
হেনলি পাসপোর্ট সূচক অনুযায়ী এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে গণ্য করা হতো। ভিসা ছাড়া একটি দেশের নাগরিক কতগুলো দেশ ভ্রমণ করতে পারেন, তার ওপর ভিত্তি করে এই সূচকটি তৈরি করা হয়।
২০২৫ সালে এসে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের সেই মর্যাদা কমে গেছে। ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এবার বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের সেরা ১০ তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র ছিটকে পড়েছে।
মার্কিন পাসপোর্ট ২০২৪ সালের সপ্তম স্থান থেকে নেমে এখন মালয়েশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে ১২তম স্থানে রয়েছে। এই পাসপোর্টের মাধ্যমে ভিসা ছাড়াই ১৮০টি দেশ ভ্রমণ করা যাবে।
এখন তালিকার শীর্ষে রয়েছে পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশ। সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যথাক্রমে ১৯৩, ১৯০ ও ১৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুবিধা পায়। জার্মানি, লুক্সেমবার্গ ও ইতালি যৌথভাবে চতুর্থ স্থানে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্রুত পতনের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এর বেশির ভাগই ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নতুন অভিবাসননীতির সঙ্গে সম্পর্কিত।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের চেয়ারম্যান ক্রিশ্চিয়ান কেলিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত দশকে মার্কিন পাসপোর্টের শক্তিশালী অবস্থা নিচে নামাটা শুধু র্যাঙ্কিংয়ের রদবদল নয়—এটি বিশ্বব্যাপী চলাচল ও সফট পাওয়ারের গতিপথে একটি মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। যেসব দেশ উদারতা ও সহযোগিতাকে গ্রহণ করছে, তারা এগিয়ে যাচ্ছে। আর যারা অতীতের সুবিধার ওপর নির্ভর করে বসে আছে, তারা পিছিয়ে পড়ছে।
প্রতিবেদনে ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ অ্যাসোসিয়েট অ্যানি ফোরজাইমারের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের এই পতন সম্পর্কে বলেছেন, দ্বিতীয়বার ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই মার্কিন নীতি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল। সেই বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতারই প্রতিফলন এখন মার্কিন পাসপোর্টের পতনে দেখা যাচ্ছে।
নাগরিকত্ব ও আবাসন নিয়ে পরিবারকে সহায়তা দানকারী সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স র্যাঙ্কিংয়ে দেশগুলোর পিছিয়ে পড়ার একটি প্রধান কারণ হিসেবে ভিসার পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবের কথা উল্লেখ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারীরা বর্তমানে ভিসা ছাড়াই ১৮০টি দেশ ভ্রমণ করতে পারেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র নিজে মাত্র ৪৬টি দেশের নাগরিকদের ভিসা ছাড়া প্রবেশের অনুমতি দেয়। এ ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার অভাবের কথা উল্লেখ করে ব্রাজিল সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের জন্য ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা বাতিল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ভিসার ক্রমবর্ধমান খরচও একটি কারণ। যেমন—গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফর ট্রাভেল অথরাইজেশনের (ইএসটিএ) খরচ ২১ ডলার থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৪০ ডলার হয়েছে।
অন্যান্য দেশের নেওয়া পদক্ষেপও যুক্তরাষ্ট্রকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চীনের সম্প্রসারিত ভিসা ছাড় নীতি। জার্মানি ও ফ্রান্সসহ শীর্ষ ১০-এ থাকা অনেক ইউরোপীয় দেশকে চীন ভিসা ছাড়ের সুবিধা দিলেও যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েছে। পাপুয়া নিউগিনি ও মিয়ানমারের পরিবর্তন এবং সোমালিয়ার নতুন ই-ভিসা সিস্টেমও র্যাঙ্কিংয়ে প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিনিদের মধ্যে বিকল্প বাসস্থান ও নাগরিকত্ব খোঁজার প্রবণতা ‘নজিরবিহীনভাবে’ বেড়েছে। ২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকের শেষে ২০২৪ সালের তুলনায় মার্কিন নাগরিকদের আবেদন ৬৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হেনলি বলছে, শেষ আঘাতটি এসেছে ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে। দেশটি তাদের সদ্যপ্রকাশিত ভিসামুক্ত দেশের তালিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিয়েছে।
সূত্র: টাইম