Image description
সোহাগের কবরের পাশে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী লাকী আক্তার © সংগৃহীত

এক পাশে বাঁধানো মায়ের কবর। তার ঠিক পাশেই নতুন খনন করা কাদামাটির কবর। সেখানে সমাহিত করা হয়েছে ঢাকার মিটফোর্ড এলাকায় নৃশংসভাবে খুন হওয়া লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে। কবরের মাটি এখনো শুকায়নি। সেই মাটিতেই বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তাঁর স্ত্রী লাকী আক্তার। প্রলাপ বকছেন, কাঁদছেন, কবর জড়িয়ে ধরে কাতর হয়ে পড়ছেন।

লাকী আক্তার কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলছিলেন, “আমার স্বামীরে মারতাছে, আর হাজার হাজার মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখল। কেউ একবারও সেই উন্মাদ খুনিদের থামাইল না। ও একটা সুন্দর পাঞ্জাবি পইরা বাইর হইছিল—কী সুন্দর লাগতেছিল! ওর শরীর থেকে ওই পাঞ্জাবিটাও খুইলা নিছে ওরা। আমার স্বামীর বুকের ওপর নাচছে ওরা, মৃত্যুর আগেই। আমি এখন কী নিয়ে বাঁচব? দুইটা অবুঝ শিশু, আমি ওদের কীভাবে মানুষ করব?”

হৃদয়বিদারক দৃশ্যের মাঝে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন সোহাগের বড় বোন ফাতেমা বেগম। ভাই হারানোর শোকে তিনিও বারবার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, মূর্ছা যান। বলছিলেন, “আমরা দুই বোনের একটা ছোট ভাই ছিল। কী সুন্দর নূরআনি মুখ ছিল ওর। সবার ভাই থাকবে, আর আমার ভাই থাকব না! আল্লাহ, যারা আমার ভাইরে এইভাবে মারছে, হের বিচার কইরো।”

সোহাগকে শুক্রবার (১১ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে বরগুনার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর এলাকার বাদলগাছিয়া গ্রামে, মামার বাড়িতে, মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়।

এর আগে ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকার ৩ নম্বর গেটে শত শত মানুষের সামনে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াবহ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। নিজ জেলা বরগুনাতেও হয়েছে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন।

সোহাগের হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবার নয়, কাঁপিয়ে দিয়েছে পুরো দেশকে। প্রশ্ন উঠছে—এই সহিংসতা, এই নিষ্ঠুরতা, এই নীরব দর্শকের ভূমিকা থেকে আমরা কখন বের হব?