Image description
 
 

দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতে পরিণত হওয়া দুই পুরোনো মিত্রদেশ পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। গত সপ্তাহে বিরোধপূর্ণ সীমান্তগুলোতে দুই দেশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়েছে, যা বছরের শুরুতে চীনসহ আঞ্চলিক শক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় তৈরি হওয়া শান্তির সম্ভাবনাকে উল্টে দিয়েছে। সংঘর্ষের মাত্রা স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দেয় যে দুই প্রতিবেশীর মধ্যেকার সম্পর্ক কতটা ভঙ্গুর।

 

ইসলামাবাদ জানিয়েছে, তারা আফগান ভূখণ্ডে দুই শতাধিক তালেবান যোদ্ধাকে হত্যা করেছে এবং ২১টির বেশি সেনা চৌকির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সংঘর্ষে তাদের অন্তত ২৩ সেনা নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, তালেবান সরকার দাবি করেছে যে তারা ৫৮ পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাত ও বুধবার ভোরে কান্দাহারে হামলায় ১৫ জন আফগান নিহত হন।

পাকিস্তানের মূল অভিযোগ হলো, তালেবান সরকার সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় দিচ্ছে, যারা সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে আক্রমণ চালাচ্ছে। এই হামলার তীব্রতা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে, যাতে ডজনখানেক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন।

 

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের রিসার্চ ফেলো আবদুল বাসিত বলেন, ইসলামাবাদ এখন একটি 'নিউ নরমাল' বা নতুন বাস্তবতা নির্ধারণের চেষ্টা করছে—যেখানে আফগানিস্তান থেকে যারাই হামলা চালাক না কেন, তার জন্য কাবুলকে মূল্য চুকাতে হবে। এই কৌশলকে বাসিত গত এপ্রিলে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলার পর নয়াদিল্লির প্রতিশোধমূলক হামলার কৌশলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

 

গত বৃহস্পতিবার রাতে কাবুলে বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনা ঘটে। তালেবান সরকার এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত থাকার অভিযোগ করে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। কাবুলে ওই হামলায় পাকিস্তান নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার বা অস্বীকার কোনোটাই করেনি।

পাকিস্তান যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আফগানিস্তান থেকে আক্রমণ চালানোর অভিযোগ করছে, তাদের মধ্যে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে ইসলামাবাদ সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে।

টিটিপি পাকিস্তানে কঠোর শরিয়াহ আইন চালু করতে চায় এবং পাকিস্তানের উপজাতীয় অঞ্চলগুলোকে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা (এসিএলইডি) জানিয়েছে, শুধু গত এক বছরে টিটিপি ন্যূনতম ৬০০টি আক্রমণ করেছে বা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। ২০২৫ সালে হামলার সংখ্যা এরই মধ্যে ২০২৪ সালের মোট সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

কর্মজীবনে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত সীমা ইলাহি বালুচ বলেছেন, পাকিস্তান এখনো তালেবানকে বোঝাতে পারেনি যে তাদের ভূমি যেন সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যবহার না হয়। তিনি মনে করেন, সংঘাত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ক্ষুণ্ন করে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায়, ইসলামাবাদের পক্ষে তা উপেক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইসলামাবাদভিত্তিক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (সিআরএসএস) বলেছে, এ বছরের প্রথম ৯ মাসে ২,৪০০ জনের বেশি পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন, যা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তাক্ত বছর হতে চলেছে।