Image description

স্রেব্রেনিৎসায় মুসলিমদের গণহত্যা অস্বীকার বা আন্তর্জাতিক আদালতের রায় উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের মহিমান্বিত করার যে কোনো চেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তুরস্ক। শুক্রবার (১১ জুলাই) এক ভিডিও বার্তায় এই প্রতিবাদ জানান দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।

 

১৯৯৫ সালের জুলাইয়ে বসনিয়ার স্রেব্রেনিৎসা শহরে সার্ব বাহিনীর হাতে ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা। জাতিসংঘের সুরক্ষিত এলাকা হিসেবে স্বীকৃত ওই শহরে প্রায় ৮ হাজার বসনীয় মুসলিম পুরুষ ও কিশোরকে হত্যা করে সার্ব বাহিনী, যা পরে আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

এই ঘটনার স্মরণ দিবস উপলক্ষে প্রচারিত ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, “যারা স্রেব্রেনিৎসা অস্বীকার করে, তারা মানবতা অস্বীকার করে। আমরা স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যাকে অস্বীকার করা বা যুদ্ধাপরাধীদের প্রশংসা করা—এমন যে কোনো বক্তব্য ও প্রচেষ্টাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আন্তর্জাতিক আদালত যাদের দোষী সাব্যস্ত করেছে, তাদের নিয়ে মহিমা গাথা রচনার চেষ্টা মানবতার জন্য লজ্জাকর।”

তিনি আরও বলেন, “তুরস্ক বরাবরের মতোই বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধানসম্মত শাসনব্যবস্থার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাবে।”

গাজায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক হামলার প্রসঙ্গে এরদোয়ান বলেন, “যেভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় স্রেব্রেনিৎসার সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা নিয়েছিল, আজও ঠিক তেমনভাবে তারা ফিলিস্তিনের ওপর চলা গণহত্যার সামনে নির্বিকার।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন: “প্রায় ৫৮ হাজার ফিলিস্তিনিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ইতিহাস এবং মানবতা—দুটোর কাছেই এই অপরাধের জবাবদিহি করতে হবেই। দেরিতে হলেও, এই রাষ্ট্র সাজার মুখোমুখি হবেই।”

এদিকে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিরদান সামাজিক মাধ্যমে দেয়া বার্তায় লেখেন, “স্রেব্রেনিৎসার এই গভীর ট্র্যাজেডি আজও আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটায়। মানবতার বিবেকে এটি অমোচনীয় এক দাগ। এই গণহত্যা স্মরণ করা এবং বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয়া আমাদের সমষ্টিগত দায়িত্ব।”

তিনি আরও বলেন, “স্রেব্রেনিৎসা যেন কখনও বিস্মৃত না হয়, তার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়কে সচেতন থাকতে হবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার ৩০ বছর পূর্তিতে তুরস্কের এ ধরনের কূটনৈতিক বার্তা শুধু অতীত স্মরণ নয়, বরং এটি বর্তমান আন্তর্জাতিক দ্বিচারিতা ও ইসরায়েলি নিপীড়নের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত প্রতিবাদও বটে। বিশেষ করে গাজার চলমান সংঘাতে পশ্চিমা বিশ্বের নীরবতা, এবং যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আদালতের রায় উপেক্ষার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য এই বার্তায় স্পষ্টভাবে আধুনিক আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার ব্যবস্থার সংকটকে তুলে ধরা হয়েছে।

সূত্র : আনাদুলু