নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি আরব বিশ্বে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার স্ত্রী রামা দুয়াজি সিরিয়ান বংশোদ্ভূত হওয়ায় অনেক সিরিয়ানই তাকে রসিকতা করে ‘দুলাভাই’ বলে সম্বোধন করছেন।
মুসলিম পরিচয় এবং ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান—এই দুটিও তাকে আরব বিশ্বের কাছে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। নির্বাচনে জয়ের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরবদের উচ্ছ্বাস ও রসিকতার ঢল নেমেছে।
আল জুমহুরিয়ার প্রধান সম্পাদক কারাম নাশার এক্স-এ লিখেছেন,সিরিয়ানরা এখন জোহরান মামদানিকে আমাদের দুলাভাই বলে ডাকছে—এটা দারুণ লাগছে। তিনি ভেবেছিলেন একজন সিরিয়ান নারীকে বিয়ে করেছেন; না হাবিবি জোহরান, তুমি এখন পুরো জাতিরই দুলাভাই।
মামদানির স্ত্রী ৩০ বছর বয়সি রামা দুয়াজি টেক্সাসে সিরিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেন এবং শৈশবের একটি অংশ কাটান দুবাইয়ে। তার মাধ্যমে মামদানি এখন সিরিয়ানদের কাছে ‘ঘরের মানুষ’ হয়ে উঠেছেন।
তিন মিলিয়নের বেশি ফেসবুক অনুসারী থাকা বিশিষ্ট সিরিয়ান আলেম আবদেল কারিম বাক্কার লিখেছেন, নিউইয়র্কের নতুন মেয়র আমাদের দুলাভাই—এতে যেমন আনন্দিত, আরও বেশি আনন্দিত যে তিনি প্রান্তিক মানুষ, শ্রমজীবী ও দরিদ্রদের কথা বলেন।
উগান্ডায় জন্ম নেওয়া জোহরান মামদানি আগামী জানুয়ারিতে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও সমাজতান্ত্রিক মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। বিজয়ী ভাষণে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অবস্থানকে সমালোচনা করে নিউইয়র্কের বহুত্ববাদী সংস্কৃতির প্রশংসা করেন।
নির্বাচনী প্রচারণার একটি ভাইরাল ভিডিওতে মামদানিকে দেখা যায় সাবলীল লেভান্তাইন আরবিতে নিউইয়র্কের অভিবাসী সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে কথা বলতে। তিনি মুচকি হেসে নিজেকে ‘দামাস্কাসের দুলাভাই’ বলে রসিকতা করেন, পুদিনা চা ঢেলে পান করেন এবং ফিলিস্তিনি জনপ্রিয় মিষ্টি ‘কুনাফা’ খেতে খেতে বলেন—
আপনার মামাকে হয়তো বোঝাতে পারব না যে স্টেইনওয়ের কুনাফা নিউ জার্সির চেয়ে ভালো; তবে আপনার ছোট ব্যবসা, ভাড়া আর ভবিষ্যতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
আরেকটি ভিডিওতে তাকে দেখা যায় নিউইয়র্কের একটি বডেগায়—যার মালিক আরব বংশোদ্ভূত—সেখানে থাকা ‘ইজিপ্ট’ নামের বিড়ালের সঙ্গে কথা বলতে। প্রায় নিখুঁত মিশরীয় উচ্চারণে তিনি দোকানমালিককে ভাড়া স্থগিতের প্রতিশ্রুতি দেন।
ফিলিস্তিনে ‘একটু আশা’
নাবলুসের মানবাধিকারকর্মী রামি কুখুন বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে যে আন্তর্জাতিক মনোযোগ তৈরি হয়েছে, তা একসময় রাজনৈতিক পরিণতি বয়ে আনতে পারে—সেটা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ফিলিস্তিনিদের কাজে লাগতে পারে।
ইরানের গণমাধ্যম মামদানির জয়কে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে। তার শিয়া পটভূমি সেখানে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আরব বিশ্বের অন্যান্য অংশেও তার বিজয়কে নিজেদের রাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
উগান্ডার কাম্পালায় জন্ম নেওয়া জোহরান মামদানি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে বেড়ে ওঠেন। পরে তার ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা–মা—চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার এবং গবেষক মাহমুদ মামদানি—তাকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হন। ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন।