Image description

পঞ্চগড়ে বন্ধুর মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে লাশ হয়ে ‍ফিরল বান্ধবী কলেজ শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম জুলি (২৩)। মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে পার্শ্ববর্তী  ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের ঘনিবিষ্ণুপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

নিহত উম্মে কুলসুম জুলি পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেড়া ইউনিয়নের জোতহাসনা এলাকার জহিরুল ইসলামের মেয়ে। জুলি পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্সে পড়াশোনা করতেন বলে জানা গেছে। তিনি অনলাইনে একটি মাদরাসা থেকে আলেমা পড়াশোনাও শেষ করে শিক্ষকতা করছিলেন। পাশাপাশি অনলাইনে আউট সোর্সিংয়ের কাজও করতেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাতে বাসায় গরুর মাংস রান্না করে রাখেন উম্মে কুলসুম জুলি। রাতেই পরিবারের সদস্যদের জানান, মঙ্গলবার সকালে ঠাকুরগাঁও শহরে তার এক বান্ধবীর মা অসুস্থ থাকায় দেখতে যাবেন তিনি। পরে সকালে রান্না করা গরুর মাংস সহ খাবার নিয়ে বাসা থেকে বের হন জুলি। তবে আগে থেকেই তিনি তার বন্ধু মাহাদী হাসান জয়কে বিষয়টি জানান জুলি। পরে জয়ের মোটরসাইকেলে পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে বের হন তারা। একপর্যায়ে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার রুহিয়া ইউনিয়নের ঘনিবিষ্ণুপুর এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক্টরকে পাশ কাটাতে গিয়ে মোটরসাইকেল থেকে আটোয়ারী-রুহিয়া আঞ্চলিক সড়কে ছিটকে পড়ে যান জুলি। এতে ট্রাক্টরের চাকা তার মাথার উপর দিয়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করে সে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরেই জুলির বন্ধু মাহাদী হাসান জয়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয়দের মাধ্যমে সদর থানা পুলিশ আটক করেছে। জয়ের বাড়ি সদর উপজেলার পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের জগদল এলাকায়। তিনি ওই এলাকার জিহাদ হোসেনের ছেলে। জয় জগদল বাজারে একটি তিনতলা ভবনে হাফেজিয়া মাদরাসা পরিচালনা করেন বলে জানা গেছে।

নিহতের চাচাতো চাচা সামিউল ইসলাম বলেন, আমার ভাতিজীকে হত্যা করা হয়েছে। একটা সুস্থ মানুষ কি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়। আর ছেলেটা রুহিয়া থেকে আসতেই তিনবার পোশাক পরিবর্তন করেছে। তাকে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। অবশ্যই আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।

তবে আটক হওয়া মাহাদী হাসান জয় বলেন, জুলি ও তার পরিবারের সঙ্গে আমার আগে থেকে ভালো পরিচয়। আজকে সে ঠাকুরগাঁয়ে যাবে এটি আমাকে আগেই ম্যাসেঞ্জারে জানায়। পরে মঙ্গলবার সকালে আমরা বের হই। রুহিয়াতে গিয়ে সে মাথা ঘুরে মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যায়। এ সময় একটি ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। আমি স্থানীয়দের কাছে একটি এ্যাম্বুলেন্স চাই তাকে পঞ্চগড় দ্রুত নিয়ে আসার জন্য। এখানে নিয়ে আসার পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রুহিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল হক বলেন, দুর্ঘটনার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি কালো বোরকা পড়া একজন মহিলা মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে আছেন। আমরা মনে করেছিলাম তারা স্বামী স্ত্রী। জয় নামের ওই ব্যক্তি আমাদের কাছে পঞ্চগড় যাওয়ার জন্য এ্যাম্বুলেন্স চাইলে আমরা তাদের এ্যাম্বুলেন্স যোগাড় করে দেই। পরে শুনেছি ওই মহিলা নারী মারা গেছেন।

রুহিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম নাজমুল কাদের বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কেউ নেই। পরে জানতে পারলাম এ্যাম্বুলেন্স যোগে তারা পঞ্চগড় চলে গেছেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার কোন অভিযোগ করলে আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লা হিল জামান বলেন, এ ঘটনায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) মূলে মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হবে। তবে নিহতের পরিবার কোন মামলা করতে চাইলে রুহিয়া ঘটনাস্থল হওয়ায় সেখানেই সংশ্লিষ্ট থানাতে তারা মামলা করবেন।