
সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে মাসুদ কামাল বলেন,“পুরা কাজটা করা হচ্ছে ইন্টেনশনালি যে, কেবল বিএনপি না, টোটাল পলিটিক্যাল পার্টিস গুলোর উপর সাধারণ মানুষকে বিতশ্রদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এই যে ঘটনাটা ঘটছে, সরকারের ইমেজ দিয়ে টানাটানি হচ্ছে না কিন্তু। টানাটানি হচ্ছে বিএনপির ইমেজ নিয়ে।”
সম্প্রতি পুরান ঢাকায় দিনদুপুরে এক ব্যবসায়ীকে মাথা থেঁতলে হত্যার যে নৃশংস ঘটনাটি ঘটে গেল, যাকে হত্যা করা হয়েছে তিনি একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং যারা হত্যা করেছে তারা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে যুবদল।৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির তৃণমূলের যে নৈরাজ্য, এই প্রশ্নটি সামনে আসছে চাঁদাবাজি, খুন, অন্তর্দ্বন্দ্ব, নানা ধরনের অভিযোগগুলো আসছে। এবং এসব নিয়ন্ত্রণ করতে বিএনপির হাই কমান্ড ব্যর্থ হয়েছে এবং বিএনপির হাই কমান্ডকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। আসলে নিয়ন্ত্রণের উপায়টা কী?
উপস্থাপকের প্রশ্নে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, “এখানে দুটো বিষয় আছে। প্রথমত বিষয় হলো, যেহেতু এই লোকগুলো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, সেখানে বিএনপিকে তো কিছু দায় নিতেই হবে। এবং বিএনপিকে এটা প্রতিরোধ করার কার্যকর পদ্ধতিও বিএনপিকে বের করতে হবে। এবং বিএনপি যে পদ্ধতিতে কাজ করছে, সেটা কেন কার্যকর হচ্ছে না সেটা নিয়ে আমি একটু পরে বলছি। তার আগে আমি প্রধানত এই দায়টা আমি চাপাবো সরকারের উপর।”
সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন,“একজন লোক একজন লোককে হত্যা করছে, একজন লোক চাঁদাবাজি করছে, একজন লোক একজন লোকের ব্যবসাকে জবরদখল করছে এটা তো প্রচলিত আইনে অপরাধ। সে লোকটা বিএনপি করে, না জামায়াত করে, না কি এনসিপি করে, এটা তো দেখার দায়িত্ব তো পুলিশের। পুলিশেরও না, সরকারেরও না। লোকটা একটা অপরাধ করছে, সেটা আমাদের সামাজিক স্বাভাবিক যে গতি, সে গতিকে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তাকে থামানোর দায়িত্ব সরকারের।”
তিনি আরও বলেন,“আপনি বিএনপির উপর দায় চাপাতে পারবেন তখন, যখন ওই লোকটাকে যদি পুলিশ ধরে নিয়ে যায়, তাকে ছাড়ানোর জন্য যদি বিএনপি আন্দোলন করে, ছাড়ানোর জন্য বিএনপি যদি রাস্তা বন্ধ করে দেয়, থানা ঘেরাও করে আপনি তখন বিএনপির উপর কিন্তু দায়টা চাপাতে পারবেন। তারা পর্যন্ত বিএনপিকে দায় চাপাতে পারেন না। প্রথমত এই কাজটা পুলিশের, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, প্রশাসনের, সরকারের। তারা এ কাজটা করছে না কেন? তারা কেন এমন একটা এনভায়রনমেন্ট তৈরি করে রেখেছে, যে এনভায়রনমেন্টের কারণে এই সমস্ত লোক এই ধরনের অপরাধমূলক কাজকর্ম করতে উৎসাহিত হচ্ছে? আমি তো মনে করি এর পেছনে সরকারের একটা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আছে।”
তিনি বলেন,“সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাটা কী? আপনি দেখবেন, বেশ কিছুদিন ধরে বলাবলি হচ্ছে যে রাজনৈতিক দলগুলো এদেশের সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এবং যারা আছে তারা পাঁচ বছর থাকবে। কেউ কেউ আবার আরেক দফা অগ্রসর হয়ে বলছে, উনি আজীবন থাকবেন। এমন তেমন বলা হচ্ছে। এই বলাগুলো তো একটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে আমি মনে করি। আজীবন থাকার জন্য কখনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাঁচ বছর থাকার জন্য আসে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল নামটা কী? অন্তর্বর্তীকালীন অর্থটা কী? অর্থ হলো, একটা রেগুলার গভর্নমেন্ট আসবে। একটা ইলেক্টেড গভর্নমেন্ট আসবে, সেই গভর্নমেন্টের কাছে দায়িত্ব তারা হস্তান্তর করবে। এবং এই হস্তান্তর করার মাঝখানে যে সময়টুকু, এইটুকু তারা থাকবে। সেই সময়টাতে কোনোভাবেই পাঁচ বছর হতে পারে না, অথবা আজীবনও হতে পারে না।”
মাসুদ কামাল বলেন,“এই যে মতলবটা, যে মতলবটাকে আবার বাইরে থেকে কেউ কেউ মনে করেন ফেসবুকের মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ইউটিউবের মাধ্যমে—যেখানে তারা নার্সিং করে এবং মানুষের মধ্যে পেট্রেট করার চেষ্টা করে, ঢোকানোর চেষ্টা করে যে এটা করতে হবে। তারা দেখবেন, সবসময় বলার চেষ্টা করে যে, ইলেকশন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে?
ইলেকশন হলেই কি আমরা স্বর্গরাজ্য পেয়ে যাব? না, পাবো না। ইলেকশন হলে সব সমস্যার সমাধান হবে না। কিন্তু সমস্যার সমাধানে যতগুলো পথ আছে, যতগুলো স্টেপ আছে, এই সবগুলোর প্রথম স্টেপ হচ্ছে একটা ইলেকশন।”
তিনি জানান,“প্রথম স্টেপ হলো ইলেকশন। কারণ ইলেকশন না করলে কি হবে? এখন জবাবদিহিতা নাই। এই সরকার, মনে করেন, একটা পোর্ট দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। একটা পোর্টে একজনকে দিবে এই কাজটা ভালো হবে কি খারাপ হবে, এজন্য সরকার কি কারও কাছে জবাবদিহি করবে? একটা দলকে আনতেছে, একটা কোম্পানিকে আনতেছে, তারা বেস্ট কোম্পানি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড! আমি যদি প্রশ্ন করি, কিভাবে বেস্ট? উত্তর দিবে? দিবে না তো।
এই কোম্পানিটা আপনি নির্বাচন করলেন, কোন পদ্ধতিতে নির্বাচন করলেন? উত্তর দিবে না। পলিটিক্যাল গভর্নমেন্ট যদি হয়, তারা চিন্তা করবে, আমি যদি উত্তর না দেই, আমি তো পাঁচ বছর পরে পাবলিকের ভোট পাব না। কিন্তু এদের তো ভোট পাওয়ার কোনো দায়িত্ব নাই, কোনো বাধ্যবাধকতাও নাই।”
মাসুদ কামাল আরো বলেন,“পুরা কাজটা করা হচ্ছে ইন্টেনশনালি, যে কেবল বিএনপি না, টোটাল পলিটিক্যাল পার্টিস গুলোর উপর সাধারণ মানুষকে বিতশ্রদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এই যে ঘটনাটা ঘটছে, সরকারের ইমেজ দিয়ে টানাটানি হচ্ছে না কিন্তু। টানাটানি হচ্ছে বিএনপির ইমেজ দিয়া। এবং বিএনপি যে কাজটা করছে একে ওকে বহিষ্কার করে, তারে বহিষ্কার করে।”
তিনি বলেন,“আমি মাঝে মাঝে একটা এক্সাম্পল বলি। ধরেন, আপনি একটা চুলার উপর একটা কড়াই আছে। কড়াইটাকে আপনি নিজে কেউ তাপ দিচ্ছে, উত্তপ্ত করাই এখন এটাকে ঠান্ডা করার জন্য আপনি হাতের মধ্যে একটু পানি নিয়া, হাতের তালুর মধ্যে আপনি ছুড়ে মারলেন কড়াইয়ে। শব্দ কিন্তু হবে, ঠান্ডা হবে কি? হবে না।"
মাসুদ কামাল বলেন,“বিএনপি এখন যে কাজটা করছে, সেটা হলো ওই যে জ্বলন্ত কড়াইয়ে পানি ছিটা দিচ্ছে। পানি ছিট করে শব্দ হয়। শব্দ হচ্ছে, বহিষ্কার হচ্ছে, কিন্তু কড়াই ঠান্ডা হচ্ছে না।”