
এনবিআরের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের ( র্যাপিড ) চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড . মো . আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন , রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কত টাকার দুর্নীতি , সেটার হিসাব করতে পারলে বোঝা যেত আসলে খরচ কত হয় । রাজস্ব খাতে দুর্নীতির অস্তিত্ব রয়েছে । ফলে এই খরচের হিসাবে উচ্ছ্বাস প্রকাশের কিছু নেই ।
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে , ২০২২- ২৩ অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা । এর বিপরীতে আদায় হয় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৮৫ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা । ওই অর্থবছরে শুল্ক অফিস , ব্রাসেলস , পুরস্কার , ব্যান্ডরোল , স্ট্যাম্প মুদ্রণসহ মোট প্রশাসনিক ব্যয় হয় ৯৮২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা । অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা রাজস্ব আদায়ে ব্যয় হয় ৩০ পয়সা । ওই অর্থবছরে এনবিআর প্রত্যক্ষ কর আদায় করে ১ লাখ ৮ হাজার ২০৪ কোটি ৯ লাখ টাকা । এ জন্য ব্যয় হয় ১৭৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা । অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকা আদায়ের বিপরীতে খরচ ১৭ পয়সা । অন্যদিকে পরোক্ষ কর আদায় হয় ২ লাখ ২০ হাজার ৬৮১ কোটি ৮০ লাখ টাকা । এ ক্ষেত্রে প্রতি ১০০ টাকা আদায়ে খরচ হয় ১৮ পয়সা ।
২০২২-২৩ টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ২ হাজার ৪৭৫ জন । যার মধ্যে কোম্পানি শ্রেণির করদাতার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৩ । এনবিআর বলছে , ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে চ্যালেঞ্জ ছিল ২২ টি । এর মধ্যে ৫ টি বাহ্যিক এবং ১৭ টি অভ্যন্তরীণ । বাহ্যিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ছিল রিজার্ভের স্বল্প প্রবাহ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পণ্যমূল্য হ্রাস-বৃদ্ধিজনিত অস্থিরতা, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে মিথ্যা ঘোষণার প্রবণতা, আন্তসংস্থা সমন্বয় ও সহযোগিতার অভাব এবং কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা ও স্বেচ্ছা পরিপালনের অভাব ।
অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ছিল পর্যাপ্ত অটোমেশনের সীমাবদ্ধতা , প্রশিক্ষক ও পর্যাপ্ত মানবসম্পদের অপ্রতুলতা , সঠিক ও যথাযথভাবে কর নির্ধারণ , ভৌত অবকাঠামো ও লজিস্টিকস সীমাবদ্ধতা , আধুনিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার অপর্যাপ্ত প্রয়োগ , আধুনিক পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিটের স্বল্প প্রয়োগ, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি ।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি ) ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ২০২৪-এর তথ্যমতে , যুক্তরাষ্ট্র , যুক্তরাজ্য , জার্মানি , জাপান , কানাডা , অস্ট্রেলিয়া , দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স , সুইডেন , ইতালিসহ ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোর রাজস্ব আদায়ের গড় ব্যয় প্রতি ১০০ টাকায় ৭০ পয়সা । অন্যদিকে ওইসিডি এবং ইন্টার - আমেরিকান সেন্টার অব ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশনসের ( সিআইএটি ) অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাজস্ব আদায়ে গড় খরচ প্রতি ১০০ টাকায় ৯৬ পয়সা । ভারতে এই ব্যয় ১৮ পয়সা ।
এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান বিভাগের মহাপরিচালক অরুণ কুমার বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন , ‘ রাজস্ব আদায়ে আমাদের খরচ আসলেই অনেক কম । অন্যান্য দেশে খরচ কেন বেশি হয় , আমি জানি না । হতে পারে সেসব দেশে কর্মকর্তাদের বেতন বেশি । ইউরোপীয় দেশে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের বেতন আমাদের চেয়ে ৫ গুণ বেশি । এখানেই খরচের পার্থক্য হয় । ভারতের একজন সহকারী কমিশনার আমাদের দেশের ওই পদের কর্মকর্তার চেয়ে দ্বিগুণ বেতন পান । ’
তিনি বলেন , রাজস্ব আদায়ে দুর্নীতি আছে , সেটা হিসাব করা গেলে খরচ বাড়ত , এটা যৌক্তিক । কিন্তু কোনো সম্ভাব্য ঘুষের হিসাব দিয়ে তো তথ্য বানানো যায় না । এটা অনুমিত বিষয় । র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড . আব্দুর রাজ্জাক বলেন , অন্য দেশের কর- জিডিপি অনুপাত বেশি । রাজস্ব আদায় বেশি । সে জন্য খরচ বেশি হতে পারে । তাই তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের খরচের তুলনা করলে চলবে না । তিনি বলেন , ‘ ভারতের কর- জিডিপি অনুপাত ১৯ শতাংশ । আমাদের সাড়ে ৭ শতাংশের মতো । ফলে রাজস্ব আদায় তাদের মতো হচ্ছে না । '