দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের সামরিক আগ্রাসনের শিকার দেশগুলোতে চীনের কূটনীতিকরা ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ‘উলফ ওয়ারিয়র’ নামে পরিচিত এই আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক কণ্ঠ এখন আবারও দৃশ্যমান।
জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি সম্প্রতি পার্লামেন্টে বলেন, যদি তাইওয়ান নিয়ে কোনো হামলা জাপানের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়, তাহলে টোকিও সামরিকভাবে জবাব দেবে। তার বক্তব্যের দুই সপ্তাহ পরেও চীন তাদের প্রতিক্রিয়া থামায়নি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সমাজের উচিত জাপানের আসল উদ্দেশ্য বোঝা—এবং তারা এখনও শান্তিপূর্ণ পথে আছে কি না, তা বিবেচনা করা।’
প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি অবশ্য বলেছেন, তার বক্তব্যে জাপানের তাইওয়ান নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
চীন তার নাগরিকদের জাপান ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করেছে, সেখানকার সামুদ্রিক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এবং বিশ্বজুড়ে কূটনীতিকদের মাধ্যমে প্রকাশ্য সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই কূটনৈতিক কৌশলের সূত্রপাত ২০২০ সালে, চীনের এক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র সিরিজ ‘উলফ ওয়ারিয়র’ থেকে নাম নিয়ে। এতে সরাসরি, কঠিন ভাষায় প্রতিপক্ষকে জবাব দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
সম্প্রতি চীনের ওসাকা কনসাল জেনারেল এক পোস্টে বলেন, ‘যে নোংরা গলা ঢোকায়, সেটা কেটে ফেলতে হয়।’ পরে এই মন্তব্য মুছে দেওয়া হলেও তা নিয়ে আলোচনা থামেনি। অনেকে মনে করছেন, এটি ১৯৩০-এর দশকের এক চীনা যুদ্ধগীতির ইঙ্গিত—যা জাপানের আগ্রাসনের সময় ব্যবহৃত হয়েছিল।
এই পোস্টের পর, জাপানের আগেকার দখলদারিত্বের শিকার দেশগুলোতেও চীনা কূটনীতিকরা মুখ খোলেন। ম্যানিলায় চীনা দূতাবাস থেকে বলা হয়, ‘জাপানের সামরিক প্রসারণের আহ্বান যুদ্ধের ভুক্তভোগী দেশগুলোর জন্য চিন্তার কারণ।’
তারা প্রধানমন্ত্রী তাকাইচিকে একজন ‘চিন্তার কারণ’ হিসেবে উপস্থাপন করে তার বিরুদ্ধে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে, যার একটি ছবিতে তাকাইচিকে ‘জাদুকরী রূপে’ দেখানো হয়।
চীনের ভাষ্য অনুযায়ী, যদি জাপান তাইওয়ান প্রণালীতে সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তা হবে আগ্রাসনের শামিল—আর চীন ‘দৃঢ়ভাবে জবাব’ দেবে।
চীনের বিদেশ মন্ত্রণালয় জানায়, তাইওয়ানে জাপানের ‘দখলদারিত্ব ও শোষণের’ ফলে সেখানকার মানুষ একসময় ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছিল।
তাইওয়ান সরকার বলছে, দ্বীপটির সার্বভৌমত্ব তাইওয়ানের জনগণের। চীন গত কয়েক বছরে তাইওয়ান প্রণালী ও পূর্ব চীন সাগরে ব্যাপক সামরিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, যা অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা বাড়িয়েছে।
চীন শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়, বরং পশ্চিমা দেশগুলোতেও এর প্রভাব তৈরি করতে চাইছে। জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং বলেছেন, ‘তাকাইচির আচরণ শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে যায় না।’
অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশেও চীনা দূতাবাস নিয়মিতভাবে তাকাইচির মন্তব্যের সমালোচনা করে যাচ্ছে।
জাপান সরকার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং চীনা সমালোচনার বিরুদ্ধে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। কেবল ওসাকার কনসালের বক্তব্য নিয়ে কয়েকবার অসন্তোষ জানিয়েছে।
জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মিনোরু কিহারা বলেন, ‘সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।’ তবে তিনি ব্যক্তিগত মন্তব্য নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।