Image description
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি দুই। সংগঠন নিষ্ক্রিয় এনসিপি ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠনের পর থেকে। নেতাদের অনেকে নতুন দল ও ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে। গণসংগঠন হিসেবে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ নামে আত্মপ্রকাশের ভাবনা। ঈদের আগেই ঘোষণা হতে পারে নতুন কমিটি।

নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও নতুন ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ গঠনের পর অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তবে শিগগির দুটি প্ল্যাটফর্মকে পুনর্গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই লক্ষ্যে সংগঠন দুটির নেতৃত্ব, কাঠামো, কার্যক্রম কেমন হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দুটি প্ল্যাটফর্মই সামাজিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সক্রিয় থাকবে। এ জন্য নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম এবং কাজের ধরন নেতৃত্ব সংগঠনটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাই ঠিক করবেন। সেই প্রক্রিয়া চলছে। তবে জানামতে, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আন্দোলন সংগঠিত করেছিল ছাত্র নেতাদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই প্ল্যাটফর্মে পেছন থেকে যাঁরা সক্রিয় ছিলেন, সরকার পতনের পর পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তাঁরা সংগঠিত হন জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে। ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির শীর্ষ এবং নেতৃস্থানীয় অনেকে এখন নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি ও নতুন ছাত্রসংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত মাসেই এই দল ও ছাত্রসংগঠনটি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিতে বিভিন্ন মতাদর্শের, নীতি-আদর্শের মানুষের সম্মিলন ঘটেছিল। রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠন আত্মপ্রকাশের পর অনেকে যেমন রাজনৈতিক দল ও ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, তেমনি অনেকে প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। এতে অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি।

এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয়ে অপরাধের কয়েকটি ঘটনায়ও বিব্রত সংশ্লিষ্টরা। ফলে জাতীয় নাগরিক কমিটির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলেও প্রশ্ন উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অস্তিত্ব নিয়ে।

এই প্রেক্ষাপটে কয়েক দিন আগে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক’ পরিচয়ের এখন আর অস্তিত্ব নেই। ছাত্র আন্দোলনের সময়কার অন্যতম এই নেতার এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনটির বিলুপ্তির আলোচনা উঠলেও তা নাকচ করে দিয়েছেন সংগঠনটির অধিকাংশ নেতা।

নাহিদের বক্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে এক পোস্টে উল্লেখ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি বিলুপ্ত করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশীদার ছাত্রদের সবাই নতুন রাজনৈতিক দল বা নতুন

ছাত্রসংগঠনে যুক্তও হননি। অংশীদারদের আলোচনা ছাড়া প্ল্যাটফর্ম বিলুপ্ত হবে না। এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি অনুরোধ জানান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, এসব আলোচনার প্রেক্ষাপটে নাগরিক কমিটির পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেও আবার ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে ঈদের আগেই পুনর্গঠিত হতে পারে সংগঠনটি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ছাত্রসংগঠন নয়; বরং একটি গণসংগঠন হিসেবে তৈরির আলোচনা চলছে। ছাত্র শব্দটি বাদ দিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন’ রাখার প্রস্তাব উঠেছে। জুলাইয়ের স্মৃতি রক্ষায় সভা, সেমিনার, শহীদ এবং আহতদের নিয়ে কাজ করবে সংগঠনটি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখাই মূলত সংগঠনটির কাজ হবে। তবে এসব বিষয়ে এখনো নেতারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি বলে জানা গেছে।

সূত্র মতে, ছাত্র আন্দোলনের আসন্ন কমিটির শীর্ষ পদের আলোচনায় আছেন সংগঠনটির বর্তমান মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, অভ্যুত্থানবিষয়ক বিশেষ সেলের সম্পাদক হাসান ইনাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী সদস্য মইনুল ইসলাম, সিনথিয়া জাহীন আয়েশা এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা নামলা। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছেন উমামা ফাতেমা, হাসান ইনাম ও মইনুল ইসলাম।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব আজকের পত্রিকাকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতারা তাঁদের ফোরামে সংগঠনটির পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিগগির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে।

আর এনসিপি গঠনের আগে প্রধান চারটি পদ বহাল রেখে বাকি সব সেল ও শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সে সময় কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখপাত্র, মুখ্য সংগঠক ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির বাকি সব নেতৃত্ব কাঠামো, নির্বাহী কমিটি, সেল ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তারা নতুন দল গঠনের পরবর্তী ১৫ দিন অনানুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের উদ্যোগে জাতীয় নাগরিক কমিটির ফোরাম পরবর্তী নেতৃত্ব কাঠামো নির্ধারণ করবে।