Image description

হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে সড়কের নতুন কার্পেটিং। গাড়ি চললে দেবে যাচ্ছে সড়ক। দুই ইঞ্চি কার্পেটিংয়ের বদলে কোথাও এক ইঞ্চি, আবার কোথাও সোয়া ইঞ্চিও নেই। নির্মাণ কাজের বিবরণ সম্বলিত সাইনবোর্ড রাখার নিয়ম থাকলেও প্রকল্প এলাকার কোথাও নেই সেটা। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে দায়সারাভাবে কাজ করার কারণে কয়েক মাসও টিকবে না এই সড়ক।

জানা গেছে, ২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন নিয়ামতপুর-আনোয়ারপুর সড়কটি সংস্কারের কাজ পায় ঢাকার ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান এমএস সালেহ আহমেদ ও কামরুল অ্যান্ড ব্রাদার্স। ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নিয়ামতপুর থেকে আনোয়ারপুর নয় কিলোমিটারের এই সড়কের সংস্কার কাজ চলছে গত তিন বছর ধরে। নয় মাস মেয়াদি কাজটির এরই মধ্যে সময় বাড়ানো হয়েছে দুই বার। কাজ শেষ না হওয়ায় ফের সময় বাড়ানোর আবেদন করবে ঠিকাদার।

 

সড়কটি দিয়ে সুনামগঞ্জের সদর, জামালগঞ্জ, বিশম্ভরপুর, তাহিরপুর ও মধ্যনগর উপজেলা লোকজন চলাচল করেন। সুনামগঞ্জ শহর ও জামালগঞ্জ থেকে এই সড়ক দিয়ে সহজে তাহিরপুরে আসা-যাওয়া করা যায়। সড়কের কাজ শেষ হলে চলাচল করবেন ৫ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। পণ্য পরিবহণ ও যোগাযোগ সহজ হবে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে এমন ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন কয়েকগ্রামের মানুষ। স্থানীয় কয়েকজন অনিয়মের চিত্র ভিডিও করে এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠালে সত্যতা জানতে সরেজমিনে গিয়ে ক্যামেরায় ধরা পড়ে নানা অনিয়ম।

প্রতিবেদকের সামনেই কেউ কেউ কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগ ছাড়াই টেনে তোলেন সড়কের কার্পেটিং। আর সেটা তুলতেই চোখে পড়ে বালু-পাথরের বদলে শুধুমাত্র মাটির ওপর কার্পেটিংয়ের দৃশ্য। সড়কের মাঝ বরাবর খুড়ে দেখা যায় ৫০ এম এম বা দুই ইঞ্চি উচ্চতার জায়গায় এক ইঞ্চি উচ্চতায় করা হয়েছে সড়ক। কোথাও আবার সোয়া ইঞ্চিও নেই। হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে উঠে যাচ্ছে বিটুমিনের পিচ ঢালাই। এসব অনিয়ম যেন চোখে না পড়ে সেজন্য দু-পাশে থাকা ইট রোলার দিয়ে মাটির ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন সড়ক আর ইটের উচ্চতা সমান থাকে।

 

স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে বাধা দিলে ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোর কাজ করতে বাধ্য হয় ঠিকাদারের লোকজন। এ সময় ঠিকাদারের লোকজনের সামনেই প্রতিবেদকের কাছে নানা অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। আলীপুর গ্রামের মুক্তার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কাজের কোনো সাইনবোর্ড আমরা দেখতে পাইনি। আমাদের দাবি, কাজটি যেন ভালো করে করা হয়। কিন্তু মাটির উপরে আধা ইঞ্চি করে কাজ করার কোনো মানে নেই। যেভাবে কাজ করা হয়েছে, তাতে এক মাসের বেশি ঠিকবে না। তাদের গাড়ির চাপেই সড়ক ফেটে যাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে তাহলে কেমন পরিস্থিতি দাঁড়াবে?’

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস ছাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়কে সঠিকভাবে পানি দেওয়া হয়নি। বালু-পাথর না দিয়ে মাটির উপরেই কার্পেটিং করা হয়েছে। পাথর, বিটুমিন ও কার্পেটিংয়ের সংযোগ না হওয়ায় হাত দিয়ে টান দিলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং।’

একই এলাকার মো. গোলাম মোস্তফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাস্তার কিনারের ইট দুই ইঞ্চি উপরে ছিল। কিন্তু ঢালাই (কার্পেটিং) কম দিয়ে রুলার দিয়ে চাপ দিয়ে ইট নিচে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ বোঝে ঢালাই ইটের সমান দিয়েছে। পরে আমরা ইঞ্জিনিয়ারকে কাজ না করার কথা বললে এই জায়গা আবার ঠিক করে দেন। এরকম পুরো সড়কেই অনিয়ম হয়েছে।’

আলীপুর গ্রামের মো. ফেরদৌস আলম সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বললেন, ‘রাতের অন্ধকারে সড়কের কাজ করেছে। আবার বৃষ্টির মধ্যে কাজ করা হয়েছে। রুলার দিয়ে একবার চাপ দিয়ে চলে গেছে। এখন মানুষের পায়ের ঘসায় কাজ উঠে যাচ্ছে।’

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী শেখ সুজন মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্যার কারণে কাজে কিছু বিলম্ব হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে, কোনো অনিয়ম হয়নি। নিয়ামতপুরের কাছে সাইনবোর্ড ছিল, সেটা কারা যেন ভেঙে দিয়েছে।’ মেশিনের কারণে কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছিল স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘যেখানে কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব কম হয়েছিল সেইটুকু আবার করে দেওয়া হচ্ছে।’

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সহদেব সূত্রধর সারাবাংলাকে বললেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোথাও এমন হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজ হস্তান্তরের আগে সড়ক বিভাগের ঢাকার বিশেষজ্ঞ দল নানাভাবে কাজ পরীক্ষা করে দেখবেন। কোনো কমতি পাওয়া গেলে বা অনিয়ম ধরা পড়লে ফের কাজ করানো হবে, নয়তো বিল আটকে দেওয়া হবে।’

সারাবাংলা