Image description

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বোঝা— বাবার কাঁধে ছেলের লাশ। এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রফিকুল ইসলামের বাবা রইজুদ্দিন মিয়া।

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার উলাইল ইউনিয়নের রুপসা গ্রামে গিয়ে রফিকুল ইসলামের খোঁজ নিলে তার বাবা রইজুদ্দিন মিয়া এ মন্তব্য করেন।

রইজুদ্দিন মিয়া বলেন, রফিকুলের বয়সী কোনো ছেলেকে দেখলেই বুকটা কেঁপে ওঠে। মনে হয়, এই বুঝি আমার রফিক আসছে। তাকে ছাড়া দুটি ঈদ কাটালাম। তার শূন্যতা আমরা প্রতিদিন অনুভব করি। কোনো মতে বেঁচে আছি।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আন্দোলনে যায় রফিকুল। দুপুরে হঠাৎ শুনি গুলির শব্দ। কিছুক্ষণ পর রফিকুলের এক বন্ধু ফোনকল করে জানায়, ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে এবং হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। পরে আমি ছেলের মোবাইল ফোনে কল দিই। তখন একজন জানায়, রফিকুল মারা গেছে। যেসব মানুষ আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে, আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন।

রফিকুল ইসলামের মা চায়না বেগম বলেন, আমার ছেলে স্বপ্ন দেখত বিদেশে গিয়ে টাকা রোজগার করে ঘরবাড়ি বানাবে। মৃত্যুর দিন সকালে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছিলাম। পরে শুনি, পাটুরিয়া ঘাটে গোলাগুলি হচ্ছে। ওর বাবা ফোনকল দিয়ে বাড়ি আসতে বলেছিল। এরই মধ্যে শুনি, পুলিশ আসছে শুনে রফিকুল এগিয়ে যায়, আর তখনই গুলিতে প্রাণ হারায়। বিচার চাই, কিন্তু বিচার কোথায়? যে পুলিশ আমার ছেলেকে মারলো, তাকেই তো ধরা হচ্ছে না!

শহীদ রফিকুল ইসলামের ছোট বোন বকুল আক্তার বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। কিন্তু আমার ভাইকে গুলি করে হত্যার ১১ মাস পার হলেও বিচার হয়নি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন রফিকুল ইসলাম। এ সময় আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। পরে নৌ-পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিতে আহত রফিকুল ইসলামকে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা ঘাট এলাকার পুলিশ বক্স, নৌ-পুলিশ ফাঁড়িসহ বেশ কয়েকটি অস্থায়ী স্থাপনা ভাঙচুর করে।