জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান তালুকদার। কর্মজীবনের শুরুটা ছিল গণমাধ্যমে সাংবাদিকতার মধ্য দিয়ে। জীবিকার মাধ্যম পরিবর্তন হলেও সাংবাদিকতার ভালবাসা আর ফেলতে পারেননি। সেই নেশা থেকে ভর্তি হয়েছিলেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের মাস্টার্স কোর্সে। সাফল্যের সঙ্গে শুধু পড়াশোনা-ই শেষ করেননি, অর্জন করেছেন আচার্য স্বর্ণপদক। শনিবার (২২ নভেম্বর) বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ সমাবর্তনে তার হাতে স্বর্ণপদক তুলে দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
এদিন আখতারুজ্জামান তালুকদারসহ মোট ৪০ জনকে স্বর্ণপদক তুলে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আচার্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন ১০ জন, আর উপাচার্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন আরও ৩০ জন। রেকর্ড সিজিপিএর পাশাপাশি শিক্ষাজীবনে অসামান্য অবদানের জন্য এই পদক পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অনুভূতি জানতে চাইলে আখতারুজ্জামান তালুকদার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এরকম একটা গর্জিয়াস এবং প্রেস্টিজিয়াস অনুষ্ঠানে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছি, এটা আমার জন্য অনেক গৌরবের। আমি ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ থেকে মাস্টার্স করেছি। আমি মনে করি, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে অবদান রাখা যায়।’
স্বর্ণপদক পাওয়ার জন্য নবীনদের কী করণীয়—এমন প্রশ্নে তিনি জানালেন, সবার আগে প্রয়োজন ধৈর্য্য এবং একাগ্রতা। বলেন, ‘ধৈর্য্য এবং একাগ্রতা যদি কারো থাকে, নিশ্চয় সে তার জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারবে।’
শুধু একাডেমিক উৎকর্ষতা নয়, শিক্ষার্থীরা সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখার দায়িত্বও বহন করে। সততা, সহমর্মিতা ও উদ্ভাবনের মূল্যবোধকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়ে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
একই বিভাগ থেকে আচার্য স্বর্ণপদক পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী আখতার মাহমুদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, অধ্যয়নকালে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে একটি থিসিস করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া রাজনৈতিক পরিবেশ ও সমাজকর্ম নিয়েও বেশ কাজ করেছেন। তিনি মনে করেন, শিক্ষাজীবনে এসব কাজ স্বর্ণপদকপ্রাপ্তিতে ভূমিকা রেখেছে। তিনি বললেন, ‘অনুভূতি অসাধারণ। শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আসলে শিক্ষাজীবনে পড়াটাকে উপভোগ করতে হবে। আমার শিক্ষকরা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন যে আমি কী করব, কোনটা কিভাবে উপস্থাপন করব। সে কারণে আমি সফল হয়েছি। এটিকে উপভোগ করতে পারলে যে কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে।’
অসামান্য অবদানের জন্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহজাবিন হায়দার মীম। এই অর্জনের জন্য আল্লাহর পরেই মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনসহ শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন তিনি। তবে পরিশ্রম ছাড়া এই অর্জন সম্ভব নয় বলেও মনে করেন মীম। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমি পড়াশোনার এবং লক্ষ্যের প্রতি আমার ডেডিকেশনের জন্য এই স্বর্ণপদক পেয়েছি।’
আসলে শিক্ষাজীবনে পড়াটাকে উপভোগ করতে হবে। এটিকে উপভোগ করতে পারলে যে কোনো সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে— আখতার মাহমুদ, আচার্য স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থী
আকর্ষণীয় এই পদক পেলেও দেশের চাকরিবাজার নিয়ে বেশ হতাশ ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজের শিক্ষার্থী রিফাত সরকার রোহান। শিক্ষাজীবনে গুরুত্বপূর্ণ এই অর্জনের পর ভাবনা জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘ভাল শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে দেশের বাইরে চলে যায়। কারণ দেশে ভাল ভবিষ্যত নাই। এজন্য যারা দায়িত্বে আছেন, তাদেরকে এটি নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বলছে, শুধু একাডেমিক উৎকর্ষতা নয়, শিক্ষার্থীরা সমাজে ইতিবাচক অবদান রাখার দায়িত্বও বহন করে। সততা, সহমর্মিতা ও উদ্ভাবনের মূল্যবোধকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়ে আসছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। স্টামফোর্ড বলছে, অর্জিত শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সমাধান খুঁজে বের কর এবং দৃষ্টি ও নিষ্ঠা নিয়ে মানবতার সেবা কর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. ইউনুস মিয়া বলেন, আমরা সমাবর্তন আয়োজন ও শিক্ষার্থীদের পদক দিতে পেরে আনন্দিত। আমাদের প্রত্যাশা, শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে সমাজে অবদান রাখবে।
সমাবর্তনে আচার্য স্বর্ণপদক পেয়েছেন মোট ১০ জন। তারা হলেন- জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের আসিফ নেওয়াজ, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন মো. তানভির আলম, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশনের হেমন্ত দাশ টনি, তানজিনা শারমিন চৌধুরী, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের আশিকুর রহমান নোবেল, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মোসা. শারমিন আক্তার, আইনের ফারজানা হক, মেহজাবিন হায়দার মীম, মাইক্রোবায়োলজির জান্নাত আক্তার ও তানিয়া আক্তার।
ধৈর্য্য এবং একাগ্রতা যদি কারো থাকে, নিশ্চয় সে তার জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারবে— আখতারুজ্জামান তালুকদার, আচার্য স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থী
উপাচার্য স্বর্ণপদক পাওয়া ৩০ শিক্ষার্থী হলেন- তাবাসসুম তাজিন, অরুণিমা দত্ত, ফারিয়াহ বিনতে খালেদ, নুসরাত জাহান ঋতু, লুবনা শারমিন, রিফাত সরকার রোহান, মো. নাজমুল ইসলাম, মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার, মাহফুজুর রহমান, আখতার মাহমুদ, মেহেদি হাসান, সানজিদা আক্তার, মো. এনামুল হক মৃধা, নুজহাত তাবাসসুম, আমেনা বেগম, সাদিয়া আফরিন, জোবায়ের আহমেদ, ঐশ্বর্য্য পান্ডে, জিএইচ কিবরিয়া, মোসা. আফরোজা সুলতানা, মোজাম্মেল হক, মো. মহিউর রহমান মিশু, নুসরাত জাহান, তাহেরা সিদ্দিকা শোভা, মাহাথির পাবলো উদয়, মারজিয়াত রহমান, আকলিমা আক্তার, তাসনিম জাবীন, ইসরাত জাহান নীলা ও মেরিনা আফরোজ।