
আগে আমরা দেখেছি- যখনই দেশে কোনো সহিংসতা বা নেতিবাচক ঘটনা ঘটতো, তখন ক্ষমতাসীন দলের দিকে বিরোধী দল আঙ্গুল তুললে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তা হেসেই উড়িয়ে দিতেন। তাদের যুক্তি ছিল, আমরা নিজেরা সরকারে, দেশে অস্থিরতা আমরা কেন তৈরি করবো? আমাদের কী লাভ?
কিন্তু এখন আসলে ডিপ স্টেটের খেলাও পাল্টে গেছে। সরকারী দল সহিংসতা করে, যুদ্ধ করে, আগ্রাসন চালায়- কেননা তাতে চেয়ারটা বরং সুরক্ষিত হয়। কেননা অস্থিতিশীল পরিবেশ সরকারের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করে। কেননা আশংকা থাকে, যদি অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যেই সরকার পরিবর্তিত হয় তাহলে দেশ আরো জটিলতার দিকে চলে যেতে পারে।
এই সময়ের নেতানিয়াহুর কথাই ধরুন না কেন। সে টিকে আছে পুরোপুরি যুদ্ধের ওপর। এই যে গাজায় এত নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, এর মূল কারণ হলো, তার সরকারটা কোয়ালিশন সরকার। এ ধরনের সরকার এমনিতেও দুর্বল হয়। কিন্তু নেতানিয়াহুর লাক ফেবার করেছে কারণ তার কোয়ালিশনে কিছু কট্টর ডানপন্থী দল আছে। যারা তাকে সমর্থন দিচ্ছে শুধু এই জন্য যে নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ডানপন্থী দলগুলো গাজার ২১ লাখ মানুষকে পারে তো ৫ মিনিটে মেরে ফেলে।
এই কারণেই- যুদ্ধবিরতির জন্য এত এত চাপের পরও নেতানিয়াহু সাড়া দিচ্ছেন না, কারণ তিনি জানেন, যুদ্ধ বন্ধ করলেই ডানপন্থী দলগুলো সমর্থন তুলে নিবে আর তিনি গদি হারাবেন। তাই তিনি কারণে অকারণে যুদ্ধ করছেন, যুদ্ধবিরতি করছেন আবার কারণ ছাড়াই ভাংছেন, মানুষ মারছেন। গাজায় একটু কমালে লেবাননে হামলার মাত্রা বাড়াচ্ছেন, আবার কখনো ইয়েমেনে আক্রমন করছেন।
প্রকৃত সত্য হলো, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে অনেকগুলো দুর্নীতির মামলা ইসরাইলের আদালতে চলমান। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণও আছে। কিন্তু তিনি ধরা দিচ্ছেন না। যুদ্ধ, ইসরাইলের নিরাপত্তা সংকট- এসব অজুহাত দিয়ে আদালতে হাজির হওয়া থেকে বিরত আছেন আর তাই বিচারও পিছিয়ে যাচ্ছে।
আজকে বহুদিন পর তার একটি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এবারও সেই শুনানি স্থগিত করে দিয়েছে আদালত। কারণ হিসেবে আদালত বলছেন, সিরিয়ায় ইসরাইলের হামলার কথা। নেতানিয়াহু নিজেও এই শুনানির তারিখের কথা জানতেন। আর সে কারণেই তিনি এই হামলা চালিয়েছেন।
বাহ্যত সিরিয়ার দ্রুজদের নিরাপত্তা দেয়ার বাজে অজুহাত সামনে এনে তিনি এই হামলা চালাচ্ছেন। প্রকৃত কারণ হলো, তিনি তার মামলার কাজ থামাতেই এই হামলা চালিয়েছেন। বিশ্ববাসী যখন জোলানি, নেতানিয়াহু আর আমেরিকার ন্যারেটিভ নিয়ে ব্যস্ত, তখন নেতানিয়াহু আদালতের কাছ থেকে আরো কিছুটা সময় পেয়ে এখন নিশ্চিন্তে আরো কিছুদিন কাটিয়ে দেবেন।
সরকার, বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার ভূমিকা, ন্যারেটিভ আর তাদের মাঠের কার্যক্রম- এগুলো প্রতিটি একদমই আলাদা ও স্বতন্ত্র বিষয়। একটির সাথে একটি মিলিয়ে ভেবেছেন বা বিশ্বাস করেছেন- তাহলেই ফাঁদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এবার বাংলাদেশের পরিস্থিতিকেও এর সাথে মিলিয়ে ভাববেন কিনা তা যার যার বিবেচনার বিষয়।