Image description

ভারত ও রাশিয়া দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। দুই দেশের কৌশলগত ও পারষ্পরিক সম্পর্ক নানা সময়েই দৃঢ় হয়েছে। সেই ধারাবাহিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে ভারত–রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামীকাল বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে আসছেন। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর এটাই হবে তাঁর প্রথম ভারত সফর।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সফরকালে দুই দিনের বৈঠকে প্রতিরক্ষা, পারমাণবিক শক্তি, জ্বালানি, মহাকাশ, প্রযুক্তি ও বাণিজ্য ইত্যাদি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হবে। আঞ্চলিক নিরাপত্তার ব ব্যবস্থা নিয়েও আলোচনা হবে। বিশেষ নজর থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। এর মধ্যে রাশিয়ার আধুনিক এস-৫০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আলোচনার এই দিকগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, সামরিক সম্পর্ক এখনো দুই দেশের অগ্রাধিকারের কেন্দ্রে রয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তানের ড্রোন হামলা ঠেকাতে রাশিয়ার এস-৪০০ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ব্যবহার করেছিল ভারত।

পশ্চিমা দেশগুলোর অনীহার কারণে দশকের পর দশক ধরে ভারতীয় সামরিক ভান্ডারের বেশির ভাগই এসেছে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পরবর্তী সময়ে রাশিয়া থেকে। কিন্তু গত এক দশকে এটা কমে এসেছে।


পুতিনের জন্য থাকবে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয়

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভারত সফরকে কেন্দ্র করে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তুলেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। পুতিনের জন্য নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিসের উচ্চ প্রশিক্ষিত কর্মী, ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের (এনএসজি) শীর্ষ কমান্ডো, স্নাইপার, ড্রোন, জ্যামার ও এআই পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে।

 

আজ বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে পৌঁছাবেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে এক নৈশভোজে অংশ নেবেন তিনি।

পরের দিন রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হবে। শুক্রবার রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন রুশ প্রেসিডেন্ট। এরপর হায়দরাবাদ হাউসে সম্মেলনে যোগ দেবেন এবং ভারত মণ্ডপমে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন তিনি। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভোজসভাতেও অতিথি থাকবেন তিনি।

এনডিটিভি বলছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের ব্যস্ত সময়সূচি চলাকালীন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে চার ডজনেরও বেশি রুশ বিশেষ নিরাপত্তাকর্মী দিল্লিতে পৌঁছে গেছেন।

দিল্লি পুলিশ ও এনএসজির কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুতিনের গাড়িবহর যেসব পথে চলবে সেসব পথে নিরাপত্তা দায়িত্ব পালন করবেন রুশ নিরাপত্তাকর্মীরা। বিশেষ ড্রোনের সাহায্যে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার জন্য তৈরি কন্ট্রোল রুম থেকে পুরো গাড়িবহরকে প্রতি মুহূর্তে নজরদারিতে রাখবেন তারা। প্রেসিডেন্ট পুতিনের যাতায়াতের পথজুড়ে কয়েকজন স্নাইপারও দায়িত্ব পালন করবেন।

এছাড়া জ্যামার, এআই নজরদারি ও ফেইস শনাক্তকরণ ক্যামেরাসহ আধুনিক প্রযুক্তির বিশাল ব্যবস্থাপনায় সাজানো হয়েছে পুতিনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নয়াদিল্লির একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এনডিটিভি বলেছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সফর ঘিরে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাবলয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন দিল্লিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি স্তর সক্রিয় হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রত্যেকটি দল কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখবেন।

বাইরের সব নিরাপত্তা স্তরের দায়িত্বে থাকবে এনএসজি ও দিল্লি পুলিশ। আর ভেতরের সব স্তরের দেখভাল করবে রুশ প্রেসিডেন্সিয়াল সিকিউরিটি সার্ভিস। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে পুতিনের বৈঠকের সময় ভেতরের নিরাপত্তাবলয়ে ভারতের স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপের (এসপিজি) কমান্ডোরাও যুক্ত হবেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুতিন যে হোটেলে অবস্থান করবেন, সেটিতে ইতোমধ্যে দফায় দফায় নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হয়েছে। এছাড়া ভারতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের গন্তব্যের সবগুলো আগেই পরিদর্শন করছেন রুশ নিরাপত্তাকর্মীরা। সম্ভাব্য আকস্মিক গন্তব্যের একটি তালিকাও তৈরি করা হয়েছে এবং সেসব এলাকাও একইভাবে স্ক্যান করা হচ্ছে।

পুতিনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে বিলাসবহুল ভারী সাঁজোয়া লিমুজিন; যা রুশ প্রেসিডেন্ট ব্যবহার করেন। পুতিনের ভারত সফরের জন্য এই অরাস সেনাট মস্কো থেকে আনা হয়েছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে চীনের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে এই গাড়িতে চড়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

‘চাকার ওপর দুর্গ’ নামে পরিচিত সেনাট একেবারে বিলাসবহুল লিমুজিন গাড়ি; যা রুশ অটোমেকার অরাস মোটরস তৈরি করেছে। ২০১৮ সালে এই গাড়ি পুতিনের সরকারি রাষ্ট্রীয় ‌‌‘কোর্তেজ’ যান প্রকল্পের অংশ হয়। সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ায় তৈরি বিলাসবহুল ও সাঁজোয়া গাড়ির একটি বিশেষ কর্মসূচি কোর্তেজ।

সূত্র: এনডিটিভি।