোনকল রেকর্ডও পাওয়া গেছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মামলা কিংবা গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে এ দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রচুর টাকা কামিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক ও গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, ‘বরন সরকার মানুষের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন। প্রেমতলী-বসন্তপুর রাস্তায় চলাচল করা সাধারণ মানুষকেও রাতের বেলা তল্লাশির নামে হয়রানি করেন। ওসিকে জানিয়েছি। ওসিও বলেছেন তাদের খারাপ আচরণের বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ওপরে জানাবেন। কিন্তু কী জানিয়েছেন, জানি না। এখনো তাদের এরকম কার্যক্রম চলছে।’ উপজেলার বড়গাছি গ্রামের আজিজুল হাসান নামের এক ব্যক্তি জানান, সম্প্রতি মাটিকাটা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য উকিল আলীর ভাই নবাব আলী তাকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মারধর করে। এ ব্যাপারে তিনি পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে অভিযোগ দিলে ইনচার্জ মাকসুদুর রহমান তা তদন্তের দায়িত্ব দেন এসআই বরন সরকারকে। সোমবার দুপুরে বরন সরকারের মোবাইল ফোন থেকে তার কাছে একটি কল আসে। তখন এসআই-এর ফোন থেকে কথা বলেন ইউপি সদস্য উকিল। অভিযোগ দেওয়ায় উকিল তার ওপর চড়াও হন এবং তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন।

আজিজুল বলেন, ‘হুমকি দেওয়ার রেকর্ড আমার কাছে আছে। পুলিশের মোবাইল থেকে ফোন করে প্রতিপক্ষ এভাবে হুমকি দেবে, এটা তো হতে পারে না। এর মানে, পুলিশ একটি পক্ষের হয়ে অবস্থান নিয়েছে। আমি তো এখন ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারি না।’

দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন বিদিরপুর হাফেজিয়া মাদ্রাসা মোড়ের বাসিন্দা তৈয়বুর রহমানও। তিনি বলেন, সম্প্রতি জমিজমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমাদের ডেকেছিল। এরপর দুজনে মিলে আমাদের সঙ্গে এত বাজে এবং নোংরা ব্যবহার করলেন, তা বলার মতো না। মনে হচ্ছিল, সম্পত্তি তাদের পৈতৃক, কাগজপত্রের কোনো দাম নেই।

সম্প্রতি উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের গোলাম হাসান নামের এক ব্যক্তি পরিদর্শক মাকসুদুর রহমান ও এসআই বরন সরকারের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, তিনি ১৮ জুলাই নিজের জমিতে গাছ লাগাচ্ছিলেন। এ নিয়ে আরিফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তার নামে তদন্তকেন্দ্রে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে ডাকলে তিনি গেলে এসআই বরন সরকার আরিফুলের পক্ষ নিয়ে তাকে ভয়ভীতি ও গালাগাল দিয়ে বলেন, জমিতে আর যাবি না, গেলে তোকে লকআপে ভরে মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেব। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কারণ, সে পুলিশকে ম্যানেজ করে ফেলেছে।’

অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘ইনচার্জ এসএম মাকসুদুর রহমান ও এসআই বরন সরকার মাদকদ্রব্যের গডফাদারের সঙ্গে ওঠাবসা করেন এবং কেউ তাদের কথা না শুনলে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেন। তারা যেদিকে টাকা পান, সেদিকেই ঢলে পড়েন। ফলে জনসাধারণ ন্যায়বিচার পাচ্ছে না।’ তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই বরন সরকার বলেন, ‘আমি কাউকে গালাগালি করি না। আমার ফোন থেকে কাউকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও সঠিক না।’ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলা বা আওয়ামী লীগের দোসর বানিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক এসএম মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে, সেগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। কাউকে ভয়ভীতি দেখানোর সুযোগ নেই।’

রাজশাহীর এসপি ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘লিখিত অভিযোগটি এখনো দেখা হয়নি। আর যেসব অভিযোগের কথা বলা হচ্ছে, এগুলো হলে তো খারাপ। পুলিশের ফোন থেকে কেউ হুমকি দেবে, এটাও তো হয় না। অভিযোগগুলো আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’