Image description
ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের মেয়াদ আরো বাড়ল শুল্ক ইস্যুতে নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজ কী?

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত শুল্কের ওপর ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামীকাল ৯ জুলাই। তবে বেশ কয়েকটি দেশ বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার কাছাকাছি পৌঁছেছে জানিয়ে নতুন শুল্ক হার ৯ জুলাইয়ের পরিবর্তে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। এতে দেশগুলো আরও তিন সপ্তাহের সময় পাবে।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এ সপ্তাহেও মার্কিন শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে নতুন করে আলোচনায় বসছে বাংলাদেশ। এজন্য সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বণিজ্য সচিব ইতোমধ্যে ওয়াশিংন পৌঁেছছেন। প্রশ্ন উঠেছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন কী কারণে? শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিবই যথেষ্ঠ। সেখানে নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাজ কী? দেশের টাকায় কেনই বা তিনি দিনের পর দিন আমেরিকায় অবস্থান করছেন? এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ বলেছেন, মার্কিন সরকারের সাথে নিরাপত্তা বিষয়ে কোনো গোপন চুক্তির পাঁয়তারা করছেন তিনি। হতে পারে সেটা রাখাইনে কথিত ‘মানবিক করিডোর’ কিংবা অন্য ভিন্ন কোনো ইস্যু। যে চুক্তির কারণে চীনের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

গত ২৭ জুন থেকে ২৯ জুন তিন দিনের সরকারি সফরে চীন সফরের কথা ছিল প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়ার। সে সময় এই দুজন আমেরিকায় অবস্থান করছিলেন। এই সফর নিয়ে গত ১৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জারি করা সরকারি আদেশ অনুযায়ী, সফরের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করবে উক্ত দপ্তর এবং এটি সরকারি দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করা হবে।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, সফরের নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করা যাবে না এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক প্রটোকল অনুসরণ করতে হবে। এই উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন পরিচালক (প্রশাসন) মো. নজমুল ইসলাম সরকার। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিদেশে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক মিশনগুলোর কাছে জানানো হয়। কিন্তু হঠাৎ করে সেই সফর বাতিল হলেও সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি। তবে একাধিক সূত্র জানায়, ড. খলিলুর রহমানকে ভিসা দেয়নি চীন সরকার। সে কারণে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে গত ২৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত করতে আলোচনা করছেন প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক চুক্তি চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আলোচনার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।

সবশেষ ২৬ জুন বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ইউএস অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ ব্রেন্ডন লিঞ্চ। অন্তর্বর্তী সরকারের নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের বরাত দিয়ে উপপ্রেস সচিব বলেন, আমরা মার্কিন দলের সঙ্গে আলোচনায় খুব ভালো অগ্রগতি করেছি। উভয় পক্ষই চুক্তিটি দ্রুত চূড়ান্ত করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চীন সফর বাদ দিয়ে হঠাৎ করে কেন তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বসলেন সে বিষয়ে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত। আমার কিছু জানা নেই। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের আদেশভূক্ত চীন সফর কেন হলো না- এ প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, এটাও আমার জানা নেই।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল বেশ কয়েকটি দেশের ওপর সর্বনি¤œ ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কয়েকটি দেশের নামও আছে সেই তালিকায়। তবে নতুন শুল্ক কার্যকরের দিনই (০৯ এপ্রিল) চীন বাদে সব দেশের ওপর পারস্পারিক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেন ট্রাম্প, যার সময়সীমা ছিল ৯ জুলাই।

গত রোববার নিজের মালিকানাধীন সামাজিকমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, এপ্রিলে ঘোষিত অতিরিক্ত উচ্চ শুল্ক ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার কাছাছাছি রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মার্কিন ট্রেজারিমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, যেসব বাণিজ্য অংশীদার দেশ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি, তাদের ওপর ঘোষিত নতুন শুল্ক হার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। ওই দিন মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর ‘ স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে বেসেন্ট বলেন, এপ্রিলের ২ তারিখে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে উচ্চ শুল্কের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তা ‘বুমেরাংয়ের মতো ফিরে আসবে’-যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সমঝোতা না হয়। তিনি বলেন, আমরা কয়েকটি বড় চুক্তির খুব কাছাকাছি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বড় ঘোষণা আসবে বলে আমি আশা করি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও আলোচনায় ভালো অগ্রগতি হয়েছে। তবে তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি কোনো দেশগুলোর সাথে আলোচনা চলছে। এ তালিকায় বাংলাদেশ আছে কি না-তাও স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্র কী হুমকির মাধ্যমে চুক্তি করতে চাইছে? এমন প্রশ্নের জবাবে বেসেন্ট বলেন, এটা কোনো নতুন সময়সীমা নয়। আমরা বলছি, এই তারিখেই কার্যকর হবে। তাড়াতাড়ি করতে চাইলে করো, না চাইলে পুরোনো হারে ফিরে যাও। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি বাণিজ্য নেই এমন ১০০টি ছোট দেশকে চিঠি পাঠাবেন, তাদের উচ্চ শুল্ক হারের বিষয়ে অবহিত করবেন।

এদিকে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, শুল্ক হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাড়তি শুল্ক হার কমানোর জন্য আগামী সপ্তাহে আবারও আলোচনায় বসতে পারেন দুদেশের নীতি নির্ধারকরা। গত ৩ জুলাই ওয়াশিংটনে এক বৈঠকে শুল্ক কমাতে বাংলাদেশের প্রস্তাব ও যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। এই প্রস্তাবগুলো যুক্তরাষ্ট্র যাচাই-বাছাই করার পর আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় বসতে পারে দুদেশ। ঢাকায় সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ ন্যায়সঙ্গত শুল্কহার চাইছে। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রেসার গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করছে সরকার।