Image description
আগ্রাসী রাষ্ট্র ভারতের সরাসরি ইন্ধনে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের ওপর ভর করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল গণহত্যাকারী হাসিনা। দেশের আইন, বিচার, প্রশাসন ব্যবস্থাকে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে তাকে চরম স্বৈরাচারী শাসকে পরিণত হতে নিকৃষ্টতম ভূমিকা রাখে শাহবাগি দোসররা।


বাংলাদেশের মানুষকে খেপিয়ে তোলা গণজাগরণ মঞ্চে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে সেই ফ্যাসিস্ট প্রেতাত্মারা ফের নানাভাবে তৎপর হয়ে উঠেছে। ক্রীড়ানক লাকিদের মাঠে নামিয়ে ফের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর খুনি হাসিনা ও ভারত। দেশকে অস্থিতিশীল করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনে শাহবাগিদের এই নয়াআস্ফালনে ক্ষোভে ফুঁসছে নেটিজেনরা। পতিত স্বৈরাচারদের নতুন ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ফের এক হয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্র জনতা।


সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন অভিমুখে একটি সংগঠনের ব্যানারে যাত্রা করে দিল্লির সেবাদাসী হাসিনার দোসর লাকি ও তার সহযোগীরা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনসহ ৯ দাবিতে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে সেই সংগঠনের নেতৃত্ব দেন লাকি। এসময় পুলিশের ওপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা করে লাকি ও তার সহযোগীরা। এরপর থেকেই ফ্যাসিস্টের দোসর বর্বর শাহবাগি লাকিকে গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল সারাদেশ। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা লাকিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে একের পর এক পোষ্ট করে যাচ্ছেন। লাকিদের মাঠে নামিয়ে রক্তচোষা হাসিনার ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।


এদিন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম নেতা লাকি আক্তার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিলে অংশ নিয়েছেন, পাশাপাশি বক্তব্য রেখেছেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং গণজাগরণ মঞ্চের পরিচিত মুখ লাকি আক্তার বলেন, ‘দেশজুড়ে মানুষ ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে এ সরকার নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে তার ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।’


লাকি আক্তার পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, ‘ধর্ষণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিরসনের দাবিতে আগামী ১৫ মার্চ সকাল ১১টায় শাহবাগে গণমিছিল আয়োজন করা হবে।’ সাধারণ মানুষকে মিছিলে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।


হাসিনার দোসর লাকির এমন আস্ফালনে হতবাক ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা। সচেতন মহলের মন্তব্য, গতকাল পুলিশের ওপর হামলাটি পূর্বপরিকল্পিত। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করার ভারতীয় পরিকল্পনার অংশ। তারা হামলা করে পুলিশের মনোবল ভেঙে দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। তাই ভিডিও দেখে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া লাকি আক্তারসহ সবাইকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করার দাবি জানানো হয়েছে।


লাকি আক্তারকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতরাত দেড়টায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকে তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও মধ্যরাতে মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হয়ে ক্রীড়ানক লাকিকে গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেনম শাহবাগি কচ্ছপ গর্ত থেকে মাথা বের করেছে। তার মাথা দ্রুত ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে।না হলে আবার ছোবল মারবে!


ফেসবুকে শাহবাগিদের বিরুদ্ধে অনেকেই স্লোগান দিচ্ছেন,
হাজার শহীদ কবরে
লাকি কেন বাহিরে?
লাকি কেন রাস্তায়
ইন্টেরিম জবাব চাই!

শামসুল আরেফীন শক্তি লিখেছেন, এরাই দেশের শত্রু। ধর্ষন ইস্যুকে শাহবাগীরা এখন প্রফেসর ইউনুস বিরোধী ইস্যুতে পরিণত করছে। বামদের কাধে সওয়ার হয়েছে আওয়ামী প্রেতাত্মা। লাকি আক্তার এসে জয়েন করেছে ওখানে।শেয়ার দিচ্ছে ছাত্রলীগ। জুলাইয়ের হাতিয়ার জেগে ওঠো আরেকবার। এই মব জুলাইবিরোধী মব।


এম সাইফুর রহমান লিখেছেন, শাহবাগী লাকি আক্তার জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে আকাঙ্ক্ষিত ঐক্যের সুর এনে দিলো। ঠিক শাহবাগের মা শেখ হাসিনা যেভাবে ৩২ ভাঙার আগে শক্তিশালী একতা এনে দিয়েছিলো। ২৪-উত্তর বাংলাদেশে শাহবাগের আনুষ্ঠানিক কবর রচিত হবে ইনশাআল্লাহ।ইনকিলাব জিন্দাবাদ।


এদিকে, গণজাগরণ মঞ্চ-২ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। পাশাপাশি তিনি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করেছেন।বুধবার (১২ মার্চ) রাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ফেরিফায়েড ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ২০২৫ এ এসে ২০১৩ ফেরানোর চেষ্টা করবেন না। সাবধান!


অন্যদিকে, শাহবাগ কোনো ট্যাগ নয়, ফ্যাসিবাদের প্রতীক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম। আজ বুধবার (১২ মার্চ) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, বিচার চাই না, ফাঁসি চাই— এই থিওরির মাধ্যমেই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল শাহবাগী গোষ্ঠী। তারা আদর্শিক হেজেমনি দিয়ে দেশে ইসলামোফোবিয়া এবং আবহমান সম্প্রীতির সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। হাসিনাকে 'গডমাদার অফ ফ্যাসিজম' হিসেবে তৈরি করেছে। শাপলা গণহত্যা ও আল্লামা সাঈদীর রায়ের প্রেক্ষিতে গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল এরাই।শাহবাগে তৈরিকৃত ফ্যাসিবাদী পাটাতনে দাঁড়িয়ে হাসিনা জুলাইসহ যত গণহত্যা চালিয়েছে এর দায় অবশ্যই এদেরকে নিতে হবে।
 

বুধবার সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টের মাধ্যমে শাহবাগিদের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান জানিয়েছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।ওই পোস্টে ইশরাক বলেন, কুখ্যাত গণজাগরণ মঞ্চের (শাহবাগী) কতিপয় নেতাকর্মীর আবির্ভাব কোনোভাবেই বরদাশত করা যায় না। এই মঞ্চের মাধ্যমে জুডিসিয়াল কিলিং, বাংলাদেশের আলেম সমাজের ওপর নির্মম নির্যাতন, ২০১৪ সালে খুনি হাসিনার ক্ষমতা দখল এবং বিএনপিসহ বিরোধী দলমত দমনে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ পরবর্তী ১০ বছর ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েমের ভিত গড়ে তোলা হয়েছিল। এদেরকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
 
 
তৎকালীন শাহবাগি অরাজকতায় নির্যাতনের শিকার সাকিব শাহরিয়ার লিখেছেন, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখে আমাকে মেরে পুলিশে দেয়া হয়। ওই সময় আমি পুলিশরে জিগাইছিলাম, যারা আমারে ধরাইলো ওদের সবার হাতে লাঠি, রড, রামদা, কিরিচ, আমার হাত খালি। অথচ, গ্রেফতার করলেন আমারেই! 
 
 
পুলিশ উত্তর দেয়নাই। থানায় নিয়া আমারে আবার দফায় দফায় পিটাইছে। রাস্তার কুত্তারেও কিংবা কোনো মাখলুকরে ওইভাবে মারা যায় তা আমি নিজে খাওয়ার আগে জানতাম না। 
 
  
শাহবাগীরা আমার মত আলাভোলা, কান্ধে ঝোলা ব্যাগ নিয়া ঘোরা, কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখা একটা পোলারে হুট কইরা চৌদ্দটা মামলার আসামী কইরা দিলো। আমার পরের যুগটা কাটলো কেবল আদালতের সিড়িতে আর বারান্দায়।  আমারে ডাকা হইতো আসামী সাকিব শাহরিয়ার বইলা। নরম্যাল কেউ ছিলাম না আমি। দাগী আসামী। 
 
 
আমারে মারার, পুলিশে দেয়ার, পিটায়া অজ্ঞান করার বৈধতা দিসিলো শাহবাগ। আমারে ক্রসফায়ারে মাইরা ফ্যালার, আমারে গুম করার, আমার বাপ্রে ফোন কইরা এসআই রা গাইল দেবে, হয়্রানি করবে, আমরা বাড়ি থাকিনা তাও বাড়ি গিয়া ডেইলি তেল খরচ চাইবে- এসবের বৈধতা দিছিলো শাহবাগ। 
 
 
এই শাহবাগরে আমি তাই ঘৃণা করি। এই শাহবাগরে পরাজিত করার প্রশ্নে আমি তাই জাইগা থাকি, হাজির থাকি। আপনাদের কথা জানিনা। কিন্তু, শাহবাগরে পোনানোর প্রশ্নে- "আসামী সাকিব শাহরিয়ার, পিতা আবু বকর সিদ্দিক। হাজির।"