Image description

মোহাম্মদপুরে কমছে না ছিনতাইয়ের ঘটনা; বরং গত কয়েক মাসে মোহাম্মদপুরের হাক্কারপাড় ব্রিজ এবং তুরাগ নদীর ওয়াকওয়ে যেমন ছিনতাইয়ের হটস্পটে পরিণত হয়েছে, তেমনি হাতেনাতে আটক ছিনতাইকারীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটছে। নিজেদের বাঁচাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী এখন আইন তুলে নিচ্ছেন নিজের হাতে। এক সপ্তাহেই গণপিটুনিতে মারা গেছে তিন ছিনতাইকারী। আহত হয়েছে আরো ৩ জন। অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতাই গণপিটুনির মূল কারণ; তারা সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। পুলিশ ও র‌্যাব জানিয়েছেন, অপরাধপ্রবণ এলাকায় টহল বাড়িয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

৩১ আগস্ট বিকেল সাড়ে পাঁচটা। মোহাম্মদপুরের হাক্কারপাড় ব্রিজের পাশে অটোরিকশায় এসে পৌঁছায় এক যাত্রী। মুহূর্তেই দুই যুবক দিনেদুপুরে ধারালো অস্ত্রের মুখে সেই যাত্রীর সর্বস্ব লুট করে। এরপর সেই একই অটোরিকশায় চড়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

 
সরেজমিনে সেই ব্রিজে গিয়ে জানা যায়, ছিনতাই এখানকার নিয়মিত ঘটনা। চন্দ্রিমা থেকে সহজে বসিলা যাওয়া যায় বলে এই ব্রিজ অনেকেই ব্যবহার করলেও ছিনতাই আতঙ্কে থাকতে হয় সবসময়। স্থানীয়রা বলছেন, রাতদিন নেই। যে কোনো সময়ই ঘটছে ছিনতাই। এতে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে এ পথে নিয়মিত চলাচলকারীদের।
 
 
এই ব্রিজের কয়েকগজ সামনেই নবীনগর হাউজিংয়ের ১৬ নম্বর সড়ক। ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে দুই ছিনতাইকারীকে আটক করে এলাকাবাসী। গণপিটুনিতে মারা যায় দুইজনই। দুই দিন আগের একই এলাকার একটি সিসিটিভি ফুটেজে এই দুই ছিনতাইকারীকে অস্ত্রের মুখে একজনের সর্বস্ব লুটতে দেখা যায়।
 
নিহত ছিনতাইকারীর পরিবারের অভিযোগ, সেদিন বাসার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে গণধোলাই দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।‌ তবে নিহত দুইজন ছিনতাইয়ে জড়িত ছিল বলে শিকার করেছে পরিবার।
 
মোহাম্মদপুরের আরেক ছিনতাই স্পট তুরাগ নদীর ওয়াকওয়ে। গত ৮ সেপ্টেম্বর এখানেও দুই ছিনতাইকারীকে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। মারা যায় ১ জন। স্থানীয়রা বলেন, ওয়াকওয়ে নিয়মিত ঘটে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সেদিনও ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় গণপিটুনিতে এক ছিনতাইকারী মারা যায়।
 
শুধু পথচারী, কিংবা অটোরিকশার যাত্রীকেই নয়, নগদ টাকা নিয়ে চলাচল করা ব্যক্তিদেরও টার্গেট করছে ছিনতাইকারীরা। ৬ সেপ্টেম্বর বসিলায় প্রকাশ্যে এক কুরিয়ার ডেলিভারি ম্যানকে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করা হয়।
 
১৩ সেপ্টেম্বর তুরাগ হাউজিংয়ে ময়লার টাকা উত্তোলন করতে গেলে ম্যানেজারকে অস্ত্রের মুখে ৬০ হাজার টাকা ছিনতাই করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে ভুক্তভোগীকে ফোনে হত্যার হুমকি দেয় ছিনতাইকারীরা।
 
জামিনে বেরিয়ে অভিযুক্তরা আবারো একই এলাকায় ছিনতাইয়ে জড়িত হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর। তিনি জানান, যে কয়েকদিন হাজতে ছিল ততোদিন কিছুটা উৎপাত কম ছিল। তবে জামিনে বের হয়ে আবারও ছিনতাইয়ে জড়িত হয়েছে চক্রটি।
 
এদিকে, একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসী আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাই গণপিটুনির অন্যতম কারণ। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাদেরকে সব সময় ভয়ের মধ্যে থাকতে হয়। তাই যাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার কথা তারা যখন ব্যর্থ হচ্ছে, তখন বাধ্য হয়ে নিজের জীবনের প্রয়োজনে আইন হাতে তুলে নিচ্ছেন।
 
 
র‌্যাব বলছে, অপরাধপ্রবণ এলাকায় বাড়ানো হয়েছে টহল। র‌্যাব-২ এর অধিনায়ক মো. খালিদুল হক হাওলাদার বলেন, ৭০০ জনের বেশি ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। মোহাম্মদপুর, ঢাকা উদ্যান, হাজারীবাগ আদাবরসহ অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই র‌্যাবের টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।
 
তবে পুলিশের দাবি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটা মাত্রই আসামি গ্রেফতার হচ্ছে। ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মো. ইবনে মিজান বলেন,  শহরতলি এলাকাগুলোর দিকে মনোযোগ দেই, তখন অপরাধীরা মেইন রোডে চলে আসে। আবার মেইন রোডে মনোযোগ দিলে তারা শহরতলি এলাকাগুলোতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। সবকিছু মিলিয়ে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।
 
মোহাম্মদপুর অপরাধমুক্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত টহল ও নজরদারি বাড়ালে কমতে পারে ছিনতাইয়ের ঘটনা।