Image description

প্রায় ১৬ দিন পর মন্ত্রণালয়ের লিখিত আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক প্রতিশ্রুতি ও জারিকৃত দপ্তর আদেশে পল্লী বিদ্যুতের সাত দফা দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে সমস্যা সমাধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাসে এবং আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহার সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্রাহক ভোগান্তির বিষয় বিবেচনায় কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।

এ সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিদ্যুৎ বিভাগের উপ সচিব মো. সোলায়মান ও ফারজানা খানম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, নিয়াজ মোরশেদ, আবু আব্দুল্লাহ সজীব ওয়াফিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেমের সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্ভয়ে কাজে যোগদান করার জন্য বলেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। 

সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সকল পক্ষের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলনরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে দীর্ঘদিনের বৈষম্য, দমন-পীড়ন, নিম্নমানের মালামাল ক্রয়ের কারণে গ্রাহক ভোগান্তি নিরসন ও আরইবির দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রায় দেড় বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমরা আন্দোলন চালিয়ে আসছি। সর্বশেষ ৭ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সারাদেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ফারজানা খানমসহ উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে আমাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাই। এবং বৃহস্পতিবার সে সকল বিষয়ে আমাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সমাধান এবং স্বল্প সময়ে তা বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দপ্তরাদেশ জারি করা হয়। এমন অবস্থায় আমরা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বিদ্যুৎ বিভাগ যা বলছে

বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব ফারজানা খানম স্বাক্ষরিত এক দপ্তর আদেশে বলা হয়েছে- পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন পর্যায়ে ধারাবাহিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে নিম্নরূপ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে:

ক) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ন্যায় অভিন্ন চাকুরী বিধি প্রণয়নসহ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণী সংস্থার ন্যায় কোম্পানি গঠনের বিষয়ে উত্থাপিত দাবি পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ বিবেচনাসহ অংশীজনদের সাথে আলোচনাক্রমে প্রতিবেদন দাখিল করবে এবং এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকার সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে;

খ) সকল চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে;

গ) সকল মামলা প্রত্যাহারপূর্বক চাকরিচ্যুতদের স্বপদে পুনর্বহাল এবং সংযুক্ত ও সাময়িক বরখাস্তকৃত এবং অন্যায়ভাবে বদলীকৃত কর্মীদের পদায়নের বিষয়টি সংবেদনশীলতা ও সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করা হবে।

উল্লেখ্য যে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানরত কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ স্ব স্ব কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে কাজে যোগদান করবেন মর্মে অঙ্গিকার প্রদান করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবহিতকরণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা।

প্রসঙ্গত, গ্রামাঞ্চলসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। দেশের ৪ কোটি ৮২ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকের মধ্যে আরইবির গ্রাহক ৩ কোটি ৬৮ লাখ। দেশজুড়ে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার।

আরইবি ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন, চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগসহ নানা দাবিতে গত জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করছেন সমিতির কর্মীরা। এই ধারাবাহিকতায় গত ২১ মে থেকে শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। আন্দোলনে গত কয়েক দিনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সংহতি জানিয়েছে। সরকার দা‌বি না মানায় ২৭ মে থে‌কে আং‌শিক কর্মবির‌তি পালন কর‌ছে স‌মি‌তির কর্মীরা। মঙ্গলবার থে‌কে তা জোরদার হয়। অনেক সম‌ি‌তির লাইনম্যান কর্মস্থল ত্যাগ ক‌রে‌ছেন অনেক এলাকায় গণছু‌টি‌তে‌ গে‌ছেন তারা।