
নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলের (নির্বাচন মনিটরিং-সংক্রান্ত এনজিও) লেজুড়বৃত্তির প্রমাণ পেলে ওই সংস্থাটি সংসদ কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে অযোগ্য হবেন।
অন্যদিকে কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থা নীতিমালা লঙ্ঘন, রাষ্ট্র বা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়ালে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল হবে। আর কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থা কোন নিবাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেÑ সেটি নির্ধারণ করে দেবে কমিশন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫-এ এমন বিধান যুক্ত এবং বিতর্কিত ধারা বাদ দিয়ে খসড়া প্রস্তুত করেছে কমিশন।
নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে কোনো দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে তা নির্ধারণ করে দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আমন্ত্রিত অতিথিদের শুধু ভিসা নিশ্চিত করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিগত সময়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটা চূড়ান্ত করত। সম্মতি দিত ইসি।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আমার দেশকে বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালায় কিছু বিধান যুক্ত করে আমরা কমিশনের অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করেছি। বেশকিছু বিধান যুক্ত করা হয়েছে, আবার কিছু বিয়োজন করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হলে পর্যবেক্ষক সংস্থাটি সে সম্পর্কে জানবেন, ভোটারের আস্থা এবং ভোটারের ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবেন এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন অধিকতর ভালো করার পরামর্শ ও সুপারিশ করবেন।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন বা আছেন কিংবা নিবন্ধন পাওয়ার মধ্যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হলে নিবন্ধনে অযোগ্য হবেন। আর কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থার নামের সঙ্গে জাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের নামের হুবহু মিল বা কাছাকাছি নাম ব্যবহারের কারণে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরির শঙ্কা থাকলে নিবন্ধনে অযোগ্য হবেন।
নিবন্ধনের মেয়াদ : বিতর্কিত কারণে নিবন্ধন বাতিল না হলে প্রতিটি সংস্থার মেয়াদ হবে ৫ বছর এবং সংসদের একটা সাধারণ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের অন্তত ৪টি নির্বাচন পর্যবেক্ষণের পর অভিজ্ঞতার প্রতিবেদন ইসিতে জমা দিতে হবে।
পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন বাতিল : নীতিমালা লঙ্ঘন, রাষ্ট্র বা শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রমাণ পেলে ইসির ব্যাখ্যার সন্তোষজনক জবাব না দিলে বাতিল হবে নিবন্ধন।
পর্যবেক্ষক সংস্থার দায়িত্ব : বয়স ২৫ বা তদূর্ধ্ব, শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি এবং কোনো রাজনৈতিক দল বা দলের অঙ্গসংগঠন বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে ব্যক্তিগত স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতা রাখা যাবে না।
পর্যবেক্ষক মোতায়েন : একই নির্বাচনী এলাকার একাধিক পর্যবেক্ষক সংস্থা পর্যবেক্ষণের আবেদন করলে কোন সংস্থা কোন ইউনিটে পর্যবেক্ষণ করবেÑ সেটি ঠিক করে দেবে কমিশন। আবার সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার ননÑ এমন লোককে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ করতে হবে। প্রত্যেক পর্যবেক্ষক সংস্থা প্রতি দলে অনধিক পাঁচজন করে একাধিক ভ্রাম্যমাণ পর্যবেক্ষক দল নিয়োগ দিতে পারবেন। পর্যবেক্ষকগণ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সময় সার্বক্ষণিক পরিচয় কার্ড দৃশ্যমান রাখবেন, ভোটারের ভোটদানের প্রতি অধিকতর সচেতন থাকবেন এবং ভোটের গোপন কক্ষে প্রবেশ করবেন না।
পর্যবেক্ষকের আচরণ : পর্যবেক্ষণের সময় সম্পূর্ণ পক্ষপাতহীনতা বা নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য বা প্রার্থীর সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত হনÑ এমন কোনো আচরণ করা যাবে না। কোনো রাজনৈতিক দল, প্রার্থী বা তার এজেন্ট, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত সংস্থা অথবা ব্যক্তির কাছ থেকে উপহার গ্রহণ বা কেনার চেষ্টা, সুবিধা গ্রহণ বা গ্রহণে উৎসাহিত করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং নির্বাচন চলাকালীন পর্যবেক্ষকরা মিডিয়ার সামনে এমন কোনো মন্তব্য না করা, যাতে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত বা প্রভাবিত করে।