Image description

দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ

সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের জন্য হোয়াইট হাউসের অভ্যর্থনা ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যয়বহুল আয়োজন। একে সরকারি সফর বলা হলেও এর আড়ম্বর ছিল অন্য যে কোনো রাষ্ট্রীয় সফরের চেয়ে বেশি। সাউথ লনে পতাকাবাহী অশ্বারোহী দল এবং যুদ্ধবিমানের মহড়া ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তনের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছিল।

সফরে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার প্রসঙ্গ উঠলে ট্রাম্প যুবরাজকে জোরালোভাবে রক্ষা করেন। তিনি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে দাবি করেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যুবরাজ সালমান কিছুই জানতেন না। উল্টো প্রশ্নকারী সাংবাদিককে ভর্ৎসনা করেন।

এ সফরের সবচেয়ে বড় চমক ছিল এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমান বেচার ঘোষণা। ট্রাম্প নিশ্চিত করেন, সৌদি আরবের এফ-৩৫-এর মান ইসরায়েলের মতোই হবে। এই লেনদেন হবে শর্তহীন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মধ্যপ্রাচ্য নীতি (ইসরায়েলকে সামরিক অগ্রাধিকার) কার্যত ভেঙে পড়ল। ট্রাম্প বলেন, ‘সৌদি আরব ও ইসরায়েল উভয়ই মিত্র। উভয়েরই সর্বোচ্চ মানের সরঞ্জাম পাওয়া উচিত।’ এর পাশাপাশি সৌদি আরব ও আমিরাতে উন্নত এআই চিপ বেচার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। এটা রিয়াদের প্রযুক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ত্বরান্বিত করবে।

বিশ্লেষকরা জানান, এসব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে ইসরায়েলকে প্রাধান্য থেকে সরে আসার ইঙ্গিত। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনবিষয়ক প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাষা, সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা এবং ট্রাম্পের ইসরায়েল সফর না করা এরই প্রমাণ। বিশেষ করে, দোহায় হামাস কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনার জেরে ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে ভর্ৎসনা করেন। হোয়াইট হাউস থেকে ফোন করে কাতারের কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন।

ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে ইসরায়েল উপসাগরীয় অর্থের দাপটের সঙ্গে পেরে উঠছে না। সালমান মার্কিন অর্থনীতিতে এক লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের ফান্ডে আরব দেশগুলো বিপুল বিনিয়োগ করছে। তাছাড়া, ট্রাম্প নির্বাচিত নেতাদের চেয়ে একচ্ছত্র শাসকদের প্রতি প্রীতি দেখাচ্ছেন। সৌদি যুবরাজের ওপর নেতানিয়াহুর মতো জোট সরকার টিকিয়ে রাখার রাজনৈতিক চাপ নেই। সালমান এটাও স্পষ্ট করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হতাশ করলে তিনি চীনের দিকে ঝুঁকবেন। এটা মার্কিন প্রশাসনের জন্য উদ্বেগের কারণ।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, মার্কিন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসছে। তবে বিশ্লেষকরা এ নিয়ে সন্দিহান। এক লাখ কোটি ডলার বিনিয়োগের কোনো সময়সীমা নেই। এফ-৩৫ কেনার সংখ্যাও অস্পষ্ট। আব্রাহাম চুক্তির বিষয়ে ক্রাউন প্রিন্স স্পষ্ট করেছেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি ছাড়া সই করবেন না।

বিশ্লেষক ড্যানিয়েল লেভির মতে, গাজা বা ফিলিস্তিন ইস্যুতে এখনই কোনো সুখবর নেই। তাঁর মতে, মার্কিন নীতির মৌলিক কোনো পরিবর্তন হয়নি। যা দেখা যাচ্ছে তা মূলত বাইডেন প্রশাসনের দুর্বলতা, ট্রাম্প প্রশাসনের পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং ইসরায়েলি বাড়াবাড়ির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া।