Image description
সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী যাত্রীরা। চলমান কাজের কারণে ভাঙাচোরা এ সড়কে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা, যা সিলেট থেকে ঢাকা পৌঁছানোর নির্ধারিত সময়কে প্রায় দ্বিগুণ করে তুলেছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটি ব্যবহারকারীদের কাছে পরিণত হয়েছে এক ‘মহাযন্ত্রণায়’।

গত শুক্রবার মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে প্রায় ২৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়। এ জটে আটকা পড়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারের গাড়িবহরও। উপদেষ্টা গাড়িবহর নিয়ে হবিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়ে শুক্রবার বেলা ১১টায় ভৈরবে টোলপ্লাজা পার হওয়ার পরই ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েন। পরে প্রায় তিন ঘণ্টায় দুপুর পৌনে ২টায় উপদেষ্টার গাড়িবহরটি আশুগঞ্জ উপজেলা অংশের ১০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে সক্ষম হয়।

জানা যায়, এ সড়কে দুটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ চলমান। দুটি প্রকল্পের গতিই মন্থর। এ উন্নয়ন কাজের কারণে সড়কে বেড়েছে যানজট। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ অংশে সড়কের ওপর অবৈধ দোকানপাট এবং যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে। বৃষ্টির দিনে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মাটি কাদায় রূপ নেয়। ফলে সড়ক দিয়ে যান চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। এসব কারণেই যানজট তীব্র আকার ধারণ করেছে।

দুই উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ক ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজও চলছে। তবে দুই প্রকল্পের কাজই চলছে একেবারে ধীরগতিতে। মাঝে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চার লেনের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল।

এদিকে বড় প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এ সড়কে এখন জরুরি সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে ভাঙাচোরা সড়ক দিয়েই যান চলাচল করছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অংশের চলমান কাজের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সড়কের একপাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করে। ফলে এ অংশে সবসময়ই লেগে থাকে যানজট।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট অংশের হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে শেরপুর পর্যন্ত অংশ ঘুরে দেখা যায়, মহাসড়কটির বিভিন্ন স্থানে একপাশ বন্ধ রেখে সম্প্রসারণ কাজ চলছে। বেশ কয়েকটি স্থানে চলছে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণকাজ। অনেক জায়গায় মাটি ভরাট ও জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। নির্মাণকাজের কারণে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়া সড়কের অনেক জায়গায় খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে বেড়েছে ভোগান্তি। বিভিন্ন স্থানে সড়ক দেবে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। আবার কোথাও পিচ সরে গিয়ে নিচের পাথর বেরিয়ে এসেছে। এসব কারণে যানবাহনের গতি কমে আসায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বাড়ছে দুর্ঘটনাও। ছয় লেনের কাজ চলমান থাকায় এখন ভাঙাচোরা অংশও সংস্কার করছে না সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং প্রকল্প সংশ্লিস্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল সড়কে এখন উন্নয়ন কাজ হচ্ছে না। সড়কের পাশে কাজ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার সড়ক পথে সিলেট মাজারে আসেন ইসমাইল হোসেন নামে এক বৃদ্ধ। তিনি বলেন, ঢাকা-সিলেট সড়কে যাতায়াত এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। পথে দুর্ভোগের শেষ নেই। বাসে ওঠার পর কখন গিয়ে সিলেট পৌঁছব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। সড়ক ভাঙার কারণে ঝাঁকুনি তো আছেই। তিনি বলেন, দুই বছর ধরে ছয় লেনের কাজ চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।

এ সড়কে চলাচল করা একাধিক বাসের চালক জানান, এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় খানাখন্দের কারণে যান চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। বিশ্বরোড মোড়ে প্রায় প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকে। তারা জানান, মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার; এ অংশজুড়ে আছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। যে কারণে এখানে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ নেমে আসে ১০ কিলোমিটারে। এ ১২ কিলোমিটার এলাকায় সবসময় দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে।

এ সড়কে দুর্ভোগে পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করে বাসচালক আব্দুর রহমান বলেন, ভাঙাচোরা সড়ক, চলমান উন্নয়ন কাজ ও বিভিন্ন স্থানে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠা দোকানপাটের কারণে সবসময় যানজট লেগেই থাকে।

এ প্রসঙ্গে সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন জানান, মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ হচ্ছে। দুই লেনের মহাসড়কটি ছয় লেন হচ্ছে। তাই পুরোনো সড়কে খুব বেশি ব্যয় করা হচ্ছে না। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে যতটুকু সংস্কার প্রয়োজন কেবল ততটুকু করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনের উন্নীতকরণের কাজ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হলেও দুই বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ। জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় কাজ হচ্ছে ধীরগতিতে। বর্তমান সড়কের দুপাশে ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে।

প্রকল্পের সিলেট অংশের প্রজেক্ট ম্যানেজার দেবাশীষ রায় কালবেলাকে বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ এখন পর্যন্ত ১৫-১৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা ছিল। এ কারণে কাজ আশানুরূপ এগোয়নি। তবে এখন জটিলতা অনেকটা কেটে গেছে। এখন দ্রুতগতিতেই কাজ এগিয়ে চলবে।’

এ প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২০৯ কিলোমিটার সড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ এবং সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ৫৬ দশমিক ১৬ কিলোমিটার চার লেনে উন্নীতকরণ করার কথা। আগামী বছরের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।

চার লেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন প্রকল্পের অধীনে থাকায় মহাসড়কটিতে নিয়মিত সংস্কার কাজ হয়নি। ফলে মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তত ৪ কিলোমিটার অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

চার লেন মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. শামীম আহমেদ বলেন, এখন পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। এরই মধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৬৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পুরো কাজ শেষ করতে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে।