প্রকাশের উপলক্ষ্য
সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী লকডাউন/অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত ৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের পেইজ থেকে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচির ঘোষণা দেয়ার পর ওই দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সড়ক অবরোধের ঘটনা শুরু হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৭ নভেম্বর ফাঁসির রায় ঘোষণার দুই দিন পর (১৯ নভেম্বর, ২০২৫) পর্যন্ত এই সহিংসতা চলমান থাকে। এতে অন্তত ৪ জন ব্যক্তি মারা যান, বহু আহত হন, ২০টির বেশি বাসে অগ্নিসংযোগসহ বহু ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার খবর দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো কীভাবে কভার করেছে তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন (দেখুন এখানে ও এখানে)। এই প্রেক্ষিতে দ্য ডিসেন্ট আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচিতে ঘটনা সহিংসতার সাথে অতীতে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের দ্বারা সংঘটিত তিনটি সহিংসতার ঘটনা মোট চারটি ঘটনায় প্রথম আলোর কাভারেজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছে।
সারসংক্ষেপ
চারটি ভিন্ন রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় পরিচয়ের দল ও সংগঠন কর্তৃক ডাকা কর্মসূচিতে সংঘটিত সহিংসতাকে প্রথম আলো কীভাবে দেখিয়েছে তা যাচাই ও বিশ্লেষণ দেখা হয়েছে এই নিবন্ধে। বিশ্লেষণের জন্য বাছাইকৃত চারটি দলের কর্মসূচিতে সংঘটিত চারটি বড় সহিংসতার ঘটনা হলো:
এক. ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড ঘোষণার পর জামায়াতের কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘটিত সহিংসতা। (১, ২ ও ৩ মার্চের প্রথম আলোর ই-পেপার)।
দুই. ২০১৩ সালে ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশকে ঘিরে ওইদিন ও পরের দিনগুলেরা সহিংসতা। (৬, ৭ ও ৮ মে’র প্রথম আলোর ই-পেপার)।
তিন. ২০১৪ এর নির্বাচনের আগে ও পরে বিএনপি জামায়াত জোটের একাধিক কর্মসূচিতে সংঘটিত সহিংসতা। (আন্দোলনে সহিংসতা সংক্রান্ত কীওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট থেকে ২০১৩ এর আগস্ট থেকে ২০১৫ এর মার্চ পর্যন্ত প্রাপ্ত নিদিষ্ট সংখ্যক প্রতিবেদন)।
চার. ২০২৫ সালের নভেম্বরে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় ঘোষণার আগে ও পরে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সংঘটিত সহিংসতা। (আন্দোলনে সহিংসতা সংক্রান্ত কীওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট থেকে ৮ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত সব প্রতিবেদন)।
(ঘটনাগুলো এবং এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন বাছাইয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে এই রিপোর্টের শেষাংশে ‘বিশ্লেষণ পদ্ধতি’ ও ‘সংবাদ প্রতিবেদন নির্বাচন’ অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।)
এই চারটি ঘটনায় মোট প্রাপ্ত ৩০০টি প্রতিবেদনের মধ্যে সহিংসতা সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলোকে আলাদা করে সেগুলোর শিরোনাম, ছবি, ছবির ক্যাপশন, শব্দ ও ভাষার ব্যবহার, ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদন, সেগুলোর বিষয়বস্তু ও শব্দের ব্যবহার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দৈনিক প্রথম আলো রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে সহিংসতার খবরগুলোকে ভিন্নভাবে চিত্রায়ন করেছে।
প্রথম আলোর চিত্রায়নের ভিন্নতার ব্যাপারটি এরকম: আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সংঘটিত সহিংসতার দায় খুবই বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া সরাসরি আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গসংগঠনের ওপর আরোপ করা হয়নি। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলাম- এই তিনটি দল ও সংগঠনের কর্মসূচিতে সংঘটিত সহিংসতার দায় প্রায় সবক্ষেত্রে অথবা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই দলগুলোর ওপর আরোপ করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের কর্মসূচিতে ঘটা সহিংসতাকে ‘বেশি নেতিবাচক’ এবং আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ঘটনা সহিংসতাকে ‘কম নেতিবাচক’ শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
চিত্রায়নের এই ভিন্নতা প্রথম আলোর ঘোষিত সম্পাদকীয় নীতির সাথে সাংঘর্ষিক।
পত্রিকাটির ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, “আমরা নিরপেক্ষ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ধারা অব্যাহত রাখি।” প্রথম আলোর পরিচয়ের ক্ষেত্রে লেখা হয়েছে, “বস্তুনিষ্ঠ, স্বাধীন ও দলনিরপেক্ষ একটি দৈনিক পত্রিকা”; যা উল্লিখিত চারটি ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে চিত্রায়নের যে দৃষ্টান্ত দেখা গেছে তার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।
মোট সংগৃহীত ৩০০টি প্রতিবেদনের মধ্যে ৪টি ঘটনায় ১৭৮টি প্রতিবেদনে কোন না কোন সহিংসতার ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতার পরের ৩দিনে ২৪টি প্রতিবেদন, হেফাজতের সমাবেশের পরের ৩দিনে ১৯টি প্রতিবেদন, বিএনপি জোটের আন্দোলনের সময়ের (কীওয়ার্ড সার্চ করে) প্রাপ্ত ৩৯টি প্রতিবেদন এবং আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সময় ৯৬টি প্রতিবেদন রয়েছে।
সাঈদীর রায়ের পরের সহিংসতা বিষয়ক ২৪টি প্রতিবেদনের মধ্যে ২০টির শিরোনামে অথবা ভেতরে সহিংসতার দায় প্রথম আলো তার নিজস্ব বয়ানে জামায়াত ও অঙ্গসংগঠনের ওপর আরোপ করেছে। বাকি ৪টি প্রতিবেদনে জামায়াতের ওপর দায় আরোপ করতে শুধু প্রত্যক্ষদর্শী বা ‘অভিযোগ’ এর ওপর নির্ভর করেছে।
হেফাজতের ক্ষেত্রেও একইরকম চিত্র দেখা গেছে। সহিংসতার বর্ণনা দেয়া হয়েছে এমন মোট ১৯টি প্রতিবেদনের ১৬টির শিরোনামে অথবা ভেতরে সহিংসতার জন্য প্রথম আলো নিজস্ব বয়ানে হেফাজতকে দায়ী করেছে। মাত্র ৩টি প্রতিবেদনে হেফাজতের দায়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
২০১৪ সালের বিএনপি জামায়াত জোটের আন্দোলনের সময় ঘটা সহিংসতার মোট ৩৯টি খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সেগুলোর ২৪টি প্রতিবেদনে প্রথম আলোর নিজস্ব বয়ানে শিরোনাম বা প্রতিবেদনের ভেতরে বিএনপি-জামায়াতকে সহিংসতার জন্যে প্রত্যক্ষ এবং ১৩টি প্রতিবেদনে পরোক্ষাভাবে (‘পিকেটার’,‘হরতাল সমর্থক’ ইত্যাদি পরিচয়ে) দায়ী করা হয়েছে। মাত্র দুটি প্রতিবেদনে সহিংসতার দায় বিএনপি জামায়াতের ওপর আরোপ করা হয়নি।
কিন্তু আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ঘটনা সহিংসতার ক্ষেত্রে প্রথম আলো দায় আরোপের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিল। সহিংসতার ঘটনা বর্ণনা করে এমন ৯৬টি প্রতিবেদনের মধ্যে মাত্র ৪টিতে প্রথম আলো নিজস্ব বয়ানে আওয়ামী লীগের ওপর দায় আরোপ করেছে। এর মধ্যে মাত্র একটি সহিংসতার প্রতিবেদনের শিরোনামে আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গসংগঠনের নাম উল্লেখ করেছে।
এর বাইরে ১৮টি সংবাদ প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সহিংসতার ঘটনাটি যে আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঐ সহিংসতাগুলোর জন্যে আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হয়নি।
বাকী ৭৪টি প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সহিংসতার ঘটনাটির দায় আওয়ামী লীগের ওপর আরোপ করা হয়নি। এমনকি ওই সহিংসতাগুলো যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলাকালীন ঘটেছে তার কথাও উল্লেখ করা হয়নি। এ ঘটনাগুলো একেবারে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। কেউ এসব প্রতিবেদন পড়ে বুঝতে পারবে না যে, কোন উপলক্ষ্যে সহিংস ঘটনাগুলো ঘটেছে।
এমনকি আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলাকালে যে চার ব্যক্তি সহিংসতায় নিহত হয়েছেন বলে চারটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে সেই প্রতিবেদনগুলোতেও এটা উল্লেখ করা হয়নি যে, এই নিহতের ঘটনাগুলো আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলাকালে সংঘটিত সহিংসতায় ঘটেছে।
প্রথম আলোর শিরোনামে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে অন্য তিনটি দল ও সংগঠনের চেয়ে চরম মাত্রার ভিন্নতা দেখা গেছে আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে। সাঈদীর রায়ের পরে জামায়াতের সহিংসতার ক্ষেত্রে শিরোনামগুলো শব্দের ব্যবহার ছিল এমন: ‘জামায়াতের সহিংসতা’, ‘জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব’, ‘বর্বরতা’, ‘জামায়াতের সহিংসতার বলি’, ‘ভীতসন্ত্রস্ত’, ‘জামায়াত-শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলা’, ‘আতংক’ ইত্যাদি।
জামায়াতের মতো হেফাজতকেও ‘বর্বর’ হিসেবে চিত্রায়িত করে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে শিরোনামে। যেমন ‘হেফাজতের তাণ্ডব’, ‘হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে নিঃস্ব’, ‘হেফাজতের সহিংসতা’, ‘যুদ্ধক্ষেত্র’, ‘কালো অধ্যায়’, ‘ধ্বংস’, ‘সবুজ উপড়ানো’, ‘নিঃস্ব’, ‘ধ্বংসলীলা’, ‘রোষানল’, ‘অগ্নিসংযোগ’, ‘রেহাই পায়নি’, ‘পঙ্গু’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সহিংসতাকে বর্ণনা করতে।
বিএনপি জোটের ক্ষেত্রেও নানান শব্দের ব্যবহার ছিল এমন যা ওই সহিংসতাকে খুবই নেতিবাচক দৃষ্টিতে তুলে ধরে এবং তাতে বিএনপি জোটের দায় স্পষ্ট হয়। যেমন, ‘বিএনপি-জামায়াতের হামলা’ ‘ব্যাপক সহিংসতা’, ‘হত্যার রাজনীতি’, ‘লাশের মিছিল’, ‘পরিকল্পনা করে হত্যা’, ‘নজিরবিহীন আন্দোলন’, ‘জনগণ জিম্মি’ ‘আতংক’, ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহিংসতার সময় শিরোনামগুলোতে এসব নেতিবাচক, আক্রমণাত্মক বা আবেগপ্রবণ শব্দের প্রয়োগ ছিল না। এই সময়ে শিরোনামের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত নেতিবাচক শব্দ ছিল ‘দৃর্বৃত্ত’, যার দায় কর্মসূচি আহ্বান করা দলটির ওপর বর্তায় না। নেতিবাচক শব্দ হিসেবে কখনো কখনো ব্যবহৃত হয়েছে শুধু ‘আতংক’ শব্দটি।
শিরোনামের মতো ছবির ক্যাপশনগুলোতেও বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের ক্ষেত্রে এই দলগুলোর দায় নিজস্ব বয়ানে স্পষ্ট করেছে প্রথম আলো। এসব ক্যাপশনে সহিংসতাকে নেতিবাচক হিসেবে চিত্রায়িত করে এমন শব্দের ব্যবহার ছিল ব্যাপক। বিপরীতে ক্যাপশনে আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে সহিংসতার দায় কার তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এবং নেতিবাচক শব্দের ব্যবহারও নাই বললেই চলে। ‘বিশ্লেষণ’ অধ্যায়ে এই বিষয়ে আরও বিস্তর আলোচনা রয়েছে।
চারটি ঘটনায় ভিকটিমদের নিয়ে ‘মানবিক প্রতিবেদন’ প্রকাশের ক্ষেত্রে স্পষ্ট পক্ষপাত দেখা গেছে। সাঈদীর রায়ের পরের সহিংসতায় তিন দিনে প্রথম আলোর মতে, মোট নিহত হন ৪৭ জন (যদিও অন্য সংবাদমাধ্যমে এই সংখ্যা বেশি ছিল)। প্রথম আলোর তথ্য মতে, নিহতদের মধ্যে ৩৩ জন জামায়াতের শিবিরের কর্মী, যারা পুলিশের গুলিতে ও আওয়ামী লীগের হামলায় মারা গেছেন। এবং বাকি ১৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী।
এই তিন দিনে (২৮ ফেব্রুয়ারি, ১ ও ২ মার্চ) পত্রিকাটি মোট ৩টি ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিহত তিন ব্যক্তির পরিবারকে নিয়ে, যারা সবাই আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সদস্য। দ্বিগুণের বেশি জামায়াত-শিবির নেতাকর্মী নিহত হলেও তাদের কাউকে নিয়ে কোন ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি পত্রিকাটি।
হেফাজতের সহিংসতার ক্ষেত্রে একইরম চিত্র দেখা গেছে। তিন দিনে (৫, ৬ ও ৭ মে) মোট ৫১ জন ব্যক্তি সহিংসতায় নিহত হয়েছেন বলে প্রথম আলোর রিপোর্ট থেকেই জানা যায়। এর মধ্যে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং বাগেরহাটে পুলিশ, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর ৩ সদস্যের পরিচয় উল্লেখ করা হয়েছে। বাকী নিহত ৪৮ জনের মধ্যে ৩০ জনের বেশি যে, হেফাজতের কর্মী তা প্রথম আলোর একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে উল্লেখ করা ছিল না।
এত সংখ্যক হেফাজতকর্মী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও আওয়ামী লীগের হামলায় নিহত হলেও তাদের একজনের পরিবারকে নিয়েও কোন ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি এই তিন দিনে। তবে হেফজাতর্মীদের ‘বর্বরতা’ তুলে ধরতে তিন দিনে ১০টি ফলোআপ ‘মানবিক’ ফিচার প্রকাশ করে পত্রিকাটি। এসব প্রতিবেদনে অত্যন্ত আবেগঘন শব্দ প্রয়োগে হেফাজতের সহিংসতার ভিকটিম হিসেবে দেখানো হয় সড়ক আইল্যান্ডের গাছাপালা, বাস, ভবন, স্টেডিয়াম ইত্যাদিকে। অর্থাৎ, গুলিতে কয়েক ডজন হেফাজতকর্মীর জীবনাবসান, তাদের কষ্ট এবং তাদের পরিবারের ভোগান্তি নিয়ে একটি মানবিক প্রতিবেদন করা হয়নি, কিন্তু হেফাজতকর্মীদের হাতে গাছপালার ’জীবনাবসান’ এবং বাস, ভবন ও স্টেডিয়ামের ‘কষ্ট ও ভোগান্তি’ নিয়ে ১০টি প্রতিবেদন করা হয়েছে!
আওয়ামী লীগের সহিংসতার ১২ দিনে ৪ জন নিহত এবং বহু দগ্ধ ও আহত হয়েছেন। এ সংক্রান্ত সহিংসতার ৯৬টি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও একজন ভিকটিমকে নিয়ে একটি মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে প্রথম আলোর নিজস্ব বয়ানে ঘটনার দায় আওয়ামী লীগের উপর আরোপ করা হয়নি। ভিকটিমের একজন স্বজনের মন্তব্য হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়ের কথা এসেছে।
বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতার ঘটনাগুলো নির্দিষ্ট দিন তারিখ অনযায়ী নির্বাচন না করায় তাতে মানবিক প্রতিবেদন প্রাধান্য পায়নি। ফলে এই ঘটনায় এ সংক্রান্ত তুলনামূলক আলোচনা বাদ দেয়া হল।
বিশ্লেষণ
চারটি ঘটনায় প্রাথমিকভাবে সংগৃহীত প্রথম আলোর মোট ৩০০টি প্রতিবেদন থেকে ৩টি ক্যাটাগরিতে বাছাই করে মোট ২২২টি প্রতিবেদনকে আলাদা করা হয়েছে। বাছাইয়ে মূলত মন্তব্য প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়, বিদেশি সংবাদমাধ্যমের বরাতে প্রকাশিত খবর এসব বাদ দেয়া হয়েছে। নিচের তিনটি ক্যাটাগরির সংবাদ প্রতিবেদন বাছাই করা হয়েছে:
১. যে প্রতিবেদনগুলোতে কোন সহিংসতার ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।
২. সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি/বস্তুকে নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন।
৩. সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি/বক্তব্য নির্ভর প্রতিবেদন।
উপরিউক্ত ২২২টি প্রতিবেদন থেকে ৭টি প্রশ্নের আলোকে প্রাপ্ত উপাত্ত নিচে বিশ্লেষণ করা হয়েছে:
প্রশ্ন ১: কোন দলের সহিংসতার দায় ওই দলের ওপর সরাসরি আরোপ করেছে প্রথম আলো?
#সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরে জামায়াতের কর্মসূচি:
২০১৩ সালের ১ থেকে ৩ মার্চ তিন দিনে প্রথম আলো (ই-পেপারে) সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন শিরোনামে সর্বমোট ৬২টি সংবাদ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে হামলা/সহিংসতা/সংঘর্ষের ২৪টি সংবাদের মধ্যে ২০টি সংবাদের শিরোনাম অথবা ভেতরে প্রথম আলো নিজস্ব বয়ানে সরাসরি জামায়াত শিবিরের ওপর দায় আরোপ করেছে।
যেমন ১ মার্চ প্রথম আলোর প্রধান শিরোনাম ছিল, “সাঈদীর ফাঁসি, সহিংসতায় নিহত ৩৭, দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব”।
শেষ পৃষ্ঠায় আরেকটি শিরোনাম ছিল “জামায়াত-শিবিরের চোরাগোপ্তা হামলা, শহরজুড়ে আতঙ্ক” শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রকাশ করে। জামায়াতকে সহিংসতার জন্যে সরাসরি দায়ী করে আরেকটি শিরোনাম, “সহিংস জামায়াত, পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ”। আরেকটি শিরোনাম ছিল ”৪৮ পরিবারকে ঘরে রেখেই আগুন দেয় জামায়াত-শিবির”
সহিংসতার যে ৪টি সংবাদে প্রথম আলো নিজস্ব বয়ানে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেনি সেগুলোতে ভুক্তভোগীর বর্ণনা এবং “অভিযোগ পাওয়া গেছে” উল্লেখ করে জামায়াত-শিবিরকে দায়ী করেছে।
#হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচি:
২০১৩ সালের ৬ থেকে ৮ মে তারিখের ই-পেপারে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ও হামলা বিষয়ে সর্বমোট ৫৬টি সংবাদ প্রচার করেছে প্রথম আলো। এর মধ্যে ১৯টি সংবাদ ছিল সহিংসতা সংক্রান্ত।
এই ১৯টি সহিংসতার সংবাদের মধ্যে ১৬টি সংবাদের শিরোনাম অথবা বর্ণনায় হেফাজতে ইসলামকে প্রথম আলো নিজ বয়ানে দায়ী করেছে।
যেমন ৭ মে শিরোনাম করা হয়, “হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী”। একই তারিখে আরেকটি শিরোনাম, “হেফাজত কর্মীদের রোষানলে ব্যাংক” এবং ৮ তারিখে আরেকটি শিরোনাম, “৫৩ বাসে হেফাজতের অগ্নিসংযোগ কর্মচারীদের পরিবহনব্যবস্থা পঙ্গু”।
১৯টি সহিংসতার সংবাদের মধ্যে প্রথম আলো হেফাজতে ইসলামকে ৩টি সংবাদে সরাসরি দায়ী করেনি।
#বিএনপি জোটের আন্দোলন কর্মসূচি:
এই ৩৯টি সংবাদ প্রতিবেদনের মধ্যে ২৪টি প্রতিবেদনে দেখা গেছে প্রথম আলোর নিজস্ব বয়ানে রিপোর্টের শিরোনাম বা প্রতিবেদনের ভেতরে বিএনপি-জামায়াতকে সহিংসতার জন্যে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে।
যেমন, একটি শিরোনাম ছিল “চেতনা '৭১ ভাস্কর্যে শিবিরের হামলা”, “সরেজমিন যশোরের মালোপাড়া: হামলা করে জামায়াত-বিএনপি”, “বিএনপির ঘাঁটিতে সহিংস জামায়াত”।
বাকী ১৩টি প্রতিবেদনে সহিংসতার দায় সরাসরি বিএনপি-জামায়াতের নাম উল্লেখ করে আরোপ করা না হলেও ‘হরতাল-অবরোধকারী’ অথবা ‘অবরোধের সমর্থক’ অথবা ‘পিকেটার’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে; যা পরোক্ষভাবে কর্মসূচি ঘোষণাকারী বিএনপি-জামায়াতকে নির্দেশ করে। আর ২টি প্রতিবেদনে সহিংসতার জন্যে কে দায়ী সেটি উল্লেখ করা হয়নি।
#শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আ.লীগের কর্মসূচি:
শেখ হাসিনার রায় উপলক্ষ্যে ২০২৫ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত লকডাউনসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে পাওয়া ১২৭টি সংবাদ প্রতিবেদনের মধ্যে ৯৬টি প্রতিবেদনে সহিংসতার বর্ণনা রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি প্রতিবেদনে প্রথম আলোর বয়ানে সরাসরি সহিংসতার জন্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে। চারটির মধ্যে একটি মাত্র প্রতিবেদনের শিরোনামে সহিংসতার দায় ছাত্রলীগের ওপর আরোপ করা হয়েছে। বাকী তিনটিতে প্রতিবেদনের ভেতরে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার উল্লেখ করা হয়েছে।
সেই একমাত্র শিরোনামটি হলো, “গোপালগঞ্জে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ, মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ২০ মিনিট অবরোধ”।
যে তিনটি সংবাদের ভেতরের বর্ণনাতে ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, ওই ৩টি প্রতিবেদনের শিরোনাম হল: “শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়: গোপালগঞ্জে মিছিল, সড়ক অবরোধের চেষ্টা”, “মাদারীপুরে রাস্তায় গাছ ফেলে অবরোধ, চার ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ” এবং “গোপালগঞ্জে গণপূর্ত ভবনের সামনে পিকআপ ভ্যানে আগুন”।
এর বাইরে ১৮টি সংবাদ প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সহিংসতার ঘটনাটি যে আওয়ামী লীগের ঘোষিত লকডাউনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে তার উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু ঐ সহিংসতাগুলোর জন্যে আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হয়নি।
৯৬টি সহিংসতামূলক সংবাদ প্রতিবেদনের মধ্যে বাকী ৭৪টি প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সহিংসতার ঘটনাটির দায় আওয়ামী লীগের ওপর আরোপ করা হয়নি। এমনকি ওই সহিংসতাগুলো যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি চলাকালীন ঘটেছে তার কথাও উল্লেখ করা হয়নি।
প্রশ্ন ২: শিরোনামে দায় সহিংসতাকারী দলের ওপর দেয়া হয়েছে, নাকি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে?
#সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরে জামায়াতের কর্মসূচি:
২৪টি সহিংসতার সংবাদের মধ্যে ৯টি সংবাদের শিরোনামে স্পষ্টভাবে জামায়াত শিবিরের দায় দেওয়া হয়েছে। বাকী ১৫টি শিরোনামে সহিংসতাকারী দলের দায় অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। তবে ভেতরে প্রত্যেকটি সংবাদেই জামায়াত-শিবিরের ওপর সহিংসতার দায় আরোপ করা হয়েছে।
#হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচি:
১৯টি সহিংসতার সংবাদের মধ্যে ৫টি সংবাদে হেফাজতে ইসলামের দায় শিরোনামেই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাকী ১৩টির শিরোনামে হেফাজতে ইসলামের দায় অস্পষ্ট রাখা হলেও ভেতরে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
#বিএনপি জোটের আন্দোলন কর্মসূচি:
৩৯টি সহিংসতার প্রতিবেদনের মধ্যে ৩টির শিরোনামে বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করা হয়েছে; যে শিরোনামগুলো উপরের পয়েন্টে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে ২টি ছাড়া সব প্রতিবেদনের ভেতরেই সহিংসতার দায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াত জোটের ওপর আরোপ করা হয়েছে।
#শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আ.লীগের কর্মসূচি:
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে ৯৬টি সহিংসতামূলক সংবাদ প্রতিবেদনের মধ্যে মাত্র ১টির শিরোনামে প্রথম আলোর বয়ানে সহিংসতার দায় দলটির ওপর আরোপ করা হয়েছে।
প্রশ্ন ৩: শিরোনামে সহিংসতাকারী দলের বিরুদ্ধে অথবা সহিংসতাকে নেতিবাচকভাবে দেখাতে আক্রমণাত্মক/আবেগপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা? করলে কী কী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে?
#সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরে জামায়াতের কর্মসূচি:
সহিংসতার ২৪টি সংবাদের মধ্যে ৮টি সংবাদের শিরোনামে নেতিবাচক/আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘সহিংসতা’, ‘তাণ্ডব’, ‘বর্বরতা’, ‘বলি’, ‘ভীতসন্ত্রস্ত’, ‘চোরাগোপ্তা’, ‘আতংক’ ইত্যাদি শব্দ শিরোনামে ব্যবহার করা হয়েছে।
#হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচি:
১৯টি সংবাদের মধ্যে ১৭টি সংবাদের শিরোনামে নেতিবাচক/আক্রমণাত্মক শব্দ/শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি শিরোনামে, ‘ধ্বংসযজ্ঞ’, ৩টিতে ‘তাণ্ডব’, ২টিতে ‘ভাঙচুর’, ২টিতে ‘সহিংসতা’ এবং অন্যান্যগুলোতে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’, ‘কালো অধ্যায়’, ‘ধ্বংস’, ‘সবুজ উপড়ানো’, ‘নিঃস্ব’, ‘ধ্বংসলীলা’, ‘রোষানল’, ‘অগ্নিসংযোগ’, ‘রেহাই পায়নি’, ‘পঙ্গু’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
#বিএনপি জোটের আন্দোলন কর্মসূচি:
৩৯টি সংবাদ প্রতিবেদনের শিরোনামে সহিংসতাকে নেতিবাচকভাবে দেখাতে যেসব আক্রমাণাত্মক/আবেগপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘ব্যাপক সহিংসতা’, ‘হত্যার রাজনীতি’, ‘লাশের মিছিল’, ‘পরিকল্পনা করে হত্যা’, ‘আতংক’, ‘নজিরবিহীন আন্দোলন’, ‘জিম্মি’ ইত্যাদি।
#শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আ.লীগের কর্মসূচি:
৯৬টি সহিসংতার সংবাদের মধ্যে শুধুমাত্র একটি সংবাদের শিরোনামে ‘আতংক’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। সেই শিরোনামটি হচ্ছে, “আতংক তৈরি করতেই আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি”, মূলত একটি মন্তব্যধর্মী ভিডিও প্রতিবেদন।
বাকী ৯৫টি শিরোনামে কর্মসূচি ঘোষণা করা দলের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে নেতিবাচক হিসেবে তুলে ধরতে আক্রমাণাত্মক বা আবেগপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।
প্রশ্ন ৪: ছবির ক্যাপশনে সহিংসতার দায় সহিংসতাকারী দলের ওপর দেয়া হয়েছে কিনা?
#সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরে জামায়াতের কর্মসূচি:
২০১৩ সালের ১ থেকে ৩ মার্চ প্রথম আলো সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে ১৬টি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ছবি ছিল সহিংসতা নিয়ে। এই ১২টি ছবির ক্যাপশনেই জামায়াত শিবিরের দায় উল্লেখ করা হয়েছে।
যেমন ২ মার্চ প্রকাশিত একটি ছবির ক্যাপশন ছিল, ‘শিবিরের কর্মীরা গতকাল সিলেট-ছাতক রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলেন’। আরেকটি ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কার্যালয় ও সাবস্টেশনে গত বৃহস্পতিবার আগুন ধরিয়ে দেন শিবিরের কর্মীরা’
#হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচি:
এই তিনদিনে হেফাজতের সমাবেশ সংক্রান্ত খবরের সাথে প্রকাশিত ২৭টি ছবির মধ্যে ১৯টি ছবি ছিল সহিংসতা সংক্রান্ত। এর মধ্যে ১২টির ক্যাপশনে সহিংসতার দায় সরাসরি হেফাজতের ওপর আরোপ করা হয়েছে। ৫টি ছবিতে হেফাজতের নাম উল্লেখ ছিল না।
হেফাজতের নাম উল্লেখ করে লেখা কয়েকটি ক্যাপশন ছিল এরকম: “পুরান পল্টনে রোববার ট্রাফিক পুলিশের উপপরিচালকের কার্যালয় জ্বালিয়ে দেন হেফাজতের কর্মীরা”, “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনিরআখড়া এলাকায় গতকাল পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন হেফাজতের কর্মীরা” এবং “রাজধানীর মতিঝিলে গত রোববার নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান মতিঝিল ও আশেপাশের এলাকায়। আগুন ও ভাঙচুরের পাশাপাশি তাঁরা সড়ক বিভাজনের অনেক গাছ কেটে ফেলেন”।
#বিএনপি জোটের আন্দোলন কর্মসূচি:
বিএনপি জামায়াতের কর্মসূচি সংক্রান্ত প্রথম আলোর ৫৫টি প্রতিবেদনে ১৯টি ছবি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কর্মসূচিতে ঘটা সহিংসতা নিয়ে ছবি ছিল ১৭টি।
এর মধ্যে ১০টি ছবির ক্যাপশনে সহিংসতার জন্যে সরাসরি বিএনপি-জামায়াতের ওপর দায় আরোপ করা হয়েছে। বাকী ৭টি ছবিতে ‘হরতাল-অবরোধকারী’ শব্দ ব্যবহার করে পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করা হয়েছে।
#শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আ.লীগের কর্মসূচি:
এই ১২৭টি সংবাদ প্রতিবেদনের মধ্যে ৬২টি ছবি পাওয়া গেছে। যার মধ্যে সহিংসতা সংক্রান্ত ছবি ছিল ৫৬টি| এর মধ্যে ৩টি ছবিতে সহিংসতার জন্যে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনকে সহিংসতার জন্যে দায়ী করা হয়েছে।
ক্যাপশন তিনটি হলো, “ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুরের ভাঙ্গার সোয়াদী এলাকায় ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়”, “ডুমদিয়ায় আগুন জ্বালিয়ে মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ সোমবার ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া” , “নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা গোপালগঞ্জে ঢাকা–খুলনা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন- ছবি”।
বাকি ৫৩টি ছবিতে সহিংসতার জন্যে কর্মসূচী ঘোষণাকারী দলের ওপর দায় আরোপ করা হয়নি। এসব ক্যাপশনে সহিংসতার দায় কোনো দলের ওপর না দিয়ে পরোক্ষভাবে যেভাবে লেখা হয়েছে সেরকম কয়েকটি শব্দগুচ্ছ নীচে দেওয়া হলো:
“দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ”
‘অভিযান চালিয়ে ককটেল তৈরির তিন কারিগরকে আটক করে পুলিশ’
“ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে”
“মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে আসা ব্যক্তিরা ককটেল ছোড়েন”
“আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে”
“একটি প্রাইভেট কারে আগুন লাগে”
“দাঁড়িয়ে থাকা বাসটিতে আগুন দিয়েছেন তিন ব্যক্তি”
“পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা”
“যাত্রীবাহী বাসে আগুন লেগেছে”
“জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দিয়েছে দুর্বত্তরা”
প্রশ্ন ৫: ছবির ক্যাপশনে নেতিবাচক/আক্রমণাত্মক/আবেগপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা? সেই শব্দগুলো কী?
#সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরে জামায়াতের কর্মসূচি:
ছবির ক্যাপশনে জামায়াত-শিবিরের দায় বুঝাতে যেসব শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে তার কয়েকটি এরকম: ‘আগুন ধরিয়ে দেন’, ‘ট্রাকে আগুন’, ‘ফিশপ্লেট খুলে ফেলেন’, ‘তাণ্ডব চালিয়ে’, ‘পিটিয়ে হত্যা করেন’, ‘লুটপাট চালান’।
এছাড়া সহিংসতাকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরতে ভাষা এবং শব্দের আবেগঘন ব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়। এমন কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছ হলো: ‘কান্নায় ভেঙে পড়েন’, ‘আহাজারি’, ‘সান্ত্বনা দিতে’ ‘স্বপ্নও পুড়ে গেছে’।
#হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচি:
২৭টি ছবির মধ্যে ১৪টির ক্যাপশনে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। সেই শব্দগুলো হলো: ‘সংঘর্ষ’, ‘আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়’, ‘সহিংসতা’, ‘বিমর্ষ’, ‘রেহাই পায়নি’, ‘ভস্মীভূত’, ‘ধ্বংসযজ্ঞ’, ‘ভাঙচুর’, ‘নৈরাজ্য’, ‘তাণ্ডব’ ইত্যাদি।
#বিএনপি জোটের আন্দোলন কর্মসূচি:
১৯টি ছবির মধ্যে সহিংসতাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থান করতে যেসব আক্রমাণাত্মক/আবেগপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: ‘ভাঙচুর’, ‘বিভীষিকাময় পরিস্থিতি’, ‘সশস্ত্র তত্পরতা’, ‘আর্তনাদ’ ইত্যাদি।
#শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আ.লীগের কর্মসূচি:
৫৬টি সহিংসতার ছবির মধ্যে যে ৩টি ছবিতে আওয়ামী লীগের দায় দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে আক্রমণাত্মক/নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। ১৭টি ছবিতে নেতিবাচক হিসেবে ‘দূর্বৃত্ত’ (হামলার ক্ষেত্রে) শব্দটি পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন ৬: সহিংসতার পরের দিনগুলোতে ভিকটিমদের নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন করা হয়েছে কিনা?
#সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরে জামায়াতের কর্মসূচি:
৩ দিনের সহিংসতায় প্রথম আলোর তথ্য মতে, সাঈদীর রায়কে কেন্দ্র করে মোট ৪৭ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে জামায়াত-শিবিরের ৩৩ জন, জামায়াত-শিবিরের হামলায় পুলিশ, এক প্রকৌশলীসহ আওয়ামী লীগের নিহত হয়েছে ১৪ জন।
এর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের হামলায় নিহত ৩ জনকে নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন ছাপানো হলেও এই তিনদিনের প্রথম আলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা আওয়ামী লীগের হামলায় জামায়াত-শিবিরের নিহত কাউকে নিয়ে কোনো মানবিক প্রতিবেদন ছাপানো হয়নি।
জামায়াত-শিবিরের হামলায় নিহত তিনজনকে নিয়ে করা মানবিক প্রতিবেদনগুলোর শিরোনাম ছিল, “জামায়াত শিবিরের সহিংসতার বলি: ওরা ঘিরে ফেলেছে আমাকে মেরে ফেলবে”, “সহিংসতার অনলে স্বপ্ন পুড়ে ছাই” এবং “আরেক পরিবারে কান্নার রোল”।
#হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচি:
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৩ জনসহ ৩ দিনে (৫, ৬ ও ৭ মে ২০১৩) সর্বমোট ৫১ জন নিহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে পাঁচ মে শাপলা চত্বরে অভিযানের ঘটনায় ১০ জন, পরদিন নায়ায়ণগঞ্জে পুলিশ বিজিবির গুলিতে ১৮ জন হেফাজতকর্মীসহ ২০ জন এবং হাটহাজারী ও বাগেরহাটে মোট ৬জন হেফাজত কর্মী রয়েছেন। বাকীদের ব্যাপারে প্রথম আলোর রিপোর্টে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ, হেফাজতের কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে নিহত ৫১ জনের মধ্যে তিন জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। বাকীদের বেশিরভাগ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হেফাজতকর্মী। তাদের কাউকে নিয়ে এই তিন দিনে প্রথম আলো কোনো মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কিন্তু হেফাজতের কর্মীদের দ্বারা যেসব স্থাপনা হামলা ও ক্ষতির শিকার হয়েছে সেগুলো নিয়ে মোট ১০টি ‘মানবিক’ প্রতিবেদন করেছে। সেই প্রতিবেদনগুলোর শিরোনাম নীচে দেওয়া হলো:
১. “তাণ্ডবে বাদ যায়নি রাস্তার গাছগুলোও”
২. অধ্যায়,“৪০০ বছর বয়সী ঢাকায় এ এক কালো”
৩. “ধ্বংস, তাণ্ডব আর সবুজ উপড়ানোর চিত্র”
৪. “হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে নিঃস্ব অনেক ব্যবসায়ী”
৫. “যেন যুদ্ধ-পরবর্তী ধ্বংসলীলা”
৬. “ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী হাউস বিল্ডিং”
৭. “হেফাজত কর্মীদের রোষানলে ব্যাংক”
৮. “রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামও”
৯. “৫৩ বাসে হেফাজতের অগ্নিসংযোগ”
১০. “কর্মচারীদের পরিবহন ব্যবস্থা পঙ্গু”
এছাড়াও হেফাজতের সমাবেশে হতাহতের জন্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী না করে ‘শিশুদের অরক্ষিত রেখে চলে যান নেতারা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করা হয়।
এই সংবাদে হামলার শিকার হওয়ার হেফাজতের নেতাদেরকেই দায়ী করা হয়েছে এবং “শেষ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই শিশুদের নিরাপদে অবস্থান ত্যাগ করতে সাহায্য করেছেন” বলে উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে – যাদের গুলিতে হেফাজত কর্মীরা নিহত হয়েছেন– তাদেরকে মানবিক হিসেবে উপস্থাপন করেছে প্রথম আলো।
#বিএনপি জোটের আন্দোলন কর্মসূচি:
আমাদের কীওয়ার্ড সার্চ করে সংগৃহীত ৫৫টি প্রতিবেদনের মধ্যে দুইটি ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এ সময়ের মধ্যে আরো মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে থাকতে পারে কিন্তু সেগুলো আমাদের কীওয়ার্ড সার্চে আসেনি।
‘'আমার মাথায় বাড়ি দিল কে?'’ এই শিরোনামের একটি প্রতিবেদনের ভেতরে “হরতাল-সমর্থকদের ছোড়া ককটেলে তাঁর বাঁ চোখ গলে গেছে।” অর্থাৎ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের কর্মসূচীর কথা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরেকটি ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “২৮ দিনে ৪৬ সাধারণ মানুষের মৃত্যু: রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়”। এই প্রতিবেদনে একাধিক মৃত্যুর জন্যে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করা হয়েছে।
#শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আ.লীগের কর্মসূচি:
প্রথম আলোর তথ্যমতে মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ময়নমনসিংহে তিনজন গাড়িতে আগুনে পুড়ে এবং বাসে আগুন দিয়ে পালানোর সময় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে নিহত একজন হচ্ছেন মানিকগঞ্জের বাসচালক পারভেজ খান (৪৫)। আমাদের সংগৃহীত মোট ১২৭টি প্রতিবেদনের মধ্যে পারভেজের মৃত্যু নিয়ে ৩টি প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। সেগুলোর শিরোনাম হচ্ছে,
“মানিকগঞ্জে স্কুলবাসে অগ্নিসংযোগ, ঘুমন্ত চালক দগ্ধ”, “মানিকগঞ্জে স্কুলবাসে আগুনে দগ্ধ চালক মারা গেছেন”, “অগ্নিদগ্ধ বাসচালকের মৃত্যু: ‘আমি এতিম হইয়্যা গেলাম রে ফুফু...”।
এর মধ্যে তৃতীয় প্রতিবেদনটি ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদন, যেখানে পারভেজের পরিবারের ভোগান্তির কথা উঠে এসেছে।
এই তিনটি প্রতিবেদনের কোনোটিতেই পারভেজের মৃত্যুর পেছনে লকডাউন কর্মসূচী ঘোষণাকারী আওয়ামী লীগের ওপর দায় আরোপ করা হয়নি। ১৪ এবং ১৭ নভেম্বরে প্রকাশিত প্রথম দুইটি প্রতিবেদনে তার দগ্ধ ও নিহতের ঘটনাটি যে আওয়ামী লীগের কর্মসূচীকে ঘিরে হয়েছে সেই কথাও উল্লেখ করা হয়নি। তৃতীয়টিতে পারভেজের প্রতিবেশীর বরাতে লেখা হয়েছে, “ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায়ের আগে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আসছেন। পারভেজের হত্যার ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
তবে এখানে প্রথম আলোর নিজস্ব বয়ানে পারভেজের হত্যার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করা হয়নি।
এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, আওয়ামী লীগের লকডাউন চলাকালে নিহত চার জন ব্যক্তিকে নিয়ে প্রথম আলো যে ৪টি প্রতিবেদন করেছে সেগুলোর কোনোটিতেই এই ঘটনাগুলো যে আওয়ামী লীগের লকডাউনকে কেন্দ্র করে ঘটেছে তার উল্লেখ নেই।
প্রশ্ন ৭: সহিংসতাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে তৃতীয় কোন পক্ষের বক্তব্য/বিবৃতি থাকলে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে কিনা?
#সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পরে জামায়াতের কর্মসূচি:
জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার নিন্দা করে বিভিন্ন বিবৃতিমূলক এবং জামায়াতের কর্মসূচীতে মানুষের ভোগান্তি নিয়ে ৩ দিনে মোট ১১টি খবর ছাপিয়েছে প্রথম আলো। সেগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ প্রথম পাতায় স্থান পেয়েছে।
আর রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর দ্বারা জামায়াত-শিবিরের পক্ষে বিক্ষোভকারীদেরকে হত্যার নিন্দা করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর দুটি নিন্দামূলক বিবৃতি ছাপিয়েছে প্রথম আলো।
বিএনপি চেয়ারপারসেরন বিবৃতিটি ছাপানো হয়েছে প্রথম পাতায় দুই কলামে। জামায়াতে ইসলামীর বিবৃতিটি ছাপানো হয়েছে দ্বিতীয় পাতায় এক কলামে।
#হেফাজতের ৫ মে’র কর্মসূচি:
৩ দিনে হেফাজতে ইসলামের সহিংসতার নিন্দা করে বিভিন্ন বিবৃতিমূলক মোট ৯টি খবর ছাপিয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে ছিল: “হেফাজতের কর্মকাণ্ড ছিল ধ্বংসাত্মক”, “ঢাকায় ব্যাপক সহিংসতা”, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি” , “মতিঝিল-পল্টনে সমাবেশ চান না ব্যবসায়ীরা”, “১৮ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি হেফাজতের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অবিলম্বে নিষিদ্ধ করুন” ইত্যাদি শিরোনামের খবর।
আর রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোর দ্বারা হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ জানানোর ৬টি সংবাদ ছাপিয়েছে প্রথম আলো। এর মধ্যে ছিল: “হেফাজতের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগ জামায়াতের”, “কয়েক হাজার হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগ হেফাজতের”, “হেফাজতের শত শত লাশ গুমের অভিযোগ বিএনপির”, “হেফাজতের কর্মকান্ড রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান”, “হেফাজতের ‘কর্মী হত্যা’ আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করছে বিএনপি”, “হেফাজতের ওপর ‘নির্বিচারে গুলির’ অভিযোগ এরশাদের”।
#বিএনপি জোটের আন্দোলন কর্মসূচি:
কীওয়ার্ড সার্চে (পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে) যথেষ্ট প্রতিবেদন না পাওয়ায় বিএনপি জোটের কর্মসূচির ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হয়নি
#শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর আ.লীগের কর্মসূচি:
কীওয়ার্ড সার্চে (পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে) যথেষ্ট প্রতিবেদন না পাওয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মসূচির ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজা হয়নি।
বিশ্লেষণ পদ্ধতি
প্রথমত, এই বিশ্লেষণে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, প্রথম আলো ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের দল বা সংগঠনের কর্মসূচি উপলক্ষ্যে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলো কীভাবে কভার করে? এজন্য চারটি দল ও সংগঠন কর্তৃক ঘোষিত কর্মসূচিকে উপলক্ষ্য হিসেবে নেয়া হয়েছে, যেই কর্মসূচিগুলোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। সেসব সহিংসতার ঘটনাগুলো প্রথম আলোর খবরে কীভাবে এসেছে তা নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রশ্নের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
চারটি দল-সংগঠন হলো:
রাজনৈতিক দল:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
ধর্মীয় সংগঠন:
হেফাজতে ইসলাম
বিশ্লেষণের জন্য নির্বাচিত এই চারটি দল ও সংগঠনের ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো:
১. ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর দলটির নেতাকর্মীরা পরবর্তী কয়েকদিন দেশব্যাপী অবরোধ, বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হন; যাদের বেশিরভাগই জামায়াতে ইসলামীর কর্মী।
২. ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের একটি মহাসমাবেশ থেকে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে ওই রাতে সরকারি নিরাপত্তাবাহিনীর হেফাজতকর্মীদের উচ্ছেদ করতে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় এবং পরের কয়েকদিনে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সাথে সংঘর্ষে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হন; যাদের বেশিরভাগই হেফাজতে ইসলামের কর্মী।
৩. ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একপেশে নির্বাচনের আগে ও পরে বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী সহ সমমনা দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালসহ নানান দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে, যেগুলোকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এর ধারাবহিকতায় ২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করতে আওয়ামী লীগ সরকারের বাধার প্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। পরবর্তী তিন মাসের বেশি সময় ধরে তা টানা কার্যকর ছিল। বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি চলাকালে পেট্রোলবোমা হামলাসহ বিভিন্ন ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষ নিহত হয়; যাদের মধ্যে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন ছিলেন।
৪. ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সহস্রাধিক ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার ফাঁসির দণ্ড ঘোষণা উপলক্ষ্যে ২০২৫ সালের ৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে শুরু হয়ে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত (১২ দিনে) বিচ্ছিন্নভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪ জন নিহত এবং বহু আহতের ঘটনা ঘটেছে।
এই চারটি ঘটনায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে একেকটি দল এবং এরপর এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সহিংসতা হয়েছে এবং তাতে মারা গেছেন বিভিন্ন পক্ষের মানুষজন।
সংবাদ প্রতিবেদন নির্বাচন
এই চারটি সহিংস বিক্ষোভের ঘটনার ঘোষণায় যেহেতু চারটি আলাদা পক্ষ জড়িত ফলে এই ঘটনাগুলোর যেসব খবর প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোতে কি সহিংসতার দায় সমানভাবে ঘোষণাকারী দলগুলোর ওপর দেওয়া হয়েছে নাকি ভিন্ন দলের ক্ষেত্রে প্রথম আলোর খবরে ভিন্ন নীতি পরিলক্ষীত হয়েছে তা যাচাই করে দেখা হয়েছে এই বিশ্লেষণে।
সংবাদ প্রতিবেদন বাছাই করার ক্ষেত্রে সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড ঘোষণার (২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৩) পরবর্তী ৩ দিনের (১, ২ ও ৩ মার্চ) ই-পেপার পত্রিকা থেকে প্রথম আলোর এ সংক্রান্ত সব প্রতিবেদন সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যার সংখ্যা ৬২টি।
হেফাজতে ইসলামের ৫ মে’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনার পরের ৩ দিনের (৬, ৭ ও ৮ মে) ই-পেপার থেকে প্রথম আলোর এ সংক্রান্ত সব প্রতিবেদন সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যার সংখ্যা ৫৬টি।
২০১৪ এর নির্বাচনের আগে ও পরে কয়েক দফার সহিংসতার সময়সীমা এক বছরেরও বেশি হওয়ায় ই-পেপার পত্রিকার মাত্র যেকোনো ৩ দিনের খবর বিশ্লেষণ যথেষ্ট হবে না বিধায় এ ক্ষেত্রে ই-পেপার পত্রিকা নির্বাচন না করে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড (অবরোধ, সহিংসতা, আগুন, ককটেল, পেট্রোলবোমা, দগ্ধ, নাশকতা, বিএনপি, জামায়াত) সার্চ করে ৫৫টি প্রতিবেদন (উপরের দুটি ঘটনায় যথাক্রমে ৬২টি ও ৫৬টি প্রতিবেদনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই সংখ্যাটি নেওয়া হয়েছে) প্রাথমিকভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর এই ৫৫টি প্রতিবেদন থেকে মতামত নিবন্ধ এবং যেসব প্রতিবেদনে উপরোক্ত কীওয়ার্ডগুলো থাকলেও সেখানে সরাসরি কোনো সহিংস ঘটনার বর্ণনামূলক খবর নেই সেগুলো বাদ দিয়ে মোট ৩৯টি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনগুলো ২০১৩ এর আগস্ট থেকে ২০১৫ এর মার্চ মাসের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
একই রকমভাবে ২০২৫ এর নভেম্বর মাসে শেখ হাসিনার ফাঁসির দণ্ড ঘোষণা উপলক্ষ্যে ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মোট ১২ দিন ধরে (৮ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত) বিচ্ছিন্নভাবে চলা সহিংসতার ঘটনায় নির্দিষ্ট ৩ দিনের পত্রিকা বাছাই করলে যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিবেদন পাওয়া যায় না। ফলে এক্ষেত্রে প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড সার্চ করে (অবরোধ, সহিংসতা, আগুন, ককটেল, পেট্রোলবোমা, দগ্ধ, নাশকতা, লকডাউন, আওয়ামী লীগ ইত্যাদি) পাওয়া ১২৭টি প্রতিবেদন সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
৪টি ঘটনায় প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত মোট ৩০০টি প্রতিবেদনের মধ্য থেকে বাছাই করে তিন ধরনের সংবাদ প্রতিবেদনকে আলাদা করা হয়েছে।
১. যেগুলোতে কোন সহিংসতার ঘটনার বর্ণনা রয়েছে
২. সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি/বস্তুকে নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন
৩. সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি/বক্তব্য
সাঈদীর রায়ের ঘটনায় ৩ দিনে প্রথম আলোর মোট ৬২টি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে; এর মধ্যে ২৪টি ছিল সহিংসতা কেন্দ্রিক। ফলোআপ মানবিক প্রতিবেদন ছিল ৩টি। আর সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি/বক্তব্য ছিল ১৩টি।
হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ঘটনায় ৩ দিনে প্রথম আলো মোট ৫৫টি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে; যার মধ্যে ১৯টি ছিল সহিংসতা কেন্দ্রিক। ফলোআপ ‘মানবিক প্রতিবেদন’ ছিল ১০টি। আর সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি/বক্তব্য ছিল ১৫টি।
২০১৪ সালের বিএনপি-জামায়াতের সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় (কীওয়ার্ড সার্চ করে) সংগৃহীত ৫৫টি প্রতিবেদনের মধ্যে সহিংসতার বর্ণনা রয়েছে এমন সংবাদ প্রতিবেদনের সংখ্যা ৩৯টি। মানবিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে ২টি। তবে এর মধ্যে কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি/বক্তব্যমূলক কোন প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
আওয়ামী লীগের লকডাউনকে কেন্দ্র করে সংগৃহীত ১২৭টি প্রতিবেদনের মধ্যে সহিংসতার বর্ণনা ছিল এমন প্রতিবেদনের সংখ্যা ৯৬টি। মানবিক প্রতিবেদন ছিল ১টি। তবে এর মধ্যে কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি/বক্তব্যমূলক কোন প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
উপরে উল্লেখিত তিন ধরনের সংবাদ প্রতিবেদনগুলোকে নিম্নোক্ত সাতটি প্রশ্নের আলোকে যাচাই করে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে প্রথম আলো কোন দলের কর্মসূচীতে ঘটা সহিংসতার খবরকে কিভাবে উপস্থাপন করেছে।
প্রশ্নগুলো হচ্ছে:
১. কোন দলের সহিংসতার দায় ওই দলের ওপর সরাসরি আরোপ করেছে প্রথম আলো?
২. শিরোনামে দায় সহিংসতাকারী দলের ওপর দেয়া হয়েছে, নাকি অস্পষ্ট রাখা হয়েছে?
৩. শিরোনামে সহিংসতাকারী দলের বিরুদ্ধে নেতিবাচক/আক্রমাণাত্মক/আবেগপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা? করলে কী কী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে?
৪. ছবির ক্যাপশনে সহিংসতার দায় সহিংসতাকারী দলের ওপর দেয়া হয়েছে কিনা?
৫. ছবির ক্যাপশনে নেতিবাচক/আক্রমাণাত্মক/আবেগপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে কিনা? সেই শব্দগুলো কী?
৬. সহিংসতার পরের দিনগুলোতে ভিকটিমদের নিয়ে মানবিক প্রতিবেদন করা হয়েছে কিনা?
৭. সহিংসতাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে তৃতীয় কোন পক্ষের বক্তব্য/বিবৃতি থাকলে সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে কিনা?
সীমাবদ্ধতা
এই তুলনামূলক আধেয় বিশ্লেষণে কিছু সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সীমাবদ্ধতাটি ছিল, ৪টি ঘটনার দুটিতে (সাঈদীর রায় ও হেফাজতের সমাবেশ) নির্দিষ্ট ৩দিন করে প্রথম আলোর ই-পেপারকে নির্বাচন করা হয়েছে। কিন্তু অন্য দুটি ঘটনায় (২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে পরে একাধিক দফায় বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সহিংসতা এবং ২০২৫ সালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের পরে আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সহিংসতা) দিনের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ই-পেপার নির্বাচন করতে না পেরে ওয়েবসাইট থেকে কীওয়ার্ড দিয়ে প্রতিবেদন নির্বাচন করা হয়েছে। এতে কয়েকটি বিষয় নির্ধারিত প্রশ্নগুলোর আলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে এতে যথেষ্ট সংখ্যক ‘মানবিক প্রতিবেদন’ পাওয়া যায়নি। এছাড়া ৭নং প্রশ্নের উত্তর ই-পেপার বা প্রিন্ট পত্রিকা ছাড়া খুঁজতে গেলে একদিনে কারো পক্ষে বা বিপক্ষে আসলে কতটি বিবৃতি বা বক্তব্য নির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বিধায় শেষের দুটি ঘটনায় এই প্রশ্নের উত্তর যাচাই করা হয়নি।
দ্বিতীয়ত, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ তিনটি নির্বাচনে সহিংসতা হলেও এই বিশ্লেষণে শুধু ২০১৪ এর সহিংসতার খবরগুলো থেকে আংশিক (৫৫টি) সংগ্রহ করে যাচাই করা হয়েছে। ফলে, পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে প্রথম আলোর সহিংসতার কাভারেজে কোন ধরনের পরিবর্তন ঘটেছিল কিনা তা এই বিশ্লেষণে প্রতিফলিত হবে না। এবং অবশ্যই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে প্রথম আলো সহিংসতার যত খবর প্রকাশ করেছে তার ক্ষুদ্র অংশ বিচ্ছিন্নভাবে আমাদের সার্চে এসেছে। এতে এই অংশের বিশ্লেষণে প্রথম আলোর কাভারেজের পরিপূর্ণ চিত্র উঠে নাও আসতে পারে।