
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন পরীক্ষার্থী। ফলাফল নিয়ে তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস কাজ করলেও ধীরে ধীরে অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। কারণ যারা পাস করেছে একাদশ শ্রেণিতে এখন তাদের ভর্তি হতে হবে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর মোর্চা আন্ত শিক্ষা বোর্ড বলছে, একাদশ শ্রেণিতে আসনসংখ্যার কোনো সংকট নেই। যে পরিমাণ শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে দেশের কলেজগুলোয়, তার দ্বিগুণ আসন খালি থাকবে। তবে পছন্দের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া নিয়ে সংকট থেকেই যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে সাধারণ কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৯ হাজার ৩১৪টি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আসন রয়েছে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪২টি।
আসনের মধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এক হাজার ৭২টি কলেজে রয়েছে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬৯টি আসন। রাজশাহী বোর্ডের ৭৫৫টি কলেজে রয়েছে তিন লাখ ৮৬ হাজার ৯০০টি আসন, কুমিল্লা বোর্ডে ৪৫৮টি কলেজে আসন রয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ১৯০টি, যশোর বোর্ডে ৫৭৫টি কলেজে আসন রয়েছে দুই লাখ ২০ হাজার ৯৩৯টি; আর চট্টগ্রাম বোর্ডে ৩০৫টি কলেজে আসন রয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫২৪টি।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৩৪৯টি কলেজে আসন রয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৮৮০টি, সিলেট বোর্ডের ৩২২টি কলেজে আসন রয়েছে এক লাখ ৪১ হাজার ১৩৮টি, দিনাজপুর বোর্ডে ৬৬১টি কলেজে আসন রয়েছে তিন লাখ ২৮ হাজার ৫৫৬টি, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৩১১টি কলেজে আসন রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৬৭টি।
মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দুই হাজার ৬৮২টি মাদরাসায় আসন রয়েছে তিন লাখ ১১ হাজার ৩৪১টি এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক হাজার ৮২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ৬১১টি।
এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট পাস করেছে ১৩ লাখ তিন হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী। অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আসন রয়েছে ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩৪২টি। যদি পাস করা সব শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় তার পরও আসন খালি থাকবে ১৪ লাখ ৬৪ হাজার ৯১৬টি। তবে সাধারণত দেখা যায়, প্রতিবছর এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ আর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় না। এ বছরও যদি সেটা হয় তাহলে খালি আসনের সংখ্যা আরো বাড়বে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মো. রিজাউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আমরা মিটিং করেছি। এ সপ্তাহে আরেকটি মিটিং করার কথা রয়েছে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ভর্তি নীতিমালা জারি করা হবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে আমরা চলতি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহ থেকে আবেদন গ্রহণ করতে চাই। এ ব্যাপারে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বুয়েট। আমরা তাদের সঙ্গেও কাজ করছি।’
অধ্যাপক রিজাউল হক আরো বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে যথেষ্টসংখ্যক আসন রয়েছে। পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও আসনের কোনো সংকট হবে না; বরং দ্বিগুণসংখ্যক আসন খালি থাকবে। কিন্তু সব শিক্ষার্থী তো নির্দিষ্ট কিছু কলেজে ভর্তি হতে চায়। তবে এ বছর এসএসসির ফলাফলের মাধ্যমে স্কুলগুলো একটা বার্তা পেয়েছে। আশা করছি কলেজগুলোও তাদের মান উন্নয়নে চেষ্টা করবে। আমরাও বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষার মান বাড়াতে ও মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করতে চেষ্টা অব্যাহত রাখব।’
সূত্র জানায়, পাস করা প্রায় সব শিক্ষার্থী চায় রাজধানীর নির্দিষ্ট নামিদামি কয়েকটি কলেজে ভর্তি হতে। কিন্তু রাজধানীতে পছন্দের ৩০টি কলেজে আসনসংখ্যা রয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার। এ ছাড়া রাজধানীতে বেশকিছু স্কুলসংযুক্ত কলেজ রয়েছে। ওই কলেজে সাধারণত ওই স্কুল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাই অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। এরপর কিছু আসন খালি থাকলে সেখানে বাইরের শিক্ষার্থীরা ভর্তির সুযোগ পায়। ফলে ওই কলেজগুলোয় খুব কমসংখ্যক বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে।
রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় ও জেলা শহরের দুই শতাধিক পছন্দের কলেজে সর্বোচ্চ লক্ষাধিক আসন রয়েছে। আর অর্ধশতাধিক পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠান ও স্বল্পসংখ্যক মাদরাসা রয়েছে শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায়। সব মিলিয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩০০-এর আশপাশে। আর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় মোট আসনসংখ্যা হতে পারে দুই লাখ।
এ বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন পরীক্ষার্থী। জিপিএ ৪ থেকে ৫-এর মধ্যে পেয়েছে চার লাখ ৪৪ হাজার ৩৭৮ জন পরীক্ষার্থী। এই ছয় লাখ শিক্ষার্থী দেশজুড়ে পছন্দের ৩০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবে। ফলে ভর্তিচ্ছূদের তুমুল প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।
আবার এসএসসি পাস করা সারা দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় একটি অংশ রাজধানীর কলেজগুলোয় পড়তে চায়। ফলে রাজধানীর কলেজগুলোর ওপর বাড়তি চাপ পড়বে। অবশ্য সম্পূর্ণ ভর্তি প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়ায় এসএসসি ও সমমানের নম্বর অনুযায়ী অর্থাৎ মেধার ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে।
জানা গছে, রাজধানীর শীর্ষ কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা কলেজে এক হাজার ২০০টি, নটর ডেম কলেজে তিন হাজার ২৭০টি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে এক হাজার ৭০৪টি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দুই হাজার ৩৭৬টি, হলি ক্রস কলেজে এক হাজার ৩৩০টি, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে দুই হাজার ২০০টি, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক হাজার ১২০টি, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে এক হাজার ১৪টি, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক হাজার ১৬৫টি এবং বিএএফ শাহীন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এক হাজার ২২০টি আসন রয়েছে।
এ ছাড়া ঢাকা সিটি কলেজে তিন হাজার ৭৬২টি, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজে এক হাজার ৯৮০টি, ঢাকা কমার্স কলেজে চার হাজার ৭০০টি, বাংলাদেশ নেভি কলেজে ৯৫০টি এবং শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে ৮৮০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এর বাইরে আরো বেশ কটি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির তীব্র প্রতিযোগিতা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—নটর ডেম কলেজ, হলি ক্রস কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সেন্ট গ্রেগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন দিতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে এই চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হবে। এসএসসির জিপিএ এবং ভর্তি পরীক্ষার ফলের সমন্বয়ে যারা সর্বাধিক নম্বর পাবে তারাই সুযোগ পাবে এই চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার।