Image description
নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ

নতুন মুদ্রানীতিতে সুদহার কমানোর কোনো আভাস মিলছে না। আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে আগামী ৬ মাসের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার কমাতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু সে দাবি আমলে নিচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি কমে জুনে ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ অবস্থায় বিনিয়োগ বাড়াতে সুদহার কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। তবে নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত প্রধান নীতি সুদহার (রেপো) ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখতে পারে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৯ শতাংশ। প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা প্রকৃত অর্জনের চেয়ে বেশি হলেও গত অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। আর সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে ২০ শতাংশ।

এবারও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের চেয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রধান অগ্রাধিকার থাকছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে আগামী বছরের জুন নাগাদ গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। আর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনেই এসেছে বিনিয়োগ কমে গেছে। এর অনেক কারণ রয়েছে। তবে প্রধান কারণ উচ্চ সুদ। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ না কমালে বিনিয়োগ বাড়বে না, ব্যবসা-বাণিজ্য থমকে যাবে। বর্তমানে ১৫-১৬ শতাংশ সুদ দিয়ে কেউ ব্যবসা করতে পারবে না। দুর্বল ব্যাংকের সুদের হার তো আরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত নীতি সুদহার কমানো। তাহলে বাণিজ্যিক ব্যাংকেরও সুদহার কমে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ গত বছরের ২২ অক্টোবর প্রধান নীতি সুদহার রেপো ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে। মূলত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে রেপোর বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়। অন্যদিকে নতুন মুদ্রানীতিতে আন্তঃব্যাংক ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। অবশ্য চলতি বছরের ১৫ জুলাই স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৮ শতাংশে নামানো হয়েছে। ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে টাকা রাখার ক্ষেত্রে এ সুদহার প্রযোজ্য হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি ওঠে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। এরপর থেকে প্রতি মাসে কমে জুনে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে। মূল্যস্ফীতি কমে আসার প্রধান দুটি কারণ হলো, ডলারের দরে স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ভালো হওয়া। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন উৎস থেকে কম সুদের ঋণের কারণে জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ৩১ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আপাতত বড় কোনো পরিশোধের চাপ নেই। ডলারের দর কমতির দিকে ছিল। তবে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স কমে আসতে পারে বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে ১২২ টাকায় দর স্থিতিশীল রেখেছে। ফলে আপাতত দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সব মিলিয়ে মূল্যস্ফীতি কমার ধারাবাহিকতা বজায় থাকার আশা করা হচ্ছে।

জানুয়ারিতে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে জুন নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ছিল। তবে অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর আগে ডিসেম্বরেও একই রকম লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয় ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। সরকারি খাতে এবার ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হতে পারে ২০ শতাংশ। গত অর্থবছরের জন্য ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ ধরা হলেও জুন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর নাগাদ মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা সামান্য বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ ধরা হতে পারে। জুন পর্যন্ত মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ ছিল। তবে মে পর্যন্ত হিসাবে যা ৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে। মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কেনায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়ছে। আবার দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় ধার দেওয়া হয়েছে।