
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কটকে জিইয়ে রেখে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে ভারতকে অনুপ্রবেশের পথ করে দেয়ার অপচেষ্টা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের অবস্থান পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে পারে বলে তিনি হুঁশিয়ার করেন। অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারত ইতোমধ্যে শিলিগুড়িতে ‘তিস্তা প্রহার’ নামে সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক সঙ্কট ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তা দীর্ঘায়িত করতে পারলেই ভারত আগ্রাসন চালাবে।
তিনি বলেন, ড. ইউনূসকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্যে নৈরাজ্যকর পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। ভারত তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশকে আবারো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে। এর আগে যেমন ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী শাসনের নামে ভারত বাংলাদেশকে শোষণ করেছে দেশটি তা আবারো করতে চাচ্ছে। তারা বারবার হুমকি দিচ্ছে আমাদের উত্তরের ওই অঞ্চলটুকু যেকোনো সময় দখল করে নিতে পারে।
দৈনিক নয়া দিগন্তকে সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক শাহীদুজ্জামান এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক এম শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারত বাংলাদেশের উত্তরে তার বাগডোর ও হাসিমারা এয়ারবেজে অত্যন্ত উচ্চমানের মিসাইল ও বিমান মোতায়েন করেছে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা নিরাপত্তা হুমকি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা এই বিশ্লেষক পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব হলো তারা যেন তাদের গৌরব বজায় রাখে, জনগণ যেন তাদের সাথে থাকে। প্রফেসর ইউনূসের হাত যত তারা শক্তিশালী করবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে তত আমাদের দেশ সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা পাবে। বাংলাদেশের সাথে চীনের অসাধারণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। তখন আমরা দেখব ভারত বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখছে। এখন ভারত চাচ্ছে বাংলাদেশকে ছুড়ে ফেলে দিতে। কিছু কুলাঙ্গারের কারণে বাংলাদেশ ভারতের দ্বারা এভাবে অপদস্থ হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ড. ইউনূস ও ড. খলিলের উদ্যোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রচণ্ড সম্মান করবে বলে আমরা আশা করি। রোহিঙ্গারা আবার তাদের দেশে ফেরত যাবে। আরাকান আর্মির সাথে রাখাইন রাজ্যের সাথে আমাদের একটা আলাদা সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ভারত পাকিস্তানসহ বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের একটা নতুন চ্যাপ্টার ওপেন হবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতিতে একটা অসাধারণ পরিবর্তন আসবে যার ফলে আগামীতে যারা নির্বাচিত হয়ে সরকারে আসবেন তারা অনেক কিছুই অর্জিত হিসেবে ড. খলিলের প্রতি গ্রেটফুল ও গ্রাটিচুয়েড হয়ে তাকে ধন্যবাদ জানাবে। সেই পথ যেন তারা রুদ্ধ না করে আমি এটাই আশা করব।
নয়া দিগন্ত : বিতর্ক শুরু হয়েছে করিডোর নিয়ে, আরাকানে মানবিক করিডোর নিয়ে বিভ্রান্তি কাটছে না, অভিযোগ উঠছে বাংলাদেশকে প্রক্সি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই তো জনমনে শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে তাই নয় কি?
এম শাহীদুজ্জামান : বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে গত পঞ্চাশ বছরে টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে করিডোর। ওয়াটার শেড হিসেবে বিষয়টিকে বিবেচনা করে বলতে পারি দেশের নিরাপত্তা ও কূটনীতি নিয়ে ড. খলিলুর রহমান যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার সাথে সেনাবাহিনীর কোনো দূরত্ব নেই যা তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
আগের দিন নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সাথে তার দেখা হয়ে থাকলে, এ বিষয়ে কথা হয়ে থাকা মানে হলো তিনি এ বিষয়ে ব্রিফড ছিলেন। এরপরও কেন করিডোরের বিষয়টি দরবারে সেনাবাহিনী প্রধান উত্থাপন করলেন তা স্পষ্ট নয়। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের বাস্তবতায় এখানে করিডোরের কোনো বিষয়ই আসে না। নিরাপত্তা উপদেষ্টা সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, এটা নিয়ে আলাপ হয়নি, হবেও না। খলিলুর রহমানের ওপর কত বড় সংবেদনশীল দায়িত্ব রয়েছে তা অনুধাবন করে সেনাপ্রধানের উচিত ছিল এর সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করা।
নয়া দিগন্ত : তাহলে কি আমাদের স্টেকহোল্ডাররা খুব বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না?
এম শাহীদুজ্জামান : দেখেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি গত ১৫ বছরে একেবারেই গুটিয়ে ছিল। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ‘কারো সাথে বৈরিতা নয় সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব’ হওয়ায় কারো সাথে কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়নি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি। চীনের সাথে অভূতপূর্ব সম্ভাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। হাসিনার শাসনামলে চীনের সাথে সম্পর্ক একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। ভারতের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক ছিল তাতে মিয়ানমার আমাদের জায়গাই দখল করে নেয়নি মিয়ানমারের আগ্রাসী নীতি বাংলাদেশকে গ্রাস করে ফেলার শঙ্কা তৈরি হয়। এ রকম একটা পরিস্থিতি শেখ হাসিনা সৃষ্টি করেছিল। সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পররাষ্ট্রনীতিতে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অর্জন করেছে। ড. খলিল মার্কিন নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সাথে যে আলোচনা করেছেন অতীতে বাংলাদেশের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপদেষ্টা তা অর্জন করতে পারেননি। দীর্ঘকাল জাতিসঙ্ঘে কর্মরত থাকায় ড. খলিল যে যোগাযোগগুলো তৈরি করতে পেরেছিলেন তা ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা অফিস তার ওপর আস্থা রাখছে। বার্মা অ্যাক্ট আবারো কার্যকর করার এ সম্ভাবনায় ড. খলিল এমন এক সময় সক্রিয় হলেন যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ভারতের ওপর তেমন আস্থা রাখেননি।
মিয়ানমারের মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ঢাকায় এসে যে বৈঠক করেন যাতে বুঝা যায় ড. খলিল রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনা করছেন। যখন কি না ভারতের প্ররোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে রাখতে পারত, কিন্তু তা না করে উল্টো অসাধারণ একটা মার্কিন তৎপরতা শুরু হলো ঢাকাকে কেন্দ্র করে। একই সময় আমরা দেখতে পেলাম ড. ইউনূস চীন সফর করে দেশটির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ককে এক উচ্চমাত্রায় নিয়ে গেলেন। সেখানেও ড. খলিলের ব্যাপক ভূমিকা ছিল। চীনের কর্মকর্তারা ড. খলিলকে ধরেই ম্যান টু ম্যান ডিপ্লোম্যাসি চালাবার জন্য কাজ করেছেন। যে কারণে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব যদি কখনো ক্ষুণœ হয় বা কোনো দেশ আক্রমণ করে তাহলে চীন পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়। এ ধরনের শক্তিশালী প্রতিশ্রুতি চীন কেবল তার মিত্র দেশকেই দেয়। এমন মিত্র যার জন্যে যে প্রয়োজনে যুদ্ধে দাঁড়াবে পাশে। এমন মিত্রতা চীনের খুব কম দেশের সাথে রয়েছে এবং বাংলাদেশ সেই তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। চীনের এই ঘোষণার পর ড. খলিল কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ঢাকায় ডিল করেছে। এ ধরনের স্পর্শকাতর গোপন বিষয় সম্পর্কে মিডিয়াকেও জানিয়েছেন তিনি।
ড. খলিল বলেছেন, আমাদের সাথে এমন একটা সম্পর্ক হয়েছে যেখানে জাতিসঙ্ঘ বাংলাদেশের ওপর আস্থা রেখেছে মিয়ানমারে খাদ্যশস্য পৌঁছে দেবার। একই সাথে আরাকান আর্মির সাথে ভবিষ্যতে এমন একটা সম্পর্ক বাংলাদেশের গড়ে উঠবে যাতে রোহিঙ্গাদের সেখানে ফেরত পাঠানো যায়। আর এ ব্যাপারে মিয়ানমারের কোনো আপত্তি থাকবে না। আগে আরাকান আর্মির কাছ থেকে এ ধরনের আশা আমরা করতে পারিনি। বরং কয়েক মাস আগে মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছিল এবং আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। আরাকান আর্মির বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীলতার বাস্তবতায় রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর একটা প্রক্রিয়া শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের সাথে একটা নির্ভরযোগ্য সম্পর্ক গড়ে তুলে আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করেছে ইউনূস সরকার। কারণ আরাকান আর্মির কোনো বৈধতা নেই বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব বাংলাদেশ সফরকালে আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে আরাকান আর্মি জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।
ড. খলিলুর রহমান এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন আরাকান আর্মির অস্তিত্ব, ভবিষ্যৎ ও নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণ ভেস্তে যেতে পারে, কারণ সেখানে তাতমাডাও (মিয়ানমার আর্মি) যা করেছে তাতে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তাতমাডাওয়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী সবধরনের সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ রেখে রাখাইনের জনগোষ্ঠীকে না খাইয়ে মারবে তাতে আরো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে এবং আসছে। এই জেনোসাইডাল প্লান বাস্তবায়ন হলে আরাকান আর্মি কোথায় যাবে। এই পরিস্থিতিতে ড. খলিলুর রহমানের প্রচেষ্টায় আরাকান আর্মি এক ধরনের নির্দিষ্ট অ্যাটিচিউড ডেভলপ করেছে। বাংলাদেশও আশা করছে জাতিসঙ্ঘের সাহায্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ও অন্যান্য সহায়তার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্মা অ্যাক্ট প্রয়োগের মধ্য দিয়ে আরাকান আর্মি বাংলাদেশের ওপর এতখানি নির্ভরশীল হবে যে তাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়া ছাড়াও বাংলাদেশের সাথে তাদের যে সমুদ্রসীমা, তাদের যে ভৌগোলিক অবস্থান তার বেশির ভাগ শেয়ার করবে তারা বাংলাদেশের সাথে।
ভূকৌশল রাজনীতির অধ্যাপক হিসেবে বিষয়গুলো উপলব্ধি করছিলাম এবং খলিলুর রহমানের প্রচেষ্টা সফল হবে বলে মনে করেছিলাম। কিন্তু হতাশ হলাম যেখানে সেনাবাহিনী প্রধান খুব ভালো করেই জানেন এখানে করিডোরের কোনো ব্যাপারই নেই, রামুতে তার জিওসির সাথে পূর্ণ যোগাযোগ রয়েছে এবং সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সেনাপ্রধান সম্পূর্ণ অবগত, এরপরও তিনি এ নিয়ে কথা বললেন।
নয়া দিগন্ত : করিডোর ও মানবিক করিডোরের মধ্যে বাস্তবে কোনো পার্থক্য আছে কি? করিডোর দেয়া হলে সেখান দিয়ে অস্ত্র যাবে এমন কথাও বলা হচ্ছে।
এম শাহীদুজ্জামান : ড. খলিলুর রহমান সাংবাদিক সম্মেলনে এ নিয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন করিডোর শব্দটি উচ্চারণ করার পর সেই শব্দটি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। করিডোর হচ্ছে যুদ্ধকালীন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে সামরিক বাহিনী এফেক্টেড হলে তাদের সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়, এ টার্মটা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বেলায় প্রযোজ্য নয়। মানবিক করিডোর হচ্ছে একটা বিধ্বস্ত জাতিগোষ্ঠী বা জনগোষ্ঠী যখন খাদ্যাভাব বা চরম নির্মমতার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করার অবস্থায় পৌঁছে বা নেশনাল ক্লিনজিং বা অ্যাপার্থাইডের মতো বাস্তবতায় সেখানে সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়।
নয়া দিগন্ত : সাংবাদিক সম্মেলনে খলিলুর রহমান কিন্তু বলেছেন যে করিডোরের প্রচারণা প্রতিবেশী একটি দেশ থেকেই শুরু হয়েছে। কেন তারা এটি করছে?
এম শাহীদুজ্জামান : ড. খলিলুর রহমান যাকে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আস্থায় নিয়েছেন এবং এটা কূটনীতিতে তার দীর্ঘকালীন অভিজ্ঞতায় এটা সম্ভব হয়েছে তা ব্যর্থ হোক। কূটনীতি হচ্ছে কোশ্চেন অব ট্রাস্ট, ডিগনিটি। চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এই অবস্থান অর্জন করার পর ড. খলিলুর রহমান যদি এগিয়ে যেতে পারেন তাহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হতে পারে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থাকার ফলে এখন ড. খলিলের এমন উদ্যোগ ভারতকে একেবারে হতবাক করে দিয়েছে। মোদি বাংলাদেশের ওপর অযাচিত সব অত্যাচার শুরু করে দিয়েছেন। প্রত্যেক রাতে তাদের দেশের নাগরিককে আমাদের দেশে পুশ-ইন করছেন। সীমান্তে গুলি করে বাংলাদেশী হত্যা ও ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করেছে, আন্তর্জাতিক অবলিশেনগুলো ভায়োলেট করছে, পানির প্রশ্নে পাকিস্তানের সাথে যে আচরণ করছে আমাদের সাথে সেই একই আচরণ করছে। এমনকি তারা বারবার হুমকি দিচ্ছে তারা আমাদের উত্তরের চিকেন নেকের পাশের অঞ্চলটুকু যেকোনো সময় দখল করে নিতে পারে। সেই প্রক্রিয়া তারা সৃষ্টি করছে।
নয়া দিগন্ত : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আমাদের সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি কিভাবে জড়িত?
এম শাহীদুজ্জামান : রোহিঙ্গারা যদি সত্যি সত্যি আগামী বছর ফেরত যায় সেখানে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসঙ্ঘের অবদান থাকে এবং আমাদের সামরিক বাহিনীর যদি অংশীদারিত্ব থাকে তাহলে তো পুরো পশ্চিমা বিশ্বে আমাদের সেনাবাহিনীর মর্যাদা অনেক উচ্চতায় উঠে যাবে। সেনা প্রধান ডিসেম্বরের মধ্যেই তিনি নির্বাচন চান। এটা তো তার আওতায় পড়ে না। তিনি চাচ্ছেন যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয় ততই যেন ড. খলিলের অর্জনের সময়টুকু আরো সঙ্কুুচিত হয়ে যায়। তিনি এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করছেন যেন ড. খলিল একজন ভিলেন।
নয়া দিগন্ত : সেনাবাহিনী প্রধান তো একা নন, রাজনৈতিকদলগুলো তো করিডোরের বিরোধিতা করছে...
এম শাহীদুজ্জামান : এ ক্ষেত্রে অপর ভিলেন হচ্ছে বিএনপি। তারাও দাবি করছে তিনজন উপদেষ্টাকে সরাতে হবে। কথা নেই বার্তা নেই অবিশ্বাস্য দাবি, এটাই কি জিয়াউর রহমানের পার্টি? বিএনপি নেতা রিজভি এবং তার চেয়েও বেশি সালাহউদ্দিন একেবারে জোর করে বলছেন, ড. খলিলকে বিতাড়িত করতে হবে। ড. খলিলকে উপদেষ্টা হিসেবে বিদায় করতে হবে। এটা কিভাবে সম্ভব? যে দলটি প্রেসিডেন্ট জিয়ার হাতে গড়ে ওঠা এবং পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে অসাধারণ অর্জন করেছিল। এমনকি আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ড. খলিলের যে মেধা আজকে জিয়া বেঁচে থাকলে ওনাকে কাছে টেনে নিতেন। তার মেধাকে কাজে লাগাতেন। দেড় বছর আমি তার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছি, তাকে অনেক কাছে থেকে দেখেছি।
তিনি এভাবে ১৯৭৮ সালে আজকের বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অডিয়েন্স থেকে টেনে নিয়ে বলেছিলেন আপনি আমার দলে যোগ দিন। আমি তখন একজন তরুণ প্রভাষক। আমার চোখের সামনে মোশাররফ জিয়াউর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। তিনি কি জানেন না, প্রেসিডেন্ট জিয়া মেধাকে কতখানি গুরুত্ব দিতেন, এই খন্দকার সাহেব কিভাবে আজকে বসে প্রস্তাব দিলেন যে ড. খলিলকে বহিষ্কার করতে হবে। আজকে প্রেসিডেন্ট জিয়া বেঁচে থাকলে ড. খলিলের এই অমর্যাদা কখনো হতে পারত না।
নয়া দিগন্ত : ড. খলিলের বিষয়ে ভারত কেন এতটা সংবেদনশীলতা দেখাচ্ছে?
এম. শাহীদুজ্জামান : ভারত প্রচণ্ড উদ্বেগের সাথে বাংলাদেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যাবলির দিকে খেয়াল রাখছে। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে ব্যাংককে খলিলুর রহমানের সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই ভারত তার অপসারণ চাচ্ছে, ভারতীয় মিডিয়ায় তাকে নিয়ে অনেক অপপ্রচার চলছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের বক্তব্য থেকেও বুঝা যায় খলিলুর রহমান রেসপেক্টেড অ্যান্ড আউটস্ট্যান্ডিং ডিপ্লোম্যাট।
এখন চীনকে লালমনিরহাটে যে এয়ারবেজ তৈরি করতে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে তা যদি সত্যি সত্যি বাস্তবায়ন হয় তাহলে ভারতের জন্য এটা হবে একটা ভূমিকম্পের মতো। ভারত এর কাছে তার বাগডোর ও হাসিমারা এয়ারবেজে অত্যন্ত উচ্চমানের মিসাইল ও বিমান মোতায়েন করেছে। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা নিরাপত্তা হুমকি। আমরা যদি লালমনিরহাটে চীনকে আমন্ত্রণ জানাই সেটা সম্ভব হবে শুধু ড. ইউনূসের সম্মতি এবং ড. খলিলের কূটনৈতিক কার্যকলাপে। সেই প্রক্রিয়াটাকে ভারত চায় ধ্বংস করে দিতে। ভারত চায় সেটা যেন না হয়।
নয়া দিগন্ত : ড. খলিল নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ পাওয়ার পর এসব কারণেই কি দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু হয়েছে? বলা হচ্ছে বেসরকারি ব্যক্তি হয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হয়েছেন তিনি।
এম শাহীদুজ্জামান : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই তার বিরুদ্ধে চরিত্র হনন কিংবা বিরোধিতা করা হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন উচ্চপদে যাওয়ার সময় তার ব্যক্তিগত জীবনের খুঁটিনাটি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তিনি ৩০ বছর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব তিনি ছাড়েননি। আমেরিকান পাসপোর্ট নেননি। ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সিভিলিয়ান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাই। পাকিস্তানেও এর আগের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সিভিলিয়ান ছিলেন। এটা স্বাভাবিক। এটা মেনে নিতে না পারলে ইনফিয়রিটি কমপ্লেক্সের ব্যাপার হবে। ভারতে একজন ডিফেন্স সেক্রেটারিকেও দেশটির সেনাপ্রধান স্যালুট করে। বাইরে ওয়েটিং রুমে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাসিসটেন্ট ডিফেন্স সেক্রেটারিকে সেদেশের সেনাপ্রধান স্যালুট করে।
নয়া দিগন্ত : ইন্টারনেটের এই যুগে তো বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি সারাবিশ্ব দেখছে? এখানকার পরিস্থিতিতে তাদের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে?
এম শাহীদুজ্জামান : অবশ্যই। জাতিসঙ্ঘ বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্ব বলেন এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আপনি বুঝতেই পারবেন না যে, তারা কিন্তু এসব পর্যবেক্ষণ করে। ‘দে উইল গিভ ইউ দি রোপ, সো দ্যাট ইউ ক্যান হ্যাং ইয়োরসেল্ফ।’ আপনাকে যথেষ্ট সুযোগ দেবে। বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যা নিয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনকে নিয়ে প্রশ্ন তোলা, প্রত্যাখ্যান করার মানসিকতা, এই যে এত ধ্বংস, এত গোলাগুলি, গণহত্যা, সেনাবাহিনীর যেসব জেনারেল সরাসরি এসব খুনের সাথে জড়িত ছিল, এমনকি যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ঢুকে বাংলাদেশে গোলাগুলি করেছে, পুরো বিষয়টা ভারতের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং হাসিনাকে যে প্লেনে ফেরত পাঠানো হবে সেখানেও অজিত দোভালের সিদ্ধান্ত ছিল। এসব জানাজানি হয়েছে। এসব বিষয় আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে এলে এবং যখন আসবে তখন আপনি কোথায় পালাবেন। এখানে যে সংশ্লিষ্টতা এটা বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এগুলোর বিচার হওয়া উচিত। আমাদের অত্যন্ত মেধাবী ও সাহসী অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তার সুরাহা হওয়া উচিত। অনেককে বরখাস্ত করা হয়েছে তাদের চাকরি ফেরত দেয়া হয়নি। তারা অত্যন্ত হতাশ ও ক্ষুব্ধ।
নয়া দিগন্ত : সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?
এম শাহীদুজ্জামান : আমাদের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভূমিকা রাখছে তা অ্যাবসুলিউটলি হুমড়ি খেয়ে পড়বে যদি ড. খলিলুর রহমান না থাকে। ড. ইউনূসকেও তার অথর্ব উপদেষ্টাদের রিপ্লেস করতে হবে। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কার ইচ্ছায়, কী কারণে তাকে উপদেষ্টা করা হলো। তিনি তো পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলো বোঝেন না। আজকে ড. খলিল যদি না থাকে তাহলে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যে ভূমিকা রাখছে, পররাষ্ট্র নিরাপত্তায় যে অসাধারণ পরিবর্তন আসছে, সব হুমড়ি খেয়ে পড়বে। এই যে আজকে দাবি করছে বিএনপি আর সেনাবাহিনী প্রধানের যে অ্যাটিচিউড, ড. খলিলকে যদি বাধ্য করা হয় চলে যেতে তাহলে ভারত সাথে সাথে এই সুযোগ নিয়ে ফের তার আধিপত্য গড়ে বসবে বাংলাদেশের ওপর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঢাকায় বলেছে প্রফেসর ইউনূসের ইচ্ছা যত দিন চান রিফর্ম করে তারপর নির্বাচন দেবেন। এমনকি প্রবাসীরা বলছেন যদি ড. ইউনূস বা খলিলকে সরানো হয় তাহলে রেমিট্যান্স বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। পুরো পশ্চিমা বিশ্ব মুখ ঘুরিয়ে নেবে। আর এটাই ভারত চায়। ভারত চাইছে যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা পশ্চিমা বিশ্ব যেন ড. খলিলকে সরিয়ে ফেলার ফলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, এখানে যেন এ্যানার্কি সৃষ্টি হয়, আমাদের সেনাবাহিনী যেন মুখ থুবড়ে পড়ে, সেই সুযোগে ভারত বাংলাদেশে সোজা একটা ডিভিশন পাঠিয়ে দখল করে নেবে। এর পুরোটাই একটা ষড়যন্ত্র। ড. ইউনূস বা ড. খলিলকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয় তাহলে ভারতের জন্য ছয় মাসও লাগবে না বাংলাদেশকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে। আবার সেই আগের মতো ঢাকায় অজিত দোভাল এসে সমস্ত কিছু বাৎলে দেবে।
প্রশাসনে এখনো অনেক আওয়ামী লীগাররা লুকিয়ে রয়েছে। তাদের ক্লিনআপ করা হয়নি। আমাদের ইন্টেলিজেন্স সংস্থাগুলো নানাভাবে ডিস্টার্বড। সামরিক বাহিনীর সংস্কারে এখনো হাতই দেয়া হয়নি। সংবিধানে যে ধারা রয়েছে যেটা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত অপমানজনক যে দেশে যদি গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয় তাহলে সেনাবাহিনী কোনোরকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এই রকম ধারা হাসিনা সংশোধনী দিয়ে করেছে। অথচ সেনাবাহিনী হচ্ছে সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সামরিক বাহিনী দেশের গর্ব। যদি সুপ্রিমকোর্ট ফেইল করে যদি জুডিশিয়ারি কলাপ্সড করে তখন একমাত্র সামরিক বাহিনীর দিকেই সংবিধান তাকিয়ে থাকবে দেশের গণতন্ত্র বা সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য, কিন্তু সেই পথ বন্ধ করে দিয়েছেন হাসিনা। আজকে সংবিধানের এ বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলছেন না। স্বয়ং সামরিক বাহিনীও এ বিষয়ে নিশ্চুপ। এমনো ক্লজ ইনসার্ট করা হয়েছে যে সামরিক বাহিনী কোনোভাবে ফ্যাসিজম রোধ করতে হস্তক্ষেপ করত তাহলে সেনাবাহিনী প্রধানকে মৃত্যুদণ্ড মোকাবেলা করতে হতো। মৃত্যুদণ্ডের ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে এবং কেন এগুলো সংশোধন করা হচ্ছে না।
এখন যদি রাজনৈতিক দলগুলো মনে করে অন্যান্য দেশকে ব্যবহার করবে তা মোটেও পারবে না। আজকে বিএনপি মারাত্মক ভুল করছে। আজকে বিএনপি ভারতের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে। কেননা কোনো পশ্চিমা দেশ বিএনপির অবস্থানের প্রতি সমর্থন দিচ্ছে না। ভারত নিজেই আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভিলেনের অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ণবাদী পলিসি। ড. খলিল মিডিয়াকে বলেছেন, যদি আরাকান আর্মি ইনক্লুসিভ না হয়, রোহিঙ্গাদের না নেয়, তাহলে বাংলাদেশ সরকার মনে করবে আরাকান আর্মি প্র্যাকটিসিং অ্যাপার্থাইড। এই রকম এঙ্গেলে আগে কেউ কি বলেছে? আরাকান আর্মিকে ব্যাকফুটে ফেলতে মেধা লাগবে। এই অ্যাপার্থাইডের অপবাদ দেয়ায় আরাকান আর্মি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে বাধ্য হচ্ছে। এই বুদ্ধিটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কারো ছিল না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পশ্চিমা বিশ্বে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। এটাও খেয়াল রাখতে হবে সেনাবাহিনীকে কোনোরকম বিতর্কিত করা যাবে না। সেনাবাহিনীর ৯৮ শতাংশ জনগণের সাথে রয়েছেন। তারা বারবার প্রমাণ করেছেন জনগণের পাশে ছিলেন এবং থাকবেন। কিছু ভারতীয় দালাল সামরিক বাহিনীর সততা, যোগ্যতাকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে। ভারতকে পথ করে দিতে চাচ্ছে। কাজেই তাদেরই দায়িত্ব তারা যেন তাদের গৌরব বজায় রাখে। তারা যেন জনগণের সাথে থাকে। প্রফেসর ইউনূসের হাত যত তারা শক্ত করবে বিশ্বে আমাদের দেশ ততটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
নয়া দিগন্ত : আপনি কি মনে করেন যে সব পক্ষেরই আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন?
এম শাহীদুজ্জামান : ড. ইউনূস রাষ্ট্রের অভিভাবক। তার ওপরে আর কেউ নেই। যদি তিনি কোনো বাধা পান, তাহলে তিনি প্রকাশ্যে এই ব্যক্তিকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন। যে কেউ অমান্য করে, তাকে বিচারিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে। এই দেশ তার চার পাশে ঘোরে এবং সামরিক প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক দলের কোনো ব্যক্তি তার নেতৃত্বকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা করে জনরোষ থেকে বাঁচতে পারে না। দেশ কোনো সমান্তরাল ক্ষমতার চ্যালেঞ্জ বহন করতে পারে না। যে কেউ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ভার বহন করতে অক্ষম, তাকে তার উত্তরসূরির জন্য পথ ছেড়ে দিতে হবে। যদি সে তার ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তাহলে সবচেয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটতে পারে। এই দেশ কখনই লুটেরা এবং বিশ্বাসঘাতকদের সহ্য করবে না। অধ্যাপক ইউনূস জাতিকে প্রস্তুত করার পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি দায়িত্বে আছেন এবং তরুণ প্রজন্মের আস্থা ও বিশ্বাসের দ্বারা তাকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। আশা করি তিনি কখনো পদত্যাগের কথা ভাববেন না।
যদি কেউ জাতির অর্থনৈতিক দুর্দশা পুনরুদ্ধারের জন্য তার মূল্য ভুল বোঝেন, অথবা আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেই ব্যক্তিকে নির্দয়ভাবে মীর জাফর হিসেবে তাড়িয়ে দেয়া হবে! ভারতের দালালদের বিরুদ্ধে জনগণের ধৈর্য, সেই সাথে ফ্যাসিবাদী অতীতের লুকানো প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে জনগণের ধৈর্য স্পষ্টভাবে চিহ্নিত। এই ধরনের বিশ্বাসঘাতকরা মানবিক সহনশীলতার সীমা বুঝতে অনেক সময় ব্যয় করে। অবশ্যই তার উপদেষ্টাদের অর্ধেকই প্রতিস্থাপনের যোগ্য কারণ তারা ট্রোজান ঘোড়া হতে পারে অথবা সাধারণভাবে অসুস্থ রাইডার হতে পারে! স্নায়ুর যুদ্ধে যে ধৈর্যের প্রয়োজন তা সময়সাপেক্ষ কিন্তু এর জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন। ড. খলিলুর রহমান তার দূরদর্শিতা এবং আরাকান আর্মির ওপর প্রভাব বিস্তারের পর যে দক্ষ এবং দৃঢ় কূটনীতির সেবা বেদনাদায়কভাবে একত্র করছেন, তা অবশ্যই তাকে নির্জীব সমালোচকদের থেকে অনেক এগিয়ে রাখবে! তাই বার্তাটি স্পষ্ট! এখন হয়তো তারা ছাড়া অন্ধকার রাত, কিন্তু অন্ধকার একদিন মুছে যাবে! জাতির বিবেক আওয়ামী-মনের বিশ্বাসঘাতকদের প্রত্যাখ্যান করে!