Image description

গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছে তুরস্কর। দেশটির দাবি, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেলেও ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে তা লঙ্ঘন করছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত গাজা শান্তি পরিকল্পনার অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান।

রোববার (২১ ডিসেম্বর) ডেইলি সাবাহর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের মিয়ামিতে কাতার, মিসর ও তুরস্কের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে গাজা শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ফিদান বলেন, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন শান্তি প্রক্রিয়াকে ‘অত্যন্ত জটিল’ করে তুলেছে।

ফিদান জানান, মিসরের শার্ম আল শেখ শান্তি সম্মেলনে গৃহীত চুক্তির ভিত্তিতে গাজা শান্তি পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল। প্রথম ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর এবং সর্বশেষ জিম্মি মুক্তির পর এখন দ্বিতীয় ধাপে অগ্রসর হওয়ার শর্তাবলি নিয়ে আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, শার্ম আল শেখের পর গতকালের বৈঠকটিই সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন ফরম্যাটে আলোচনা চালিয়ে গেছি।

বৈঠককে আশাব্যঞ্জক আখ্যা দিয়ে ফিদান জানান, প্রথম ধাপে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেগুলো নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে তুরস্ক হিসেবে আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন শান্তি পরিকল্পনাকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে এবং দ্বিতীয় ধাপে যাওয়ার পথে বড় বাধা তৈরি করছে। ইসরায়েলের চলমান লঙ্ঘন পরিস্থিতিকে অত্যন্ত কঠিন করে তুলছে।

ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েল বারবার চুক্তি ভঙ্গ করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া দুই বছরের যুদ্ধে গাজায় ৭০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু এবং আহত হয়েছে আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৯৫ জন নিহত এবং ১,০৮৮ জন আহত হয়েছে।

ফিদান আরও বলেন, বৈঠকে গাজার পুনর্গঠন নিয়ে একটি প্রাথমিক পরিকল্পনাও উপস্থাপন করা হয়েছে। গাজা নিয়ে আমাদের কাছে ৩টি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, গাজা পরিচালিত হবে গাজার জনগণের দ্বারা। দ্বিতীয়ত, গাজাকে কোনোভাবেই ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত করা যাবে না। তৃতীয়ত, গাজায় যা কিছু করা হবে, তা গাজার মানুষের কল্যাণেই করতে হবে।

তিনি জানান, গাজার পুনর্গঠনে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে, তবে সেই বিনিয়োগের সুফল অবশ্যই গাজার জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে।

বৈঠকে গাজার প্রশাসন ধীরে ধীরে টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটির কাছে হস্তান্তর, একটি শান্তি পরিষদ গঠন এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন নিয়েও আলোচনা হয়। তবে এই বাহিনীতে কারা অংশ নেবে, তা নিয়ে ইসরায়েলের আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে তুর্কি সেনা অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করছে তেল আবিব, যদিও আঙ্কারা আফগানিস্তান ও বলকান অঞ্চলে শান্তিরক্ষা মিশনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে অংশগ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।