
রাজধানীর কেরানীগঞ্জে ঘাটারচর বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রা শুরু করে পরিস্থান পরিবহন। স্ট্যান্ড থেকে বের হওয়ার আগে একজন যুবক বারবার দৌড়ে এই কম্পানির বাসচালকদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন, কিন্তু রসিদ দিচ্ছেন না। গত রবিবার সকাল ৯টায় ঘাটারচর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেল। জানতে চাইলে বাসচালক রুহুল আমিন বললেন, ‘জিপির টাকা বাবদ ৮০০ টাকা নিছে।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, জিপি বা গেট পাসে চাঁদা দিতে হয়। পরিবহন কম্পানির অফিস, কাউন্টার, আপ্যায়ন ও টিকেটিংসহ পরিচালনা ব্যয় হিসেবে জিপির টাকা নির্ধারণ করা হয়।
জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী পরিবহনগুলো সড়কের দূরত্ব অনুযায়ী তিন থেকে চার ঘাটে চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। আজিমপুর থেকে গাজীপুর পর্যন্ত চলাচলকারী ভিআইপি পরিবহনের একটি বাসকে বিভিন্ন স্থানে জিপি বাবদ এক হাজার ৪০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।
পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে দৈনিক পাঁচ হাজার গণপরিবহন (বাস) চলাচল করে। প্রতিটি বাস থেকে গড়ে এক হাজার ৭০০ টাকা হারে জিপির নামে দৈনিক চাঁদাবাজি হয় অন্তত ৮৫ লাখ টাকা।
রাজধানী পরিবহনের চালক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, মিরপুর ১২ নম্বর থেকে সাভার পর্যন্ত চলাচলকারী একজন বাসচালককে দিনে অন্তত দুই হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। জিপির নামে প্রথমে মিরপুরে দিতে হয় ৭০০ টাকা, কালিয়াকৈরে ৫০০ টাকা, চন্দ্রা থেকে ২০০ টাকা এবং সাভার থেকে নেওয়া হয় ১০০ টাকা। এ ছাড়া সড়কে বিভিন্ন স্থানে থাকা সুপারভাইজারদের দিতে হয় অন্তত ৫০০ টাকা।
মৌমিতা পরিবহনের চালক রুহুল আমীন বলেন, চন্দ্রা থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলে তিনটি স্থানে জিপির টাকা দিতে হয়। চন্দ্রায় ৯০০ টাকা, সাভারে ২০০ টাকা এবং নারায়ণগঞ্জে ৪০০ টাকা। সুপারভাইজারদের চাঁদাসহ একটি বাসকে দৈনিক চলাচলে অন্তত দুই হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কম্পানিভেদে একটি গাড়ির পরিচালনা ব্যয় দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হতে পারে। জিপির নামে অতিরিক্ত চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেব। আশা করি, দুই মাসের মধ্যে এসব সমস্যার সমাধান হবে। আমরা চাই ই-টিকেটিং বা র্যাপিড পাসের মাধ্যমে পরিবহন পরিচালনা করতে। সে ক্ষেত্রে পরিবহন কম্পানির টাকা তাদের নিজ নিজ কম্পানিতে জমা হবে। কম্পানি তখন মালিকদের নিয়ে গাড়ি অনুপাতে টাকা ভাগ করে নেবেন। সেখান থেকে পরিচালনা ব্যয় কাটা হবে। তখন চাঁদাবাজির সুযোগ থাকবে না।’
জানা গেছে, একটি পরিবহন রাস্তায় চলাচলের সময় তিন ভাগে চাঁদা আদায় করা হয়। এর মধ্যে আছে ইন-আউট পয়েন্ট থেকে জিপির নামে টাকা আদায়। সড়কে দূরত্ব বেশি হলে পার্কিংয়ের নামেও জিপির টাকা আদায় করা হয়। সুপারভাইজারদের মাধ্যমেও চাঁদাবাজি করা হয়। সড়কের দূরত্ব ও পরিবহন কম্পানিভেদে ১০ থেকে ২০ টাকা হারে প্রতিটি পরিবহনকে গড়ে দৈনিক ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। কম্পানি মালিকরা তাদের বেতনভিত্তিক নিয়োগের পরিবর্তে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। বরং সুপারভাইজারদের থেকে কম্পানিগুলো দৈনিক ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা চাঁদা নেয়।
‘ব্যাক মানি’ নামে পরিবহনে আরো এক ধরনের চাঁদাবাজি হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এসব চাঁদাবাজির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সকালে পরিবহন শ্রমিকদের ৪৫০ টাকার খুচরা নোট দিয়ে রাতে আদায় করা হয় ৫০০ টাকা। প্রতিটি বাস থেকে ৫০ টাকা হারে এই খাতে দৈনিক চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ টাকা।