যুদ্ধবিরতির পর আহমদ হামিদ যখন গাজা শহরে তার বাড়িতে ফিরে আসেন, চুক্তি অনুযায়ী ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত এলাকার সীমারেখা তখন তার বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ছিল। ‘হলুদ সীমারেখা’ (ইয়েলো লাইন) বলে কথিত এ সীমানা এখন তার বাড়ি থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
মিডল ইস্ট আইকে ৩১ বছর বয়সি এই সাংবাদিক বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে আমাদের বাড়ি ছিল বিপজ্জনক এলাকায় এবং আমাদের জন্য বাড়ি ফেরা ছিল কঠিন। যুদ্ধবিরতির পরও আমরা দুই সপ্তাহ অপেক্ষা করছিলাম ফেরা নিরাপদ হবে কি না নিশ্চিত হওয়ার জন্য।’
এক পর্যায়ে গাজা শহরের শুজাইয়া মহল্লায় নিজেদের বাড়ি ফেরে পরিবার। কিন্তু এর পরপরই আবার তাদের পাশে যুদ্ধ শুরু হয়।
তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা বোমাবর্ষণ, বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া ও গুলির শব্দ শুনি। সূর্যাস্তের পর থেকেই সব শুরু হতো এবং একটানা ভোর পর্যন্ত তা চলত।’
শুরুতে তারা চিন্তা করেছিলেন, হলুদ সীমারেখা ঠিকই আছে। দূর থেকে বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনছেন তারা।
কিন্তু এখন বাড়ির জানালা থেকেই হলুদ সীমারেখার কংক্রিট ব্লক দেখতে পান তিনি। গাজার মধ্যে অস্থায়ী সীমারেখা ক্রমেই বদলে যাচ্ছে, যা ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করছে।
গাজা উপত্যকায় গত অক্টোবরে যুদ্ধবিরতির পর ইসরাইল নিজ সেনাদের হলুদ সীমারেখায় প্রত্যাহার করে নেয়। ওই সীমারেখাকে গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য পারাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পুরো গাজাকে উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব এ সীমারেখা দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়।
কিন্তু যুদ্ধবিরতি শুরুর পরপরই তা ক্রমেই পশ্চিম দিকে ফিলিস্তিনিদের বসবাসের এলাকায় প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে গাজার ৫৩ শতাংশ ভূখণ্ড ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইসরাইলের সীমানা বিস্তারের জেরে ফিরে আসা অনেক পরিবারই তাদের আবাস ছেড়ে আবার নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে যাচ্ছেন। কিন্তু এ পরিস্থিতির চিত্র প্রায় কোনো সংবাদমাধ্যমেই তুলে ধরা হচ্ছে না।
হামিদ বলেন, ‘বিপুলভাবে বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটছে কিন্তু কেউ তা খবরে আনছে না। নীরবেই পরিবারগুলো পালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধের সময় মানুষ আমাদের দুর্ভোগের বিষয়ে কথা বলত, যার ফলে আমাদের বেদনাকে হালকা মনে হতো। কিন্তু এখন কেউই কথা বলছে না। আমাদের দুর্ভোগ কল্পনা করুন, যেখানে দুবছর আগ্রাসনের পরও আমাদের বাড়ি টিকে থাকায় আল্লাহর শোকর করেছি। এখন যুদ্ধবিরতির মধ্যে তা হারাচ্ছি।’
এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। শনিবার গাজা শহরে ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসাম ব্রিগেডের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার রায়েদ সাদ নিহত হয়েছেন। হামাস নেতা খলিল আল-হাইয়া রোববার এক ভিডিও বিবৃতিতে এ তথ্য জানান। এর মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির ভয়াবহ লঙ্ঘন হয়েছে অভিযোগ করেন তিনি।
রোববার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় পাঁচজন নিহত ও ৪৫ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আগ্রাসনের দুবছর ও যুদ্ধবিরতির দুই মাসে মোট ৭০ হাজার ৬৬৩ জন নিহত এবং এক লাখ ৭১ হাজার ১৩৯ জন আহত হন।