Image description
স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস » ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই মসজিদের ইমাম । » কার্যালয়ের সামনে থেকে উধাও সাইনবোর্ড । » যে বাসায় স্ত্রী - সন্তান নিয়ে থাকতেন , তা - ও তালাবদ্ধ । » অভিযুক্তকে ধরতে কাজ শুরুর কথা জানিয়েছে পুলিশ ।

যশোর জিলা স্কুল জামে মসজিদের খতিব আশরাফ আলী। চলতি বছরে হজে যেতে যোগাযোগ করেন যশোর শহরের টিবি ক্লিনিক রোডের স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি হজ এজেন্সির সঙ্গে। প্রাক্‌-নিবন্ধন, যাবতীয় কাগজপত্রসহ এজেন্সির কথায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু চূড়ান্ত কাগজপত্র না পাওয়ায় হজে যেতে পারেননি তিনি। তাঁর অভিযোগ, হজের পুরো টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন এজেন্সির প্রতিনিধি মোয়াল্লিম আবু হুরায়রা।

আশরাফ আলীর মতো স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের প্রতারণার শিকার হয়েছেন যশোরের অর্ধশতাধিক হজ ও ওমরাহে যাত্রী। ভুক্তভোগীরা যশোর কোতোয়ালি থানা ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ে অভিযোগও দিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিরাপদে হজ কিংবা ওমরায় পাঠানোর নামে দেড় থেকে ৫ লক্ষাধিক টাকার চটকদার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস। প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার শিক্ষকের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করে তারা। পরে তারা টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে। শহরের টিবি ক্লিনিক রোডে এজেন্সির অফিসও বন্ধ। শহরের খড়কিতে একটি বাসায় এজেন্সির প্রতিনিধি মোয়াল্লিম আবু হুরায়রা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকলেও সেই বাসা এখন তালাবদ্ধ।

আশরাফ আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে হজে পাঠানোর জন্য আবু হুরায়রার কাছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। এরপর আবু হুরায়রা আমার সঙ্গে নোমান নামের একজনকে পরিচয় করিয়ে জানান, হজের সবকিছু নোমান দেখবে। হঠাৎ একদিন ফোন করে নোমান বলেন, “আপনার হজ নিবন্ধনের জন্য হুরায়রা আমাকে মাত্র ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা না দিলে নিবন্ধন রিপ্লেসমেন্ট করা হবে।” তখন আমি বলেছি, আমি নিবন্ধন নম্বরসহ যেসব ডকুমেন্টস পেয়েছি, তা তো ৩ লাখ ৩০ হাজারের। বাকি টাকা অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচের জন্য রয়েছে। আপনি, হুরায়রা আর আপনাদের প্রতিষ্ঠান প্রতারণা করছেন বলে জানিয়ে দিই। এরপর আমি নিজে হুরায়রার বাড়ি গেছি। কিন্তু বাড়ি তালাবদ্ধ। দালালের খপ্পরে পড়ে আমি হজে যেতে পারলাম না।’

যশোর শহরতলির সুজুলপুর জামতলায় অবস্থিত বাগে জান্নাত কারিমিয়া কওমি মাদ্রাসায় দেড় দশক ধরে পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন ফরহাদ হোসাইন। মাদ্রাসায় শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি হজ ও ওমরাহে লোক পাঠাতেন। চলতি বছর তিনি ওমরাহে লোক পাঠানোর জন্য আবু হুরায়রার কাছে টাকা দিয়েছিলেন। উন্নতমানের বাসা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও গাইড খরচ দেওয়ার নামে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা আবু হুরায়রা।

শহরের কাজিপাড়া কাঁঠালতলা এলাকার হুমায়ূন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ওমরায় যাওয়ার জন্য মোয়াল্লিম আবু হুরায়রার কাছে টাকা দিয়েছি। কিন্তু এক মাস হলো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। ওমরায় যেতে পারব কি না, তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’

অভিযোগের বিষয়ে আবু হুরায়রার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি। যশোর শহরের টিবি ক্লিনিক রোডে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, স্মার্ট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের কোনো সাইনবোর্ড নেই। পাশেই একটি মুদিদোকানদার বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে এখানে আবু হুরায়রা নামের এক মোয়াল্লিম হজ-ওমরার লোক দিয়ে যেত। অফিসও ছিল। মাসখানেক উনি আসছেন না। ভবনের দেয়ালে সাইনবোর্ড ছিল, সেটিও উধাও।’

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে পুলিশ কাজ করছে।